ঢাকা ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নড়াইলে ‌‘স্বপ্ন’ বিভোর বোরো চাষিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৭:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১
  • ২৫৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নড়াইলের মাঠে মাঠে দুলছে সোনালী ধানে কৃষকের স্বপ্ন। সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর বোরো চাষিরা। মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সোনালি ধান। ধানের সোনালি রঙ আসায় কৃষকরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

এরই মধ্যে সোনালি ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

নড়াইল কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর করোনার মধ্যেই কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নড়াইলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমি।

নড়াইল সদর উপজেলার ইছামতী বিল, কাড়ার বিল, আউড়িয়া, লষ্কারপুর সলুয়ার বিল, কুমড়ির বিল, তারাপুর বিল, পেড়লির বিল, চাচড়ার বিল, চামরুল বিল, ধাড়িয়ার বিল, লোহাগড়া উপজেলার ইছামতী বিল, ইতনা বিল, কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি বিল, পাটেশ্বরী বিল, কলাবাড়িয়ার বিলসহ বিভিন্ন বিলে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

এসব বিলে হাইব্রিড জাতের হীরা, তেজ গোল্ড, এসএল ৮ এইচ, উফসি জাতের ব্রি ধান- ২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-৬৭, ব্রি ধান-৭৬, ব্রি ধান-৮৪, ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯৬ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জাতেরও কিছু ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যায় এ বছর ধানে বাম্পার ফলন আশা করছেন চাষিরা।

নড়াইল সদর উপজেলার সিবানন্দপুর গ্রামের কৃষক ইশারত শেখ বলেন, আমাদের বিলে এ বছর বোরা ধান খুবই ভাল হয়েছে। সম্প্রতি ঝড়ে কিছুটা সমস্যা হলেও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি কাটা শুরু হয়ে যাবে।

ফেদি গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ করোনার ভয়ে ঘরবন্দি থাকলেও কৃষকরা করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে বোরো ধানের চাষ করেছেন। করোনাকে ভয় পাচ্ছি না। তবে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছি। এই মুহূর্তে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।

লোহাগড়া উপজেলার হান্দলা গ্রামের কৃষক এসকেন্দার মোল্যা বলেন, আমরা অর্থে কষ্টের মধ্যেই ধান চাষ করি। এ বছর ধান ভালো হয়েছে। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আরো বেশি জমিতে ধান চাষ করেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। শিলা বৃষ্টি, ঝড় না হলে আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবো।

কালিয়া উপজেলার নোয়াগ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় ধান খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি গত বছরের মত এ বছরও ধানের ভালো দাম পাবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার দে বলেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়ায় এবং গত মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা পতিত জমিতেও এ বছর ধানের চাষ করেছে। সরকারিভাবে চাষিদের মাঝে বোরো ধানের বীজ বিতরণ, সার প্রণোদনা, ন্যায্য মূল্যে সার বিতরণ, করোনার সময়ে কৃষকের পাশে থেকে উৎসাহ যোগানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নড়াইল। এই জেলায় উৎপাদিত ধান জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ বছর ধান বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ৬২০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই ধান কাটা সম্পন্ন হবে। আশা করি এ বছরও কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নড়াইলে ‌‘স্বপ্ন’ বিভোর বোরো চাষিরা

আপডেট টাইম : ১১:৪৭:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নড়াইলের মাঠে মাঠে দুলছে সোনালী ধানে কৃষকের স্বপ্ন। সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর বোরো চাষিরা। মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সোনালি ধান। ধানের সোনালি রঙ আসায় কৃষকরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

এরই মধ্যে সোনালি ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

নড়াইল কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর করোনার মধ্যেই কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নড়াইলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমি।

নড়াইল সদর উপজেলার ইছামতী বিল, কাড়ার বিল, আউড়িয়া, লষ্কারপুর সলুয়ার বিল, কুমড়ির বিল, তারাপুর বিল, পেড়লির বিল, চাচড়ার বিল, চামরুল বিল, ধাড়িয়ার বিল, লোহাগড়া উপজেলার ইছামতী বিল, ইতনা বিল, কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি বিল, পাটেশ্বরী বিল, কলাবাড়িয়ার বিলসহ বিভিন্ন বিলে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

এসব বিলে হাইব্রিড জাতের হীরা, তেজ গোল্ড, এসএল ৮ এইচ, উফসি জাতের ব্রি ধান- ২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-৬৭, ব্রি ধান-৭৬, ব্রি ধান-৮৪, ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯৬ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জাতেরও কিছু ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যায় এ বছর ধানে বাম্পার ফলন আশা করছেন চাষিরা।

নড়াইল সদর উপজেলার সিবানন্দপুর গ্রামের কৃষক ইশারত শেখ বলেন, আমাদের বিলে এ বছর বোরা ধান খুবই ভাল হয়েছে। সম্প্রতি ঝড়ে কিছুটা সমস্যা হলেও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি কাটা শুরু হয়ে যাবে।

ফেদি গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ করোনার ভয়ে ঘরবন্দি থাকলেও কৃষকরা করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে বোরো ধানের চাষ করেছেন। করোনাকে ভয় পাচ্ছি না। তবে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছি। এই মুহূর্তে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।

লোহাগড়া উপজেলার হান্দলা গ্রামের কৃষক এসকেন্দার মোল্যা বলেন, আমরা অর্থে কষ্টের মধ্যেই ধান চাষ করি। এ বছর ধান ভালো হয়েছে। গত বছর দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আরো বেশি জমিতে ধান চাষ করেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। শিলা বৃষ্টি, ঝড় না হলে আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবো।

কালিয়া উপজেলার নোয়াগ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় ধান খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি গত বছরের মত এ বছরও ধানের ভালো দাম পাবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার দে বলেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়ায় এবং গত মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা পতিত জমিতেও এ বছর ধানের চাষ করেছে। সরকারিভাবে চাষিদের মাঝে বোরো ধানের বীজ বিতরণ, সার প্রণোদনা, ন্যায্য মূল্যে সার বিতরণ, করোনার সময়ে কৃষকের পাশে থেকে উৎসাহ যোগানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নড়াইল। এই জেলায় উৎপাদিত ধান জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ বছর ধান বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ৬২০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই ধান কাটা সম্পন্ন হবে। আশা করি এ বছরও কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন।