হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহামারী করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে দেশের হাওরাঞ্চলের ৬২ শতাংশ ধান কেটে কৃষকরা ইতিমধ্যে ঘরে তুলেছেন ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতিমধ্যে হাওরের প্রায় ৬২ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। পাকা অবস্থায় (কাটা বাকি) রয়েছে ১৪ শতাংশ এবং এখনো ২৪ শতাংশ বোরো ধান পাকেনি।
সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ আর নেত্রকোণা নিয়ে বিস্তৃত এই ছায়ার হাওর। তিনটি আন্তঃজেলার সমন্বয়ে এই হাওরের বেশিরভাগ জমিই সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় অবস্থিত। ইতোমধ্যে হাওরটির ধানকাটা প্রায় শেষ হয়েছে। এখন ধান শুকানো আর খড় সংগ্রহ করতেই হাওরের খলায় দেখা যাচ্ছে কৃষকদের। খড়গুলো হাওরের জাঙ্গালে, সড়কের পাশে গম্বুজাকৃতি করে আপাতত রেখেছেন তাঁরা, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘খড়ের লাছি’ বলা হয়। ধান গোলায় তোলার কাজ শেষ হলেই খড় আরো ভালোভাবে শুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে লাছি করে রাখবেন কৃষক।
কৃষি বিভাগের হিসেবে এই হাওরে ১১৫ কোটি টাকার ধান উৎপাদিত হওয়ার কথা। তবে মওসুমের বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং পরাগায়ণ মুহূর্তে হিটশকে হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জমি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফলন কিছুটা কমেছে। শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় ফসল তুলতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে কৃষকরা।
সরেজমিনে গত শুক্রবার ছায়ার হাওরে দেখা যায়, হাওরটির ধান কাটা প্রায় শেষ। তাই ক্ষেতগুলো ন্যাড়া মাথায় পড়ে আছে। কোথাও কোথাও গবাদিপশু ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ধানকাটা ক্ষেতে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু কৃষক এখনো ধান কাটছেন। ধানের মুঠো মাথায় নিয়ে খলার দিকে ছুটছেন তারা। এসময় সবাইকেই ধানখলায় ব্যস্ত দেখা গেল।
দিরাই উপজেলার মিলনবাজার থেকে শাল্লা উপজেলার নিজ শাল্লা পর্যন্ত এই চিত্র দেখা গেল। জাঙ্গালে তৈরি খলায় ধান শুকানো, ধানের চিটা ছাড়ানো এবং খড় শুকানোর কাজ করছেন কিষাণ-কিষাণী। অনেকে শুকানো ধান ও খড় নানা ধরনের পরিবহনে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তীব্র রোদে পুড়ে কষ্টের ফসল গোলায় তুলছেন তাঁরা। অনেককে দেখা গেল খলাতেই ধান সিদ্ধ করছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কিছু জমির ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষকই ধান কাটেননি। পরাগায়ণ মুহুর্তে অগ্নি বাতাসের ছিটায় এই ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান কাটতে পারায় স্বস্থি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।কৃষি বিভাগের মতে, ছায়ার হাওরে ১৮০ হেক্টর জমির বোরো ধান অগ্নি বাতাসে নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া অল্প কিছু জমি শিলায় নষ্ট হয়েছে, যা কাঙ্খিত উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়েনি। কৃষকরা বলছেন ধানের মূল্য পেলে তাঁরা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা কৃষি বিভাগের মতে, ছায়ার হাওরের শাল্লা অংশে বোরো জমি আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৭ হেক্টর। দিরাই উপজেলায় ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর। নেত্রকোণার খালিয়াজুড়িতে ৯০০ হেক্টর এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় অন্ত্মত ১৫০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই বছরে হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২১২ হেক্টর বোরো জমি। এই হাওরে গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৪.০২ মেট্রিক টন চাল, যার আনুমানিক মূল্য অন্তত ১১৫ কোটি টাকা।ছায়ার হাওরের কৃষক মন্টু দাস বলেন, ‘আমাদের শাল্লার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কৃষকের জমি অগ্নি বাতাসে পুড়ে গেছে। কাটার উপযুক্ত ছিলনা। এতে কিছু কিছু কৃষকের বড় ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রান্তিক চাষি। অল্প জমি করেছিলাম। আমার সবগুলো জমি অগ্নি বাতাসে নষ্ট হয়ে গেছে।
ছব্বিশা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ধান কাটা শেষ করেছি। এখন ধান ও খড় শুকিয়ে বাড়িতে নিচ্ছি। বছর ভালো হওয়ায় সব কৃষকই এবার স্বস্তিতে ধান কেটেছেন। তবে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলন কিছুটা কম। তারপরও সব ধান কাটতে পেরে আমরা আনন্দিত। এখন ভালো মূল্য পেলে কৃষক কিছু লাভবান হতে পারবেন।সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, ছায়ার হাওর ও নলুয়ার হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। কৃষক এখন ধানকাটা ড়্গেতে গবাদি পশু ছেড়ে দিয়েছেন। কাটা ধান মাড়াই শেষে তারা শুকিয়ে এখন গোলায় ভরে রাখছেন। সংগ্রহ করছেন গবাদি পশুর খড়। এবার হেক্টর প্রতি গড় উত্পাদন ৪.০২ মে.টন চাল বলে জানান তিনি।