কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের আবাসিক প্রশিক্ষণার্থী নিজেরাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রয়েছেন। তাদের জন্য পরিবেশন করা খাবারও স্বাস্থ্যকর নয়। ফলে অসুস্থদের সুস্থ করে তোলার দায়িত্বে নিয়োজিত সেবিকারাই খাদ্যে বিষক্রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সেবিকাদের স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ও খাবার নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে ১ম থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত মোট ২২১শ’ জন আবাসিক সেবিকা রয়েছেন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে খাবার দেয়া বাবদ প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে নেয়া হয়।
ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে সরকারি বাবুর্চি দ্বারা রান্না করে ছাত্রী সেবিকাদের খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার বাবদ যে টাকা নেয়া হয় তা খরচ করতে মোটেও স্বাধীনতা নেই ছাত্রীসেবিকাদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় মেস ম্যানেজারদের।
মেস কমিটিতে থাকা ইনস্টিটিউট কর্মকর্তার নির্দেশনা মেনে বাজার করতে হয়। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের বাজার থেকে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তাতে নিন্মমানের সবজি ও মাছ কেনা হয়। রান্নার ক্ষেত্রে মোটেও সঠিক মান পরিমাপ করা হয় না। নোংরা পরিবেশে রান্না করা খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে বছরের পর বছর আবাসিক ছাত্রী সেবিকাদের। প্রতিবাদ করার কোন উপায় নেই তাদের। প্রতিবাদী হলেই নেমে আসে নিরব নির্যাতন। নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রী সেবিকারা সাপ্লাইয়ের যে পানি ব্যবহার করেন তা অত্যন্ত নোংরা। এবং পানির বোতলগুলোর অবস্থাও খুবই খারাপ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সেবিকাদের টাকা দেয়া সত্ত্বেও নিম্নমানের খাবার দেয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি পঁচা ও বাসি খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। রাতের যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা থেকে ভাত অবশিষ্ট থাকলে তা সকালে রান্না হওয়া ভাতের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। পঁচা ও বাসি খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই।
kushtiaসেবিকাদের মানবেতর এ জীবন যাপন ও নিন্মমানের খাবার খেয়ে অপুষ্টিতে ভোগার বিষয়ে অবগত হওয়া সত্ত্বেও নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় এখানে শহীদুল ইসলাম ও সাদেক আলী নামের দুইজন সরকারি বাবুর্চি রয়েছেন। তারা নিজেরা আবার আলাদাভাবে রান্নার জন্য নিজেদের টাকা খরচ করে মহিলা নিয়োগ করে রেখেছে। এছাড়াও সেখানে অবস্থানরত সেবিকারা নিজেরাও রান্নার কাজের জন্য তরকারী কাটাসহ নানান কাজে লেগে থাকে। তারা কাজ না করতে চাইলেও তাদের উপর নেমে আসে খড়গ।
এব্যাপারে বাবুর্চি শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আড়াইশ’ জন সেবিকার জন্য তিন বেলা রান্না করা লাগে। এজন্য দুইজন বাবুর্চি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুইজন মানুষ কিভাবে রান্না করবো। একজন সকালে আরেক জন বিকালে ডিউটি করে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে আবার নিজের টাকা গচ্চা দিয়ে রান্নার জন্য অন্য মহিলা রাখা হয়েছে। রান্নার জন্য আরও বাবুর্চিসহ সহকারী নিয়োগদানের দাবি জানান তিনি।
ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ আকলিমা খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এখানে নার্সি ইন্সটিটিউটে প্রথম বর্ষে ৮০, দ্বিতীয় বর্ষে ৬৪ ও তৃতীয় বর্ষে ৭৭ জন্য সেবিকা রয়েছে। সেবিকাদের জন্য হাউজ কিপার শেফালী বালা বিশ্বাস ৫বছর ধরে এখানে কর্মরত রয়েছে। ক্যান্টিনে তিনজন টেবিল বয় থাকার দরকার হলেও কোন টেবিল বয় নেই। এখানকার সেবিকারই সেই দায়িত্ব পালন করে থাকে। আমরা নিজেরা টাকা দিয়ে দুজনকে রেখেছি পরিস্কার পরিচ্ছন্নর জন্য।
পঁচা-বাসি খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার অজানা ছিল। খোঁজ-খবর নিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রায় আড়াইশ’ সেবিকাদের জন্য মাত্র দুজন বাবুর্চি দিয়ে এগুলো সম্ভব নয়। আরো লোকবল দরকার বলে জানান তিনি।