হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ‘দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে এবং এই মুহূর্তে অন্তত ২৯টি জেলা করোনা ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। সোমবার ( ২৯ মার্চ) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এসব জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, নওগাঁ, রাজশাহী ইত্যাদি। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখায় ২৪ মার্চ পর্যন্ত আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব জেলাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করা হয়েছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালকের মতে, ‘মার্চের ১৩ তারিখে সংক্রমণের উচ্চ মাত্রা ছিল ৬টি জেলায়, ২০ তারিখে দেখা গেছে ২০টি জেলা ঝুঁকিতে আছে। আর মার্চের ২৪ তারিখে দেখা গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার উচ্চ এমন জেলার সংখ্যা ২৯টি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে।’
এবার তরুণরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, প্রথম দিকে মানুষ বাইরে কম বের হত। তখন আমরা দেখেছি যারা বাইরে যাচ্ছেন, কাজে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রতি জেলায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে এবং এসব কমিটি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে মিলে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এক সঙ্গে কাজ করবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার সরকার ১৮ দফা নতুন নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সব ধরণের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করা।
এই ১৮ দফা নির্দেশনার মধ্যে সরকার উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরণের জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে জনসমাগম সীমিত করার নির্দেশনাও রয়েছে এর মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, যেসব জেলায় উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে, প্রয়োজনে সেসব জেলার সঙ্গে আন্তঃজেলা যোগাযোগও সীমিত করা হতে পারে। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন জেলার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের অবহেলার কারণে নতুন করে সংক্রমণের এই উচ্চমাত্রা তৈরি হয়েছে। এজন্য মানুষ দায়ী। তার মতে, গত এক বছর ধরে আমরা যে চর্চাগুলো করেছি, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে শিষ্টাচারগুলো আমরা শিখেছি, গত দুই-তিন মাসে আমরা চরম আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। এ কারণেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। কোনো স্ট্রেইনকে দায়ী করে লাভ নেই। আমরা এখনও যদি সতর্ক হই, তাহলে অবশ্যই আমরা একে মোকাবেলা করতে পারি।’
টিকাকে করোনাভাইরাস মোকাবেলার ‘বড় হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করে নাজমুল হোসেন বলেন, যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের সবার দ্রুত টিকা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, তবে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ইমিউনিটি সেভাবে তৈরি হয় না। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে। এ কারণে টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলতে হবে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে রোগীরা ঢাকায় চলে আসেন, যে কারণে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ে। আর এতে রোগীরও অসুবিধা হয়, মানে ঢাকায় আনতে আনতে হয়ত তার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।’