ঢাকা ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইটনার ধনপুরে বিএনপির দোয়া ও ইফতার মাহফিল ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ইটনায় এ প্লাস ক্যাম্পেইন অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন রান্না শেখাচ্ছেন পড়শী, ঈদে দেখা যাবে অভিনয় আর গানে শিমের রাজ্য সীতাকুণ্ড ২১০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন, কৃষকের হাসি জাতিসংঘ, মহাসচিব, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল সায়ান হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম পেঁয়াজের দাম না পেয়ে লোকসানের শঙ্কায় পাবনার চাষিরা

ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে মে’য়েকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন বাবা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১
  • ২৪৭ বার

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিরেণ সরকার। নিজের এক টুকরো জমি নেই। নেই বসতবাড়ি। একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সিলভা’রের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে দুই ছে’লে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন।

ছে’লে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণপোষণ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। লেখাপড়ার প্রতি দুই সন্তানের অদম্য ইচ্ছে দেখে নিজের দুঃখ-ক’ষ্টগুলো নীরবে বয়ে বেরিয়েছেন।

নিজের সুখ-আহ্লাদের কথা চিন্তা করেননি বিরেণ সরকার। মনের নিভৃত কোণে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে থাকে একটি স্বপ্ন। একদিন প্রা’ণ খুলে হাসবেন। প্রশংসায় ভাসবেন।

অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয়! এখন তিনি বিসিএস ক্যাডারের বাবা। তার মেয়ে বিথী রানী সরকার এখন বিসিএস ক্যাডার। কি’শোরগঞ্জের নিভৃত হাওর উপজে’লা নিকলী।

নিকলী উপজে’লা সদরের বড়হাটি গ্রামের বাসিন্দা বিরেণ সরকারের এক ছে’লে ও এক মেয়ে। পরিবারের বড় সন্তান বিথি রানী সরকার। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

বিথির এমন সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছেন তার বাবা-মা। আশপাশের লোকজন ভিড় করছে তাদের বাড়িতে। বিথির সাফল্যে বাবা বিরেণ আর গৃহিণী মা ময়না সরকারের মুখে যেন হাসি লেগেই আছে। বিরেণ সরকারের বাড়ি মূলত মুন্সিগঞ্জের লৌহ’জং উপজে’লায়। বাবা আর ভাইদের সঙ্গে সিলভা’রের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেই তিনি নিকলীতে আসেন। তবে এক সময় স্ত্রী’কে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসত গড়েন হাওর উপজে’লা নিকলীতে। সেটি প্রায় ৩৮ বছর আগে।

নিকলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু বিথি রানী সরকারের। পঞ্চ’ম শ্রেণি পাস করার পর স্থানীয় শহীদ স্মৃ’তি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ২০০৮ সালে। এরপর ভর্তি হন ঢাকার তেজগাঁও হলিক্রস কলেজে। সেখান থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স শেষ করেন। বিথির একমাত্র ছোট ভাই জয় সরকার দ্বীপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া বিথি রানী সরকার বলেন, ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তাই আরও প্রস্তুতি নিয়ে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিই। পরে প্রিলিমিনারি ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এ জন্য আমি আমা’র বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের অদম্য ইচ্ছায় আমি আজ সফলতার মুখ দেখেছি। বাবা-মা ক’ষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাবার ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারবো না। আমি শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছি। বিনয় ও সততার সঙ্গে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

তিনি আরও বলেন, আশা ছিল প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়ার। ৩৯তম বিসিএসে আবারও অংশ নিব। চেষ্টা করবো প্রশাসন ক্যাডার পাওয়ার।

বিথির বাবা বিরেণ সরকার বলেন, আজ আমি কতোটা আনন্দিত সেটা কাউকে বোঝাতে পারবো না। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করি। এই আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়েও দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। আমা’র সুখ-স্বপ্ন সবই দুই সন্তানকে ঘিরে। রাতে চিন্তায় ঘুম হতোনা। ভাবতাম মেয়েকে বিয়ে দেব কিভাবে? ভগবান অমাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। এখন আর আমা’র সে চিন্তা করতে হবে না। স্বপ্ন দেখতাম মেয়ে একদিন বড় হবে। বড় চাকরি করবে। আমা’র সে স্বপ্ন আজ পূর্ণ হলো। এখন ছে’লেটির একটি ভালো চাকরি হলে ম’রেও আমি শান্তি পাব।

বিথির স্বজনরা জানান, নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের পক্ষে ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন বিথি। চাচারা অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। বিথির বাবা বিরেণ সরকার নিকলী বাজারে একটি ছোট দোকান ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে সিলভা’রের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইটনার ধনপুরে বিএনপির দোয়া ও ইফতার মাহফিল

ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে মে’য়েকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন বাবা

আপডেট টাইম : ০২:১২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিরেণ সরকার। নিজের এক টুকরো জমি নেই। নেই বসতবাড়ি। একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সিলভা’রের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে দুই ছে’লে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন।

ছে’লে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণপোষণ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। লেখাপড়ার প্রতি দুই সন্তানের অদম্য ইচ্ছে দেখে নিজের দুঃখ-ক’ষ্টগুলো নীরবে বয়ে বেরিয়েছেন।

নিজের সুখ-আহ্লাদের কথা চিন্তা করেননি বিরেণ সরকার। মনের নিভৃত কোণে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে থাকে একটি স্বপ্ন। একদিন প্রা’ণ খুলে হাসবেন। প্রশংসায় ভাসবেন।

অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয়! এখন তিনি বিসিএস ক্যাডারের বাবা। তার মেয়ে বিথী রানী সরকার এখন বিসিএস ক্যাডার। কি’শোরগঞ্জের নিভৃত হাওর উপজে’লা নিকলী।

নিকলী উপজে’লা সদরের বড়হাটি গ্রামের বাসিন্দা বিরেণ সরকারের এক ছে’লে ও এক মেয়ে। পরিবারের বড় সন্তান বিথি রানী সরকার। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

বিথির এমন সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছেন তার বাবা-মা। আশপাশের লোকজন ভিড় করছে তাদের বাড়িতে। বিথির সাফল্যে বাবা বিরেণ আর গৃহিণী মা ময়না সরকারের মুখে যেন হাসি লেগেই আছে। বিরেণ সরকারের বাড়ি মূলত মুন্সিগঞ্জের লৌহ’জং উপজে’লায়। বাবা আর ভাইদের সঙ্গে সিলভা’রের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেই তিনি নিকলীতে আসেন। তবে এক সময় স্ত্রী’কে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসত গড়েন হাওর উপজে’লা নিকলীতে। সেটি প্রায় ৩৮ বছর আগে।

নিকলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু বিথি রানী সরকারের। পঞ্চ’ম শ্রেণি পাস করার পর স্থানীয় শহীদ স্মৃ’তি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ২০০৮ সালে। এরপর ভর্তি হন ঢাকার তেজগাঁও হলিক্রস কলেজে। সেখান থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স শেষ করেন। বিথির একমাত্র ছোট ভাই জয় সরকার দ্বীপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া বিথি রানী সরকার বলেন, ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তাই আরও প্রস্তুতি নিয়ে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিই। পরে প্রিলিমিনারি ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এ জন্য আমি আমা’র বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের অদম্য ইচ্ছায় আমি আজ সফলতার মুখ দেখেছি। বাবা-মা ক’ষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাবার ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারবো না। আমি শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছি। বিনয় ও সততার সঙ্গে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

তিনি আরও বলেন, আশা ছিল প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়ার। ৩৯তম বিসিএসে আবারও অংশ নিব। চেষ্টা করবো প্রশাসন ক্যাডার পাওয়ার।

বিথির বাবা বিরেণ সরকার বলেন, আজ আমি কতোটা আনন্দিত সেটা কাউকে বোঝাতে পারবো না। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করি। এই আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়েও দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। আমা’র সুখ-স্বপ্ন সবই দুই সন্তানকে ঘিরে। রাতে চিন্তায় ঘুম হতোনা। ভাবতাম মেয়েকে বিয়ে দেব কিভাবে? ভগবান অমাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। এখন আর আমা’র সে চিন্তা করতে হবে না। স্বপ্ন দেখতাম মেয়ে একদিন বড় হবে। বড় চাকরি করবে। আমা’র সে স্বপ্ন আজ পূর্ণ হলো। এখন ছে’লেটির একটি ভালো চাকরি হলে ম’রেও আমি শান্তি পাব।

বিথির স্বজনরা জানান, নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের পক্ষে ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন বিথি। চাচারা অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। বিথির বাবা বিরেণ সরকার নিকলী বাজারে একটি ছোট দোকান ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে সিলভা’রের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন।