সবজি চাষে স্বাবলম্বী শিক্ষার্থী রাশেদুল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সকল স্কুল কলেজ বন্ধ রয়েছে। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে খেলাধুলা, আড্ডা কিংবা হাতে থাকা স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। আবার, অনেক শিক্ষার্থীরাই নিজেদের সময় নষ্ট না করে পরিবারকে সাহায্য করতে বিভিন্ন কল-কারখানায় চাকরি করছেন। উপার্জন করে মা-বাবার কষ্ট কিছুটা হলেও লাগবের চেষ্টা করছেন। এমনই একজন হলেন ধামরাইয়ের রাশেদুল ইসলাম। করোনার এ সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় কৃষি কাজ করছেন রাশেদুল ইসলাম।

রাশেদুল ইসলাম মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ডিগ্রীর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। সে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কাওয়াখোলা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে।

দেখা যায়, রাশেদুল ইসলাম ভোরে উঠে জমি থেকে সবজি তোলে ভ্যান বোঝাই করে তা বিক্রি করছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। সবজির বাজার উঠানামা করে প্রতিনিয়তই। তাই সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয় উদ্যোক্তা রাশেদুলকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাশেদুল প্রথমে তার পিতার কৃষি কাজেই সময় দিয়েছেন। পরে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে করলা, শসা, বেগুন, ধুন্দলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করছেন এই শিক্ষার্থী। এখান থেকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন পাইকারি ও গ্রামের খুচরা বাজারে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকার উপরে সবজি বিক্রি হয়েছে তার।

করোনা মহামারিতে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে ‘সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নিয়ে কৃষিকাজ করছেন রাশেদুল ইসলাম নামের এই স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এতে একদিকে পরিবারের চাহিদা মিটছে অন্যদিকে উৎপন্ন সবজি বিক্রি করে মিলছে আর্থিক সচ্ছলতাও। করোনায় বেকার হয়ে, মোবাইলের পিছনে অন্য দশ জন শিক্ষার্থীর মতো সময় না দিয়ে নিজেই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এখন সে স্বাবলম্বী।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে কলেজ বন্ধ হয়ে যায় । দু-তিন মাস অপেক্ষা করার পর যখন বুঝতে পারি কলেজ খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। তখন কোনো একটা উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করি। ঠিক তখন পিতার কৃষি কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি নিজেই বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এই কাজে আমার মা-বাবা, বড় বোন সময় দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করছেন। রোজার এই সময়ে সবজি বাজার তুলনামূলক ভালো থাকায় এখান থেকে সাফল্য পেয়েছি অনেকটাই এবং আরো বড় সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি।

রোজার সময় সবজির বাজার বেশি। বর্তমানে পাইকারি বাজারে, করলা প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৩০-৪০ টাকা ও ঢেঁড়স ৩০-৩৫ টাকায় করে বিক্রি করছি। আমি চাইলেই অবসর সময়টা এমনি এমনি কাটাতে পারতাম। কিন্তু তা না করে সময়কে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করছি। পরিবারের সচ্ছলতাও আসছে।সবজির চাহিদাও মিটছে।

রাশেদুলের বাবা ষাটোর্ধ বয়সী আব্দুল মালেক বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের জন্যে পোলার কলেজ বন্ধ হইয়া গেছে। আগে নিজে একাই ক্ষ্যাত-খামার করছি। অনেক দিন ধইরা আমার শরীলডাও বেশি একটা ভালো না। অ্যারপর থাইকা পোলাডাই কামকাজে সাহায্য করতো। পরে উই একলাই পুরা ক্ষ্যাত করছে। প্রায় ২ বিঘার বেশি জমিতে ধুন্দল, করলা, বেগুন, মরিচ,শসা বুনছে। ভালো দামে হেই গুলা আবার বেঁচছেও। এলাকার অন্য পোলাপানের মতো বাইরে ঘোরাফেরা না কইরা সংসার সামলাইছে রাশেদুল। এইডাই আমার জন্য অনেক।’

ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসার আরিফুল হাসান বলেন, ‘এটাতো খুব ইন্সপাইরিং একটা কাজ। একদিকে তার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা সে পূরণ করেছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সে ও তার পরিবার স্বচ্ছল হয়েছে। আরো ১০ জন রাশেদুলের মতো উৎসাহিত হবে, সেই সাথে স্বাবলম্বীও হবে। শিক্ষিত ছেলেরা কৃষির সাথে সম্পৃক্ত হলে কৃষি আধুনিক হবে। আধুনিক কৃষি কাজ মূলত শিক্ষিত লোকজন কৃষির সাথে জড়িত হওয়া। তারা নতুন প্রযুক্তি ও জাত নিতে পারবে। নতুন প্রযুক্তি ও জাত কিন্তু মান্ধাতা আমলের কৃষকরা নিতে চায় না। মূলত তারা ঝুঁকি নিতে চায় না।এ ধরণের উদ্যোগ যে নিবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সকল ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশ জার্নাল

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর