সাধারণভাবে আমরা শিলাবৃষ্টি হতে দেখি বৈশাখে। কিন্তু এবার দেখা গেল ভরা ফাল্গুনে! বুধবার দুপুরে ঢাকা এবং সাতক্ষীরায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এই শিলাবৃষ্টির শিলার আকারও বেশ বড়। কিন্তু কেন?
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ দিয়েছেন এর জবাব। তিনি জানিয়েছেন,‘ কালবৈশাখীর প্রচণ্ড তপ্ত হাওয়াই শিলাবৃষ্টির প্রধান কারণ। এরসঙ্গে আরও কিছু প্রপঞ্চ যুক্ত হলেই দেখা মেলা শিলাবৃষ্টির। শিলাবৃষ্টি আকাশ থেকে ছুটে আসা বরফ কুচি বা বরফ খণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়।’
তিনি জানান,‘ এবার ফাল্গুনেই মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী এলো। আর তাই শিলাবৃষ্টিরও দেখা মিললো। বুধবারের ঝড় এই মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়।’
তাহলে কালবৈশাখী ঝড় হলেই কি শিলাবৃষ্টি হবে? তা কিন্তু নয়। শিলাবৃষ্টির প্রধান শর্ত প্রচণ্ড গরম হাওয়া।
সেভাবে সৃষ্টি হয় শিলাবৃষ্টি:
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, কোনও স্থানের আবহাওয়া হঠাৎ খুব উত্তপ্ত হলে সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে দ্রুত ওপরের দিকে উঠে যায়। একে বলা হয় বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপ। ঊর্ধ্বাকাশের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে এসে সেই বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে ঝোড়ো মেঘে পরিণত হয় এবং শুরু হয় ঝড়।
একপর্যায়ে ঊর্ধ্বাকাশে বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথমে হালকা তুষার ও পরে ঘন পানির বিন্দুতে পরিণত হয়, যা বৃষ্টির ধারায় নেমে আসে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো পড়ার সময় কখনও কখনও মাঝপথে বাতাসের উর্ধ্বমুখী চাপের মধ্যে পড়ে। ফলে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো নিচে নামতে নামতে তার কিছু অংশ আবার ওপরে উঠতে শুরু করে এবং আরও ঠাণ্ডা হতে থাকে।
ঘনীভূত পানির ফোঁটাগুলো আরও ভারী হয়ে আবার নিচে নামতে থাকে এবং আবার গরম বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপে পড়ে তার কিছু অংশ আবার ওপরে উঠতে থাকে। এ রকম কয়েকবার ওঠা-নামা করতে করতে পানির ফোঁটাগুলোর কিছু অংশ ছোট ছোট বরফখণ্ডে পরিণত হয়। এগুলো বেশি ভারী বলে আর উপরে উঠতে পারে না। বৃষ্টির ধারার সঙ্গে নিচে নেমে আসে। এটাই শিলাবৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এখন পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর সঙ্গে যোগ হয়েছে মৃদু লু হাওয়া। ফলাফল বুধবার দুপুরের কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি।
সাধারণত চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুতে দক্ষিণ-পশ্চিমা মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে বিকেলের দিকে যে স্বল্পস্থায়ী প্রবল ঝড় হয়, তা কালবৈশাখী নামে পরিচিত। কিন্তু এটা যে ওই সময়েই হবে তা কিন্তু নয়। যেমন এবার দেখা গেল আগাম কালবৈশাখী।
বজলুর রশিদ আরও জানান,‘ শিলাবৃষ্টি নিয়ে কোন কুসংস্কারের জায়গা নেই। এটা গজব বা সুসংবাদ কোনটাই নয়। তবে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আমের মুকুল।
ঢাকায় বুধবারের শিলাবৃষ্টিতে নগরবাসীর মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে শিলাবৃষ্টি বন্দনা। তবে শিলাবৃষ্টির সময় বাইরে না থাকাই ভাল। বরফ খণ্ডের আকার বড় হলে তা দুর্ঘটনাও ডেকে আনতে পারে।