আমাদের মন ভালো থাকলেই শরীর ভালো থাকে। দেহের সুস্থতার থেকে মনের সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। কারণ আমাদের মনই যে কোনো ব্যাপারে প্রথমে সাড়া দেয়। আর তাই শুধু শারীরিক সুস্থতা ও কায়িক পরিশ্রম দিয়েই একজন মানুষ সবসময় ভালো থাকতে পারে না, যদি তার আত্মিক বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না হয়।
দুনিয়ার সব মানুষেরই কখনো না কখনো না মন খারাপ হয়। তবে এটা দীর্ঘস্থায়ী আর ঘন ঘন হলে খুব মুশকিল।
আমাদের অনেকেই মনখারাপের সঙ্গে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনকে গুলিয়ে ফেলি। মন খারাপ একটা সাময়িক অবস্থা। আর বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন একধরনের মানসিক রোগ। তবে দিনের পর দিন যদি মন খারাপ থাকে, তাহলে সেটা বিষন্নতার দিকে গড়াতে পারে। আমাদের চারপাশের নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির টানাপেড়েনে একটু-আধটু মনখারাপ হতেই পারে, কিন্তু একে খুব বেশি পাত্তা দেয়া ঠিক হবে না মোটেও। যতো দ্রুত মনখারপ কাটিয়ে ওঠা যায় ততই ভালো।
মন ভালো রাখার কিছু উপায় আছে, জেনে নিন কাজে লাগতেও পারে।
মনখারাপের কারণটা কী?
মন খারাপ হলে সবার আগে বের করতে হবে, এর কারণটা কী? কেউ বকা দিয়েছে বলে মন খারাপ? আপনার ভুলের কারণে যদি কেউ বকা দিয়ে থাকে, তাহলে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিন, দেখবেন মন ভালো হয়ে গেছে। আর অকারণে কেউ বকা দিলে, সমস্যাটা তার। আপনার এতে মন খারাপ করার কিছু নেই।
কারো সঙ্গে ঝগড়া করে মন খারাপ? আচ্ছা, আপনার কথা বলার বিষয় কি যৌক্তিক ছিলো? যদি যুক্তিসঙ্গত হয় তো কথাই নেই। এ নিয়ে মন খারাপ না করে বরঞ্চ আপনার গর্বিত হওয়া উচিত। খারাপ ব্যবহার পেয়ে মন খারাপ? হাতের পাঁচ আঙ্গুল কখনো সমান হয় না। তাই, সবাই ভালো হবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নাই। অতএব মন খারাপ করেও লাভ নেই!
নিজের অজান্তে কোন দোষ-ত্রুটি করে ফেলেছেন, এজন্য কী মন খারাপ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর না করার শপথ নিন। ভুলটা নিজের জীবনের শিক্ষা হিসেবে মাথায় রাখুন। দেখবেন মন ঝরঝরে হয়ে গেছে।
মন খুলে কথা বলুন:
কখনো মন খারাপ লাগবে, তখন আপনার পরিবারের প্রিয় কোনো মানুষ কিংবা ঘণিষ্ঠ কোনো বন্ধুর সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। আপনার মনখারাপের কারণটা বলুন। শেয়ার করুন নিজের কষ্টের কথা। দেখবেন অনেকটা হালকা হয়ে গেছেন। মন ভালো করার সবচেয়ে ভালো উপায়, কাছের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া। আড্ডা একবার জমে গেলে মন খারাপের কথা মনেই থাকবে না। প্লাস একা একা থাকলে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন, অনেক জোরে জোরে গান শুনুন। দেখবেন মন খারাপ কিভাবে দৌড়ে পালায়! মোট কথা নিজের পছন্দের কাজে ডুবে যান। মাথার যেসব চিন্তা মন খারাপ করে দেয় তা ঝেড়ে ফেলুন আর সময় দিলে সব কিছুই ঠিক হয়ে যায়।
বেরিয়ে পড়ুন
মনখারাপ হলে আমরা অনেকেই ঘরের কোনে চুপিটি মেরে বসে থাকি। এতে মনের ভার আরো বাড়ে। মন খারাপ হলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ুন। আশেপাশে এমন অনেক কিছুই আছে, যা হয়তো মুহূর্তেই আপনার মনকে ভালো করে দিতে পারে। তাছাড়া মুক্ত বাতাস ও সূর্যের আলো শরীরের জন্য অনেক উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অফিসে বসে বসে কাজ করে, তাদের তুলনায় যারা বাহিরে ঘুরে ঘুরে কাজ করে তাদের স্ট্রেস এর পরিমাণ কম। কিছু সময় সূর্যের আলোর নীচে থাকার ফলে আপনার শরীরে ভিটামিন –ডি এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
ব্যস্ত রাখুন নিজেকে
মন খারাপ হলে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে, কাজের মাঝে ডুব দিন। জীবনের অনেক বিষয় রয়েছে যা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এতে আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। অপ্রয়োজনীয় চিন্তা আপনাকে কষ্ট দিবে না। হালকা ব্যায়াম, হাঁটা, সাতার এসব কায়িক শ্রমের মধ্য দিয়ে আপনার মনকে পরিষ্কার করুন এবং আপনার চিন্তা-ভাবনা রিফ্রেশ করুন। আপনি কিছু সময়ের মধ্যে ভালো অনুভব করবেন। ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে ইনডোরফিন নির্গত হয়। যার ফলে মানুষ ভালো অনুভব করে এবং ব্যায়ামের ফলে শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি পায়।
নি:শ্বাসে মন ভালো
মন খারাপ থাকলে নিশ্বাস নেয়ার মধ্য দিয়ে ঝরঝরে হয়ে ওঠা যায়। এজন্য বেশ বড় করে নিঃশ্বাস নিন। প্রথমে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে মনে মনে ২০ গুনুন। এবার দম ছেড়ে দিন ধীরে ধীরে। ৫ সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার একই ভাবে বুক ভরে নিঃশ্বাস
নিয়ে মনে মনে ২০ পর্যন্ত গুনুন এবং দম ছেড়ে দিন। এভাবে ১ মিনিট নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করলে মন ভালো হয়ে যাবে অনেকটাই। এছাড়াও মন খারাপ হলে পছন্দের কোনো সুবাস নিতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার প্রিয় পারফিউম অথবা প্রিয় কোনো ফুল। গবেষণায় দেখা গেছে, সুগন্ধ মানুষের মনকে ফুরফুরে করে তোলে।
বাস্তব চিন্তা করুন
খারাপ একটা দিন আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে আপনি যদি অবাস্তব আশা করেন। কম আশা করাটাই ভালো। আপনি ভাবুন, আজকে আপনি বাস পাবেনই না, হেঁটে অফিসে যেতে হবে। এই চিন্তা করার পর যদি বাসে দাঁড়িয়েও যেতে হয় তারপরেও আপনার মেজাজ ভালো থাকবে। আর আপনি যদি ভেবে নেন দ্রুত বাস পেয়ে যাবেন, আরামসে বসে যেতে পারবেন তাহলে বাস পেতে একটু দেরি হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে।
পছন্দের খাবার আর বেশি করে পানি খান
মন খারাপ থাকলে পছন্দের কোনো খাবার খান, দেখবেন ভালো লাগছে। আবারঅনেক সময় ডিহাইড্রেশনের জন্য আমাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং মন খারাপটি আরও বেশি করে আমাদের সামনে চলে আসে। তাই মন খারাপ দূর করতে পানি পান করে নিন এক নিঃশ্বাসে ১ গ্লাস। পানি পানের ফলে অনেকটা হালকা হয়ে যাবে মন।
শুনতে পারেন পছন্দের গান কিংবা হাসির কোনো ছবি
মন খারাপ থাকলে প্রিয়গানগুলো শুনে ভালো করতে পারেন মনকে। এক্ষেত্রে চটুল গান হলেই ভালো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, গান শুনলে রক্তচাপ কমে, স্ট্রেস কমে এবং মেজাজ ভালো হয়। তবে গান শোনার সময়ে বেশি চিন্তা না করাই ভালো। তৈরি করে রাখুন এমন একটি প্লেলিস্ট যা আপনার মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
মনখারাপের সময় ছবি দেখলে হাসির কোনো ছবি বেছে নিন। ছবিটি দেখতে দেখতে একটু হলে হাসুন। এতে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ হবে এবং মন হয়ে যাবে ফুরফুরে। হাসলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহও বাড়ে। তাই ইউটিউবে কোনো হাসির ভিডিও দেখে হাসার চেষ্টা করতে পারেন।
উপহার দিন নিজেকে
মন খারাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটি উপায় হল নিজেকে নিজে উপহার দেয়া। এমন কেউ পৃথিবীতে নেই যে উপহার পেতে পছন্দ করেন না। উপহার পেলে সবারই মন ভালো হয়ে যায়। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে একবার ট্রাই করেই দেখুন না। দেখবেই সেকেন্ডের মধ্যে আপনার মন খারাপ কোথায় উধাও হয়ে গেছে।