ইউপি নির্বাচন : মনোনয়ন নিয়ে খুলনায় শাসক দলে গৃহদাহ

খুলনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শাসক দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। মনোনয়ন সভায় প্রার্থী ও তার অনুসারীদের মধ্যে দাকোপে হাতাহাতি এবং বটিয়াঘাটায় দলীয় কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, কয়রায় অনিয়ম, তেরখাদা, রূপসা ও দিঘলিয়ায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে এবং ডুমুরিয়ায় স্থানীয় এমপি ও প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ উত্থাপন করেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সোমবার ও মঙ্গলবার সভা আহবান করা হয়। সোমবার ডুমুরিয়ার শোভনা, মাগুরাঘোনা, আটলিয়া, খর্নিয়া, রুদাঘরা, রঘুনাথপুর ও ধামালিয়া ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়। একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোট নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু গোপন ব্যালটে ভোট না নিয়ে সকলের উপস্থিতিতে কন্ঠভোট গ্রহণ করা হয। পরে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানতে পারে ত্যাগীদের উপেক্ষা করে, নব্য আওয়ামী লীগারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে তারা ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ করে রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি খান সাকুর আহমেদ বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর সামনে তার বাসভবনে বসে অনেকেই বিপক্ষে কন্ঠভোটে মতামত দেননি। আমরা গোপন ব্যালটে ভোট নেয়ার জন্য উপজেলা শাখা সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে অনুরোধ করি; কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেন।’

প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের আটলিয়া ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ কুমার রায় মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন। সাত ইউনিয়নের পক্ষে দেয়া ওই বক্তব্যে তিনি প্রার্থী বাছাই-এ অনিয়মের অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ দলীয় সভাপতির নির্দেশ অমান্য করেছেন। তিনি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে কন্ঠভোট গ্রহণ করেছেন। পরে তিনি প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সবাইকে ফরমে স্বাক্ষর করতে বলেন। কিন্তু আমরা তা করিনি।

শোভনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সরদার আব্দুল গণি বলেন, সদ্য কৃষক লীগে যোগদানকারী, চরমপন্থি দলের নেতা, সাংবাদিক নহোর আলী হত্যাসহ কমপক্ষে ১৫ মামলার আসামী সুরঞ্জিতকে দলের মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।

আওয়ামী লীগ জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নব্য আওয়ামী লীগার স, ম আব্দুল কাইয়ুমকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রী সম্পূর্ণভাবে তাঁর স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় মঙ্গলবার দুপুরে মনোনয়ন কার্যক্রম চলার সময়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা এক পর্যায়ে সংলগ্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ভাঙচুর করে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ বটিয়াঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি ও বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান খান আশরাফুল আলম বলেন, জেলা সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদের ভাইপো শেখ হাদী উজ্জামান হাদী ও ফরিদ রানার নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা কার্যালয়ের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাঙচুর করে।

কয়রার আমাদী ইউনিয়নের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলরদের ভোট শেষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান চেয়ারম্যান আমীর আলী গাইন ভোট বর্জন করে স্থানীয় কয়রা প্রেস ক্লাবে সোমবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

সোমবার দাকোপের ৯নং বানিশান্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময়ে তিন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী সভা বর্জন করেন। এ ঘটনায় জেলা সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেখানে চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

প্র্রার্থীরা হল সুধাংশু কুমার বৈদ্য, বিনয় কৃষ্ণ সরদার, পরিমল কান্তি রপ্তান ও বর্তমান চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়। প্রার্থীতার বিষয়কে কেন্দ্র করে তর্ক-বিতর্কের জের ধরে এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর