অনেক জায়গা থেকেই মনোনয়নপত্র জমায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ আসছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ অভিযোগ করতে না পারে সেজন্য আমরা একাধিক স্থানে মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কেই ভাবছি নিরাপদ।
সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ এ কথা বলেন।
শাহ নেওয়াজ বলেন, কিছু কিছু জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা এখন নতুন করে চিন্তা করছি, একাধিক জায়গায় মনোনয়নপত্র দাখিল করা যায় কি-না। এ লক্ষ্যে কাজ করছি। আশাকরি আজ-কালের মধ্যেই আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো। এতে প্রার্থীরা যেখানে স্বস্তিবোধ করবেন সেখানেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যেহেতু শেষ। তাই এ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এটা আর সম্ভব নয়। তবে পরবর্তী পাঁচটি ধাপে তা করা যাবে। সেগুলোতে মানুষ এ অভিযোগ যেন না করতে পারে তা বন্ধ করতেই একাধিক জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ব্যবস্থা করার চিন্তা করছি। শুধু ইউপি নয়, পরবর্তী সব নির্বাচনের জন্য একাধিক জায়গার বিষয়টি চিন্তা করছি। এক্ষেত্রে আমরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককেই চিন্তা করবো। কেননা এ দু’টি জায়গা নিরাপদ।
বিএনপির অভিযোগ তবে আমলে নিচ্ছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ বলেন, কোনো অভিযোগের যেন সুযোগ না থাকে সেজন্যই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। কারও অভিযোগ আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।
বিএনপির রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ইসিতে ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম, বিধি লঙ্ঘন ও তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে।
শাহ নেওয়াজ বলেন, ইউপি নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন। পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। তাই আমরা মনে করি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। এরপরও আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলেছি। কয়েকটি ইউপিতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে আরও বাড়িয়ে দেবো। এসব চিন্তা রয়েছে। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
বিএনপি নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছে। আপনাদের পর্যবেক্ষণ কী বলে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরাদের পর্যবেক্ষকরা এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া শুরু করেনি বা অভিযোগ দেয়নি। তবে কিছু অভিযোগ ঢালাওভাবে এসেছে। সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু কিছু তদন্ত করেছি। যেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন সেখানে নেবো। যেহেতু আমাদের দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ভিত্তিক, সেখানের কোনো অভিযোগ পায়নি। এছাড়া বাইরে যা ঘটবে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বলেছি।
শাহ নেওয়াজ বলেন, নির্বাচনে সবাই যেন সমান সুযোগ পায়, আমরা এটাই চাইবো। অসম প্রচারণার সুযোগ থাকবে এটা মনে করি না।
পুলিশের নিয়ন্ত্রণে না রেখে ইসি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ইউপি নির্বাচন অনেক বড় নির্বাচন। সবার সহযোগিতা নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। ইসির এতো লোকবল নেই। অনাদিকাল কাল থেকেই সবার সহায়তা নিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। এবারও আমি আশা করবো এবং নির্দেশও থাকবে। আগামী ৩ মার্চ আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকেও একথাটাই গুরুত্ব দেব, যেন সবাই সবার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করেন। সবাইকে নিয়েই নির্বাচনটা সুষ্ঠু করতে হবে। এ ব্যাপারে কাউকে আমরা ছাড় দেবো না। কোথাও কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না, সে যে কোনো সংস্থা থেকেই হোক না কেন। আমরা খুব শক্তভাবে দেখবো। ভোটগ্রহণ ও ভোটরক্ষাকারী সবার প্রতিই কঠোর নির্দেশনা থাকবে।
আগামী ২২ মার্চ দেশের ৭৩৮ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আরও ছয় দফায় প্রায় চার হাজার ইউপির ভোটগ্রহণ করবে ইসি।