ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ঋতুরাজের আগমন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫২:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১
  • ১৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুচক্রের খেলায় শীতকালের পরেই আসে বসন্তকাল। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ফাল্গুন-চৈত্র এই দুই মাস সময় হলো বসন্তকাল। পাতাঝরা গাছের ডালে ডালে নতুন পাতার সমাগমে, ফুল গাছের শত ফুল ফোটার মাধ্যমে এবং কোকিলের সুমধুর ডাকে বসন্তকাল প্রকৃতির নিজস্ব ধারাবাহিকতায় আবির্ভূত হয়। বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্তকালে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সুন্দরের এক অপরূপ ভাণ্ডার।

শীতের কুয়াশা ঘন অবগুণ্ঠন থেকে বেরিয়ে এসে বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব আর জীবন হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল। বসন্তের হৃদয়স্পর্শী ছোঁয়ায় মানুষ আবার কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে আর পৃথিবী ফিরে আসে তার নিজস্ব ধারায়। বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় তার নিজস্ব ভঙ্গিতে আর ঘাস ফড়িং লাফিয়ে চলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। বসন্তকালে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক হয়ে ওঠে অবিচ্ছেদ্য। ঋতুরঙের খেলায় বসন্তের অবস্থান তাই সবার ওপরে। আর এজন্যই বসন্তকালকে ঋতুরাজ বলা হয়ে থাকে।

কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে আগমনী বার্তা সোনায় শীতকাল। শীতকালে প্রকৃতি তার চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে নির্জীব হয়ে পড়ে; আর মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। তখন সবারই চাওয়ার মধ্যে থাকে কবে ঋতুরাজ দেখা দেবে এই সোনার বাংলার প্রকৃতিতে। বসন্তী আবহাওয়া শুরুর আগে থেকেই মানুষের চির অকৃত্রিম বন্ধু বৃক্ষরাজি পাতা ঝরিয়ে প্রস্তুত থাকে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। আর বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি আর মানুষ ফিরে পায় তাদের পূর্ণ জীবনযাত্রা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীরও ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে। প্রকৃতি আবার সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে; বাতাসের অবস্থারও ব্যাপক পরিবর্তন হয়। প্রকৃতি যেন আবার তার পূর্ণতা ফিরে পায়। ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে চৈত্র মাসের শেষ অবধি পর্যন্ত কোকিলের কুহুতান, শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার প্রাণখোলা হাসি আর প্রকৃতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে তোলে।
বসন্তকাল মানব মনের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলার ষড়ঋতুর মধ্যে বসন্তকালের আগমনী বার্তায় প্রকৃতি আর মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়; আর বসন্তের চলে যাওয়ার সময় হলে উভয়ই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। চারদিকে ফুলের সমারোহ, পাখির কলকাকলি আর সবুজ শ্যামল প্রকৃতির সঙ্গে নির্মল হাওয়ায় মানুষের জীবন হয়ে ওঠে চঞ্চল ও কর্মঠ। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যে মানুষ বিমোহিত হয়ে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যায়। বসন্তকাল মানবমনের সংকীর্ণতা আর পঙ্কিলতার কালিমাকে মুছে দিয়ে উদার মানসিকতার সৃষ্টি করে।

আবহমান বাঙালির জীবনধারা ও সংস্কৃতিতে বসন্তকাল ঋতুরাজ রূপে রাজার আসনে স্থান দখল করে নিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যেকটি মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে ঋতুরাজকে বরণ করে নেয় নিজস্ব ধারায়। বসন্তকালকে বরণ করে নেওয়ার উৎসব যেন বাংলায় সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়ে ওঠে।
শীতের রিক্ত প্রকৃতি বসন্তের ছোঁয়ার পরশ পাথরের মাধ্যমে ফিরে পায় নতুন প্রাণ। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বসন্তকাল যতটা মানবমন ও প্রকৃতিকে রাঙায়, সাজায়; অন্যান্য ঋতু তার ধারে কাছেও নেই। বসন্ত এসে বাংলার প্রকৃতিকে স্বপ্নরাজ্যে পরিণত করে তোলে। আর প্রকৃতির ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকবারই বসন্ত এসে বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিয়ে চলে যায় নিজস্ব ধারায় এবং সেই সঙ্গে প্রত্যেকবারই প্রকৃতি ও মানুষ তাদের প্রিয় বসন্তকালকে বরণ করে নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ঋতুরাজের আগমন

আপডেট টাইম : ০৯:৫২:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুচক্রের খেলায় শীতকালের পরেই আসে বসন্তকাল। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ফাল্গুন-চৈত্র এই দুই মাস সময় হলো বসন্তকাল। পাতাঝরা গাছের ডালে ডালে নতুন পাতার সমাগমে, ফুল গাছের শত ফুল ফোটার মাধ্যমে এবং কোকিলের সুমধুর ডাকে বসন্তকাল প্রকৃতির নিজস্ব ধারাবাহিকতায় আবির্ভূত হয়। বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্তকালে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সুন্দরের এক অপরূপ ভাণ্ডার।

শীতের কুয়াশা ঘন অবগুণ্ঠন থেকে বেরিয়ে এসে বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব আর জীবন হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল। বসন্তের হৃদয়স্পর্শী ছোঁয়ায় মানুষ আবার কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে আর পৃথিবী ফিরে আসে তার নিজস্ব ধারায়। বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় তার নিজস্ব ভঙ্গিতে আর ঘাস ফড়িং লাফিয়ে চলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। বসন্তকালে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক হয়ে ওঠে অবিচ্ছেদ্য। ঋতুরঙের খেলায় বসন্তের অবস্থান তাই সবার ওপরে। আর এজন্যই বসন্তকালকে ঋতুরাজ বলা হয়ে থাকে।

কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে আগমনী বার্তা সোনায় শীতকাল। শীতকালে প্রকৃতি তার চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে নির্জীব হয়ে পড়ে; আর মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। তখন সবারই চাওয়ার মধ্যে থাকে কবে ঋতুরাজ দেখা দেবে এই সোনার বাংলার প্রকৃতিতে। বসন্তী আবহাওয়া শুরুর আগে থেকেই মানুষের চির অকৃত্রিম বন্ধু বৃক্ষরাজি পাতা ঝরিয়ে প্রস্তুত থাকে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। আর বসন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতি আর মানুষ ফিরে পায় তাদের পূর্ণ জীবনযাত্রা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীরও ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে। প্রকৃতি আবার সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে; বাতাসের অবস্থারও ব্যাপক পরিবর্তন হয়। প্রকৃতি যেন আবার তার পূর্ণতা ফিরে পায়। ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে চৈত্র মাসের শেষ অবধি পর্যন্ত কোকিলের কুহুতান, শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার প্রাণখোলা হাসি আর প্রকৃতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে তোলে।
বসন্তকাল মানব মনের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলার ষড়ঋতুর মধ্যে বসন্তকালের আগমনী বার্তায় প্রকৃতি আর মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়; আর বসন্তের চলে যাওয়ার সময় হলে উভয়ই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। চারদিকে ফুলের সমারোহ, পাখির কলকাকলি আর সবুজ শ্যামল প্রকৃতির সঙ্গে নির্মল হাওয়ায় মানুষের জীবন হয়ে ওঠে চঞ্চল ও কর্মঠ। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যে মানুষ বিমোহিত হয়ে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যায়। বসন্তকাল মানবমনের সংকীর্ণতা আর পঙ্কিলতার কালিমাকে মুছে দিয়ে উদার মানসিকতার সৃষ্টি করে।

আবহমান বাঙালির জীবনধারা ও সংস্কৃতিতে বসন্তকাল ঋতুরাজ রূপে রাজার আসনে স্থান দখল করে নিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যেকটি মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে ঋতুরাজকে বরণ করে নেয় নিজস্ব ধারায়। বসন্তকালকে বরণ করে নেওয়ার উৎসব যেন বাংলায় সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়ে ওঠে।
শীতের রিক্ত প্রকৃতি বসন্তের ছোঁয়ার পরশ পাথরের মাধ্যমে ফিরে পায় নতুন প্রাণ। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বসন্তকাল যতটা মানবমন ও প্রকৃতিকে রাঙায়, সাজায়; অন্যান্য ঋতু তার ধারে কাছেও নেই। বসন্ত এসে বাংলার প্রকৃতিকে স্বপ্নরাজ্যে পরিণত করে তোলে। আর প্রকৃতির ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকবারই বসন্ত এসে বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিয়ে চলে যায় নিজস্ব ধারায় এবং সেই সঙ্গে প্রত্যেকবারই প্রকৃতি ও মানুষ তাদের প্রিয় বসন্তকালকে বরণ করে নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর