ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাটকা পাচারের রমরমা ব্যবসা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৬:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৪৪০ বার

রীয়তপুরের বিভিন্ন রুটকে ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ইলিশ বা জাটকা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে জাটকা পাচারকারীরা। এই রুটগুলি ব্যবহার করে রাতের আঁধারে পাচার করা হচ্ছে হাজার হাজার মণ জাটকা।

স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শরীয়তপুর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা ও মেঘনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুর ও বরিশাল থেকে আসা এসব জাটকা নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাটবাজারে। দু-একটি ট্রাক আটক ছাড়া প্রতিরাতেই মহাসড়কে টহল পুলিশের পাহাড়া থাকা সত্ত্বেও পাচারকারীরা অনায়াসে জাটকা পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব জাটকা ইলিশ মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই ৮ মাস জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রির ওপর নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। অথচ গত প্রায় দুই মাস যাবৎ প্রতিদিন গোসাইরহাটের পট্টি লঞ্চঘাট, কোদালপুর ৬ নং লঞ্চঘাট, থান্ডার বাজার ঘাট ও জালালপুর ঘাট এবং নড়িয়ার সুরেশ্বরঘাট, সাধুরবাজার লঞ্চঘাট এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করা হচ্ছে হাজার হাজার মণ নিষিদ্ধ জাটকা। ট্রলারে করে বরিশাল ও চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এসব জাটকা শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্চের ১০ থেকে ১৫টি পয়েন্ট ব্যবহার করে নসিমন বা ট্রাকে করে পৌঁছে দেয়া হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গত দুইদিন গভীর রাতে গোসাইরহাট ও নড়িয়ার কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গোসাইরহাটের পট্টি লঞ্চঘাট এলাকার দোকানের শাটার বন্ধ, শুনশান নীরবতা। এই সুযোগে পাচারকারী চক্রের এক সদস্য তার দল নিয়ে মাছের ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করছে। ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তেই ট্রলার থেকে মাছ নামাতে ব্যস্ত হয়ে পরছে জাটকা পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। একই চিত্র অন্যঘাটগুলিতেও। গোসাইরহাট উপজেলায় রাতে যাওয়ার পথে ব্যাপক পুলিশি টহল লক্ষ করা গেছে। কিন্তু এই পথেই জাটকা বোঝাই দুটি ট্রাকের গতিরোধ করলে তারা জানায় টহল পুলিশ আমাদের থামালে আমরা তাদের টাকা দিয়ে নিয়মিত ব্যবসা চালিয়ে যাই।

গোসাইরহাট জাটকা পাচারকারী চক্রের মুল হোতাদের একজন আক্তার হোসেন সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গতিরোধ করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।

জাটকা বোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে পাচারকারী চক্রের সদস্য শাহীনের সাথে আলাপ করলে সে জানায়, ট্রাকের এই মাছগুলি বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে আসা জাটকা মাছ। এসব মাছ চাঁদপুর ও বরিশালের পাইকারদের কাছ থেকে শরীয়তপুরের পাইকারা কিনে আনে আর আমরা দিনমজুর তাদের কাজ করি।

পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্য মো. জসিম বলেন, সব কিছু হচ্ছে তাদের ম্যানেজ করেই।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুস সালাম বলেন, রাতের আঁধারে জাটকা পাচারের বিষয়ে তার কাছে তথ্য আছে। তিনি পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, পুলিশের সহায়তা পেলে রাতের আঁধারে জাটকা পাচার রোধ করা সম্ভব।

শরীয়তপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ জানান, জাটকা পাচার রোধে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। শিগগিরই বরিশাল এবং চাঁদপুরের পুলিশের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে অভিযান পরিচালনার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাটকা পাচারের রমরমা ব্যবসা

আপডেট টাইম : ১১:৪৬:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

রীয়তপুরের বিভিন্ন রুটকে ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ইলিশ বা জাটকা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে জাটকা পাচারকারীরা। এই রুটগুলি ব্যবহার করে রাতের আঁধারে পাচার করা হচ্ছে হাজার হাজার মণ জাটকা।

স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শরীয়তপুর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা ও মেঘনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুর ও বরিশাল থেকে আসা এসব জাটকা নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাটবাজারে। দু-একটি ট্রাক আটক ছাড়া প্রতিরাতেই মহাসড়কে টহল পুলিশের পাহাড়া থাকা সত্ত্বেও পাচারকারীরা অনায়াসে জাটকা পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব জাটকা ইলিশ মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই ৮ মাস জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রির ওপর নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। অথচ গত প্রায় দুই মাস যাবৎ প্রতিদিন গোসাইরহাটের পট্টি লঞ্চঘাট, কোদালপুর ৬ নং লঞ্চঘাট, থান্ডার বাজার ঘাট ও জালালপুর ঘাট এবং নড়িয়ার সুরেশ্বরঘাট, সাধুরবাজার লঞ্চঘাট এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করা হচ্ছে হাজার হাজার মণ নিষিদ্ধ জাটকা। ট্রলারে করে বরিশাল ও চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এসব জাটকা শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্চের ১০ থেকে ১৫টি পয়েন্ট ব্যবহার করে নসিমন বা ট্রাকে করে পৌঁছে দেয়া হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গত দুইদিন গভীর রাতে গোসাইরহাট ও নড়িয়ার কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গোসাইরহাটের পট্টি লঞ্চঘাট এলাকার দোকানের শাটার বন্ধ, শুনশান নীরবতা। এই সুযোগে পাচারকারী চক্রের এক সদস্য তার দল নিয়ে মাছের ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করছে। ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তেই ট্রলার থেকে মাছ নামাতে ব্যস্ত হয়ে পরছে জাটকা পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। একই চিত্র অন্যঘাটগুলিতেও। গোসাইরহাট উপজেলায় রাতে যাওয়ার পথে ব্যাপক পুলিশি টহল লক্ষ করা গেছে। কিন্তু এই পথেই জাটকা বোঝাই দুটি ট্রাকের গতিরোধ করলে তারা জানায় টহল পুলিশ আমাদের থামালে আমরা তাদের টাকা দিয়ে নিয়মিত ব্যবসা চালিয়ে যাই।

গোসাইরহাট জাটকা পাচারকারী চক্রের মুল হোতাদের একজন আক্তার হোসেন সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গতিরোধ করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।

জাটকা বোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে পাচারকারী চক্রের সদস্য শাহীনের সাথে আলাপ করলে সে জানায়, ট্রাকের এই মাছগুলি বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে আসা জাটকা মাছ। এসব মাছ চাঁদপুর ও বরিশালের পাইকারদের কাছ থেকে শরীয়তপুরের পাইকারা কিনে আনে আর আমরা দিনমজুর তাদের কাজ করি।

পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্য মো. জসিম বলেন, সব কিছু হচ্ছে তাদের ম্যানেজ করেই।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুস সালাম বলেন, রাতের আঁধারে জাটকা পাচারের বিষয়ে তার কাছে তথ্য আছে। তিনি পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, পুলিশের সহায়তা পেলে রাতের আঁধারে জাটকা পাচার রোধ করা সম্ভব।

শরীয়তপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ জানান, জাটকা পাচার রোধে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। শিগগিরই বরিশাল এবং চাঁদপুরের পুলিশের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে অভিযান পরিচালনার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তা।