ব্লাড ক্যানসার কেন হয়? জেনে নিন উপসর্গ ও লক্ষণ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্লাড ক্যানসার লোহিত রক্তকণিকা থেকে হয়। এই রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে। এটা সাধারণত শিশুদের বেশি হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও প্রখ্যাত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ব্লাড ক্যানসার কেন হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নাই। তবে কিছু কিছু বিষয় ব্লাড ক্যানসারের পরিমাণটা বাড়িয়ে দেয়। যেমন- রেডিয়েশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, কীটনাশক বা পেস্টিসাইড, ভেজাল খাবার, কেমোথেরাপি ড্রাগস ও কিছু জেনেটিক অসুখ দায়ী থাকতে পারে।

উপরোক্ত যে কোনো কারণে অস্থিমজ্জার ভেতরের স্টেমসেল (মাদার সেল)-এর মিউটেশন বা অন্য কোনো পরিবর্তন হলে ক্যানসার সেল (ব্লাস্ট) বা অপরিপক্ব কোষ তৈরি হয়, যা অস্থিমজ্জার ভেতরে অতিদ্রুত বৃদ্ধি হয়। যে কোনো বয়সে, যে কোনো জেন্ডারেরই লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা হতে পারে।

নানাভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের জিনের মধ্যে বা ক্রোমোজোমের ভেতরে মিউটেশন হতে থাকে। এ মিউটেশন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে এবং এটা যদি স্থায়ী হয়ে যায়, তাহলে শরীরের মধ্যে যে অনকজিন নামের একটা জিন রয়েছে, সেটা অ্যাক্টিভেটেড হলে, তখন যে কোনো কোষের ব্লাড ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে পারে। যেমন- আমরা বলতে পারি ডাউন সিনড্রোম যাদের হয়, তাদের এ ব্লাড ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ব্লাড ক্যানসারের উপসর্গ ও লক্ষণ

১. রক্তস্বল্পতার জন্য দুর্বলতা, খাবারের অরুচি, বুক ধড়ফড়, পায়ে পানি জমে যাওয়া, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

২. দীর্ঘদিনের জ্বর বা ঘনঘন জ্বর

৩. অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ

৪. গ্লান্ড ফুলে যাওয়া, লিভার-প্লীহা বড় হওয়া

৫. কারো কারো ওজন কমতে পারে

৬. হাড়ে ব্যথাও হতে পারে।

এছাড়া স্কিন লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, কাজের মধ্যে অনীহা এবং ওজন কমতে পারে।

এসব উপসর্গ যদি থাকে তখন হয়তো ধারণা করা যেতে পারে তার ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। শুধু যে ব্লাড ক্যানসারের রোগীদের এই উপসর্গ দেখা দেবে এমনটা নয়। অন্যান্য রোগেও দেখা যায় এ উপসর্গ।

এজন্য এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে উচিত হবে, প্রথমে নিকটস্থ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। তখন তিনি সাধারণ কিছু পরীক্ষা করে বুঝবেন রোগীর কী হয়েছে। তারপর ওই ডাক্তার রোগীকে যে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন, সেখানে যেতে হবে।

বর্তমানে রোগ নির্ণয়ের জন্য বাংলাদেশে ভালো ভালো সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল আছে, যেখানে ভালো লেভেলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব ব্লাড ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য। আমরা সাধারণভাবে যে পরীক্ষাটা করেই থাকি, সেটা হল ব্লাড কাউন্ট। এর পরবর্তীতে ‘বোনম্যারো এক্সামিনেশন’ করে আমরা বুঝতে পারি ব্লাড ক্যানসার হয়েছে কিনা। এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আমরা যখন সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারি, এটা কোন ধরনের ব্লাড ক্যানসার, তারপরে আমরা এর চিকিৎসা শুরু করি।

সাধারণত এর আগে আমরা যে চিকিৎসা করে থাকি, সেটা হলো একটু এন্টিবায়োটিক দেওয়া, ব্লাড কমে গেলে তা দেওয়া এবং প্লাটিলেট কমে গেলে প্লাটিলেট দেওয়া।

বাংলাদেশে ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসার উন্নতি হয়েছে। এখন সরকারি এবং প্রাইভেট লেভেলের চিকিৎসা হচ্ছে। অনেক রোগী উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের যে বিদেশ যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশে ক্যানসারের চিকিৎসা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। কারণ ক্যানসারের রোগীদের লম্বা পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। এখানে বেড সীমিত, চিকিৎসক সীমিত এবং চিকিৎসার সুবিধাগুলো সীমিত। আবার সরকারিভাবেও এই বিশাল সংখ্যাক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে বিকল্প পথ হিসেবে আমাদের প্রাইভেট যে হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, সেখানে কম খরচে এ চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

এখানে ওষুধের ওপর আমরা কর কমাতে পারি। আমরা জীবন বিমা চালু করতে পারি, যেটা করলে মানুষ চিকিৎসা সেবাগুলো পেতে পারে। কারণ আমরা চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা সঞ্চয় করি না। যদি জীবন বিমা বা চিকিৎসা বিমার সুযোগ থাকতো, তাহলে রোগীরা এই সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারতেন।

আমাদের দেশে একটা ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসা যদি করাতে হয়, তাহলে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। একটা অটোলকাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে গেলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। আর যদি এলোজেনিক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করি তাহলে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এটা পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে কম। কিন্তু আমরা অনেক সময় এই সুযোগ নিতে পারি না বা অনেক সময় জানি না এটা কোথায় কী হচ্ছে। অথবা নানা রকম দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে চলে যায়। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ হতে হবে।

এখানে সরকারের উচিৎ এটাকে আরও উন্নত করা। ক্যানসারের চিকিৎসাটা নির্ভর করে কোন ধরনের ক্যানসার তার ওপর। মনে করেন, আমি যদি ব্লাড ক্যানসারের কথা বলি, সেটাতে লিউকেমিয়া এক ধরনের ক্যানসার। এটা যদি ধরা পড়ে এবং স্টেজ টু-তে আসে, তাহলে চিকিৎসায় এর খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। ৮০ শতাংশ নিরাময় যোগ্য। আবার যদি লেট স্টেজে আসে, তখন নিরাময় হওয়া সম্ভাবনা কমতে থাকে।

আমাদের কাছে অনেক রোগী অনেক দেরিতে আসেন, যখন চিকিৎসা করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। কোন কোন ব্লাড ক্যানসারতো ৯০ ভাগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বাচ্চাদের যে চিকিৎসাটা আছে এটা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অতএব আমরা যেটা মনে করতাম, ব্লাড ক্যানসার মানে মৃত্যু, সেটা নয়। ‘ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া’ এই ক্যানসারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা আমাদের দেশে রয়েছে। শুধু লম্বা সময় ধরে ওষুধ খেতে হয়, এবং এটাও ভালো হওয়া সম্ভব। এছাড়াও ‘ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া’- এটাতে প্রাথমিক পর্যয়ে কোনো চিকিৎসা লাগে না। লম্বা সময় ধরে আমরা শুধু পর্যবেক্ষণ করি এবং স্টেজ থ্রিতে গিয়ে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি। বাংলাদেশে এখন ক্যানসারের অনেক ভালো মানের চিকিৎসা আছে। ক্যামোথেরাপি ছাড়াও আজকাল চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এই ধরনের ওষুধও বাংলাদেশে রয়েছে।

আমি মনে করি সরকারের সদিচ্ছা এবং এদিকে সুনজর দেয় তাহলে আমাদের দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা আরও বিস্তার লাভ করবে এবং রোগীরা সুফল লাভ করবে।

সূত্র: ডক্টর টিভি

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর