হাওর বার্তা ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার সাবেক আইন মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি আবদুল মতিন খসরুর চতুর্থ দফা নামাজের জানাযায় করোনা ভাইরাস কে উপেক্ষা করে হাজারো জনতার ঢল নামে। তিনি কুমিল্লা ৫ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নিবাচিত হয়েছিল।
পরে একই উপজেলার মিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে গার্ডঅব অনার প্রদান এর মাধমে ৫ম জানাজা শেষে মায়ের কবরের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় শত শত নেতাকর্মীর বুক ফাটা আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
মরহুমের নামাজের জানাযায় শরীক হয়ে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন কেন্দ্রিয় বিএনপির ভাইন প্রেসিডেন্ট বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সমন্বয়ক শওকত মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড হাসেম খান, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখলাক হায়দার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু জাহের, কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাসেদুল ইসলাম জিবন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড আবদুল বারী, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী জসিম উদ্দিন জসিম, ব্রাহ্মণপাড়া বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মাদ্রাসার সুপার, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পযার্য়ের নেতৃবৃন্দ। এ সময় বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা উপজেলা নিবার্হী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণপাড়া বুড়িচং এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ করোনা টেস্টের পরদিন (১৬ মার্চ) সকালে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে অবনতি হওয়ায় ১৮দিন পূর্বে তাকে ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। কুমিল্লার মরহুম এমপির মরদেহ আনার আগে ঢাকায় আরো দুটি তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য জীবন
আব্দুল মতিন খসরু ১২ ফেব্রæয়ারি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী মোঃ আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তিনি চার ভাই তিন বোনের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়েটি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কর্মরত আছেন, ছেলেটি আর্কিটেট পেশায় নিয়োজিত।
আবদুল মতিন খসরু মাধবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক করেন। কুমিল্লা ল’ কলেজ থেকে এল এল বি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আইনমন্ত্রী থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাÐের বিচারের পথ খোলে। শুধু রাজনীতে নয়, আইন এবং সামাজিক অঙ্গনেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।