কোরআন তেলাওয়াত করেন খালি চোখে ১৩৫ বছরের তৈয়ব আলী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যেখানে থাকলে খাঁটি সিলেটি ভা’ষা’য় কথা বলা যাবে সেখানেই জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে চান বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ দাবি করা সিলেটের তৈ’য়’ব আলী। তিনি বলেন, আমি কোথাও গেলে আমার সঙ্গে দুইজন লাগে। একা একা হাঁটাচলা করার সময় শেষ। তাই জী’ব’নে’র শেষ সময়টুকু শান্তিতে একটা জায়গায় থাকতে চাই। সিলেটের কুশিয়ারা নদী আর হাকালুকি হা’ও’রে’র পাড় ঘেঁষা উপজেলা ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম যুধিষ্ঠিপুর গ্রামের বাসিন্দা তৈয়ব আলী। নি’জে’র ও পরিবারের হিসেব অনুযায়ী তার বয়স ১৩৫ বছর। সরেজমিনে দেখা যায়, ১৩৫ বছরের দীর্ঘদেহী এই মা’নু’ষ’টি একা একা হাঁটাচলা করছেন। শৈশব থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অনেক স্মৃতি তার কাছে অমলিন। এমনকি দ্বিতীয় বি’শ্ব’যু’দ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৪৭’র ভারত বিভক্তি ও ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ সবই মনে আছে তার। যদিও স’ব’কি’ছু পুরোপুরি বলতে পারছেন না।

তবে সব কিছুই যে চোখের সামনে হয়েছে তার স্পষ্ট ছাপ ছিল তৈয়র আ’লী’র চোখেমুখে। তৈয়র আলী বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খবর শুনেছি। কিন্তু এই এলাকায় বিশ্বযুদ্ধের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই বা’ই’রে কি হয়েছে কিছু জানতে পারিনি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছে থাকলেও সাহস করে যেতে পারিনি। প’রি’বা’রে’র প্রতি খুব টান থাকায় সংসার ছেড়ে কোথাও যাইনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশভাগের কিছু স্মৃতি থাকলেও তাৎক্ষণিক মনে করতে পা’রে’ন’নি তিনি। বারবার চেষ্ঠা করেও বলতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, পরিবারের প্রতি গভীর টান থা’কা’য় ব্রিটিশ আমলে চতুর্থমান (চতুর্থ শ্রেণি) পড়া শেষ করে বোনের বাড়িতে থেকে কুলাউড়ার ন’বী’ন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্ত হয়ে আর পড়াশুনা করেননি। পরিবারকে ছেড়ে সেখানে একা থাকতে না পেরে পড়াশুনা ছেড়ে চলে আ’সে’ন বাড়িতে। বাড়িতে এসে শুরু করেন দলিল লেখার কাজ। বাবা মুনশি আমজদ উল্লাহর কাছ থেকে দ’লি’ল লেখার হাতেখড়ি তৈয়ব আলীর। এরপর নিজেই শুরু করেন মুহরির কাজ। তখনকার সময়ের এই এলাকার বে’শি’র’ভা’গ জায়গা জমির দলিল লিখেন তৈয়ব আলী। যার প্রমাণ এখনো মিলবে। তৈয়ব আলী এখনো প’ত্রি’কা পড়তে পারেন চশমা ছাড়াই। হাতের লেখাও প্রশংসনীয়। তাছাড়া নিজের কথার

নড়চড় হলে অ’নে’ক’টা রাগান্বিত হতে দেখা যায় তাকে। ১৯৯৭ সহধর্মিণী কুলসুমা খাতুন মারা যাওয়ার পর ২২ বছর ধরে নিজের প্রয়োজনীয় কা’জ’গু’লো নিজের মত করতেই পছন্দ করেন তিনি। যদিও নাতি-নাতনিসহ ৬৯ সদস্যের পরিবারে তার কোনো কি’ছু’র কমতি নেই তবুও তিনি নিজের কাজ নিজে করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তিনি। এদিকে তৈয়ব আলী নিজে তার ব’য়’স ১৩৫ বছর দাবি করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ১০৭ বছর। পরিচয়পত্রে তার জন্ম ১৯১২ সালে। এ’টা’কে ভুল বলছেন

তৈয়ব আলী। তবে তার লেখা কিছু দলিল ঘেটে দেখা যায় তার ব’য়’স অন্তত ১৩০ বছর। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ থেকে ১০৫ বছর আগে ফেঞ্চুগঞ্জের মোমিনছড়া চা-বাগান প্রতিষ্ঠার সময় বাগান ক’র্তৃ’প’ক্ষ’কে ছয় টাকায় ভূমি লিজ দিয়েছিলেন তৈয়ব আলী।তখন তার বয়স ছিল ২৩/২৪ বছর। সে হিসেবে ব’র্ত’মা’নে তার বয়স ১৩০ বছর। তবে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রকৃত বয়স বেরিয়ে আসবে বলে মনে ক’র’ছে’ন তার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে তৈয়ব আলীকে দেখতে শুক্রবার তার বাড়িতে যান

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী ক’র্ম’ক’র্তা আয়েশা হক ও ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান। উপজেলা নির্বাহী ক’র্ম’ক’র্তা আয়েশা হক বলেন, আমরা তৈয়ব আলীর পরিবারকে বলেছি কাগজপত্র ও তার লেখা দলিল সংগ্রহ করতে। তা’ছা’ড়া ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে যদি তার বয়স ১৩৫ বা তার বেশি হয় তাহলে আমরা সরকারিভাবে তার স্বী’কৃ’তি’র জন্য সহযোগিতা করব। তবে তার পরিবার সহযোগিতা করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জা’না’ন তিনি। তৈয়ব

আলীর নাতি ও ঘিলাছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিব মোর্শেদ রাজু ব’লে’ন, দাদা (তৈয়ব আলী) নিজে দাবি করছেন তার বয়স ১৩৫। তবে ১৩৫ না হলেও ১৩০ এর কমবেশি হবে। তার লেখা অ’নে’ক দলিল ঘেটে আমি কিছুটা নিশ্চিত হয়েছি ১৮৯০ সালের দিকেই তার জন্ম হয়েছে। তিনি ব’লে’ন, প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে আমরা ডিএনএ টেস্ট করে রিপোর্ট দেব। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক হিসেবে তার স্বী’কৃ’তি পেলে অনেক ভালো লাগবে। প্রতিবেশী আকিব আলী বলেন, তৈয়ব আলী এই

অঞ্চলের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ। তার ব’য়’সী আর কেউ বেঁচে নেই। শেষ বয়সে আমরা তার এই স্বীকৃতি চাই। এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় সোদিমেদজো নামে এক ব্য’ক্তি’র বয়স ছিল ১৪৬ বছর। তিনি মারা যাওয়ার পর বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন বাংলাদেশের পা’ব’না জেলার ফরিদপুর উপজেলার বিএল বাড়ির আহসান উদ্দিন শাহ্। গত বছর তিনি মারা যান। স্থা’নী’য় এলাকাবাসীর দাবি- ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হলে তৈয়ব আলী শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ব’য়’স্ক ব্যক্তি হবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর