রোজার শিক্ষা গরিব দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ ১১ রমজান। শুরু হলো মাগফিরাতের দিন। পাপাচার আর অপরাধে ভরা আমাদের জীবন ও সমাজকে পরিশুদ্ধ করতে রহমতের পর ক্ষমা ও করুণার বার্তা নিয়ে এলো এ দশক। হে আল্লাহ! তোমার কুদরতি কদমে অগণিত শোকরিয়া জানাই-তুমি আমাদের মাগফিরাতের মোবারক সময়ে হাজির করেছ।

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শেষ করার শক্তি আসলে সৃষ্টির নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)। কুরআনে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের কথা বলা হয়েছে। সিজদায়ে শোকর বা কৃতজ্ঞতার সিজদায় লুটিয়ে পড়ার কথা এসেছে হাদিসে। হজরত আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোনো খুশির সংবাদ বা এমন কিছু পৌঁছাত আর তাতে তিনি সন্তুষ্ট হতেন; তখন তিনি আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়তেন’ (আবু দাউদ)।

আমরা যারা মাগফিরাতের দিনের নেয়ামতে ধন্য হয়েছি আমাদের উচিত কমপক্ষে দু-রাকাত শোকরিয়ার নামাজ আদায় করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। তাহলে আল্লাহ আমাদের জন্য এ রমজানের বাকি দিনগুলোয় তার অফুরান নেয়ামতের ভান্ডার খুলে দেবেন।

পবিত্র এ মাসে খোদার সন্তুষ্টি, জান্নাত প্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে হলে অর্থাৎ মুমিন থেকে মুত্তাকি হতে হলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে সিয়াম পালন করতেন ঠিক সেভাবেই আমাদের সিয়াম পালন করতে হবে। আমরা সারা দিন উপোস করা ও বড়জোর তারাবির সালাত আদায় করতে পারলেই নিজেকে বড় সায়েম ভেবে নিই। অথচ বাস্তবতা এমন নয়। রমজানের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলোর অন্যতম হলো সারা দিন না-খেয়ে সারা বছর যেসব গরিব-দুঃখী মানুষ না-খেয়ে থাকে তাদের দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করে নিজেকে সংযমী হিসাবে গড়ে তোলা। কিন্তু আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের বাহারি ইফতারির আয়োজন আর রকমারি সেহরি রোজার মৌলিক উদ্দেশ্যকেই বিনষ্ট করে না; বরং রীতিমতো আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় একেকজন বিরাট অপব্যয়কারী হয়ে উঠি এ মাসে।

রাসুল (সা.)-এর সেহরি ও ইফতারি এবং আমাদের সেহরি ও ইফতারির মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যবধান। অত্যন্ত জাঁকজমকহীন অনাড়ম্বর রোজা পালন করতেন রাসুল (সা.)। তার সেহরি ও ইফতার ছিল সাধারণের চেয়েও সাধারণ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না-থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা বা শুকনো খেজুর কোনোটাই না-পেলে কয়েক ঢোক পানি দিয়েই হতো তার ইফতার’ (তিরমিজি)। রাসুল (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে পছন্দ করতেন। ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না। তেমনিভাবে রাসুল (সা.)-এর সেহরিও ছিল খুব সাধারণ। তিনি (সা.) দেরি করে একেবারে শেষ সময়ে সেহরি খেতেন। সেহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর পছন্দ করতেন। সেহরিতে সময় নিয়ে কঠোরতা করা তিনি (সা.) পছন্দ করতেন না।

করোনায় আক্রান্ত এবারের রমজানে কত মানুষ কোনোরকম খেয়ে না-খেয়ে জীবন পার করছেন। লকডাউনের এ সময়ে পথে বসে গেছেন কত সামর্থ্যবান মানুষও। রাসুল (সা.)-এর আদর্শের অনুসরণে প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারির আয়োজনে আমরা যথাসাধ্য মিতব্যয়ী হয়ে দানের হাতকে সম্প্রসারিত করতে পারলে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর ভুখা-নাঙার বহু দুঃখী মানুষের মুখে যেমন হাসি ফুটবে তেমনি রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য দানশীলতার গুণ অর্জন হবে।

হাদিসে রমজান মাসকে হামদর্দি বা ‘সহানুভূতির মাস’ আখ্যায়িত করা হয়েছে। বুখারির বর্ণনা অনুযায়ী রাসুল (সা.) সারা বছর দান করতেন আর রমজানে প্রবাহিত বাতাসের মতো দান করতেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই-না উত্তম, আর যদি গোপনে কর এবং অভাবীকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম’ (সুরা বাকারা : ২৭১)। সিয়াম সাধনায় এ মাসে আমরা যেন গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, সেই তাওফিক কামনা করছি আল্লাহর কাছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর