আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করি যেখানে নারীদেরকে সাধারণত পুরুষদের উপর ‘নির্ভরশীল’ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। বাবার কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নেওয়া বা ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় ভাইকে ‘দেহরক্ষী’ হিসেবে সঙ্গে নেওয়া সব ক্ষেত্রেই নারীদের এই শিক্ষাই দেওয়া হয় যে, পুরুষরাই তাদের উপরওয়ালা।
কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের নির্ভরশীলতা সম্পর্কে নারীদের কোনো শিক্ষাই দেওয়া হয় না। এখানে নারীদের উপর পুরুষদের নির্ভরশীলতার সাতটি বিষয় তুলে ধরা হল যা থেকেই বোধগম্য হবে যে, পুরুষরাও নারীদের উপর কতটা নির্ভরশীল।
১. নারীরা পুরুষের জীবনে শৃঙ্খলা আনয়ন করেন: কর্মস্থল থেকে ফেরার পর যথেচ্ছভাবে ছুঁড়ে ফেলা মোজা জোড়া কি আপনি কখনো খুঁজে পেতেন যদি আপনার মা, বোন বা স্ত্রী সেটি তুলে এনে না রাখতো বা পরিষ্কার না করে রাখতো? বেশিরভাগ পুরুষই এ প্রশ্নের না বাচক উত্তর দিবেন। কারণ একজন নারীই বন্য ও ডেমকেয়ার বালকটিকে একজন দয়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন পুরুষে রুপান্তরিত করেন এবং তার জীবন ও ঘরে শৃঙ্খলা আনয়ন করেন।
২. পুরুষদের খাবারের বিষয়টিও নারীদের উপরই নির্ভর করে: ভারতের শীর্ষস্থানীয় পাঁচকরা পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বাড়িতে রান্নার প্রশ্ন উঠলে একজন নারীর চেয়ে ভালো পাঁচক আর কেউই হতে পারেন না। তাদের উপরই এ বিষয়টি নির্ভর করে যে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কতদিন পরপর স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন, না খাবেন। এমনকি তাদের খবরদারির কারণেই আপনি কখনো বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় লাঞ্চবক্স সঙ্গে না নিয়ে বের হন না!
৩. পরিবারের নারীরাই বাচ্চা-কাচ্চার দেখভাল করেন: নারীরা শুধু সন্তান জন্ম দিয়েই ক্ষ্যান্ত হন না বরং তারাই বাচ্চা-কাচ্চাদের দেখভাল ও লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করেন। একজন নারী কর্মজীবি বা গৃহীনি যাই হোন না কেন সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে তিনি কোনো গাফিলতি করেন না। সন্তানদের সাথে মায়েদের স্বভাবতই খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। আর এ কারণে তারাই সন্তানদের দরকার-অদরকার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল থাকেন। মায়েরাই সাধারণত রান্না-বান্না, কেনাকাটা ও সন্তানদের বিদ্যালয় সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে বেশি সংশ্লিষ্ট থাকেন। ফলে সন্তান লালন-পালনের ইস্যুতে পুরুষরা সাধারণত স্ত্রীদের উপরই বেশি নির্ভরশীল থাকেন।
৪. পরিবারের মুরুব্বীদের দেখভালও নারীরাই করেন: একজন নারী বিয়ের পর তার নিজ বাবা-মাকে ছেড়ে স্বামীর পরিবারে যোগ দেন। ফলে তিনি স্বামীর বাবা-মা বা শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মার মতোই আপন করে নেন। এবং তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো এমনকি ভালোবাসার চাহিদা পুরণেও প্রাণপণ চেষ্টা করেন। পুরুষরাও তাদের স্ত্রীর বাবা-মার ব্যাপারে অনেকসময় যত্নশীল হয়ে থাকেন। কিন্তু একজন পুরুষ কখনোই পরিবারের মুরুব্বীদের প্রতি ভালোবাসা ও যত্ন-আত্মির ক্ষেত্রে একজন নারীর সমকক্ষ হতে পারেন না।
৫. নারীরাই পুরুষদেরকে ফ্যাশন সচেতন করে তোলেন: হাতে গোনা কয়েকজন ফ্যাশন ডিজাইনারের কথা বাদ দিলে ভারতের বেশিরভাগ পুরুষেরই ফ্যাশন বিষয়ে রুচি খুব একটা ভালো নয়। পুরষদেরকে যদি তাদের বোন, প্রেমিকা বা স্ত্রীরা ফ্যাশন বিষয়ে সচেতন না করতো তাহলে তারা হয়তো চিরকালই এ বিষয়ে ভোতা থেকে যেতো। নারীরা না থাকলে পুরুষকে কে শেখাতো যে হলুদ প্যান্টের সাথে গোলাপি শার্ট মানায় না?
৬. বিপদের সময় অর্থের উৎস: স্ত্রী যদি সবসময়ই কিছু অর্থ সঞ্চয় করে না রাখতো তাহলে পুরুষরা বিপদের সময় কার কাছে হাত পাততো? স্মরণাতীতকাল থেকেই আমাদের সমাজের নারীরা তাদের সঞ্চয়ী মানসিকতা ও মিতব্যায়ীতার জন্য আদৃত হয়ে আসছেন। যদিও পুরুষরা নারীদেরকে সাধারণত অতি বেশি খরুচে হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন তথাপি বাজার থেকে ফিরে আসার পর ব্যাগ খুলে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে পরিবারের প্রয়োজনাতিরিক্ত কিছুই কেনেন নি। এবং যা কিনেছেন তাও দরদাম খুব কষেই কিনেছেন!
৭. পুরুষের সাফল্যের পেছনে নারীর অবদানই সবচেয়ে বেশি: স্মরণাতীতকাল থেকেই এই প্রবাদ-প্রবচনটি প্রচলিত আছে যে, ‘প্রতিটি পুরুষের সাফল্যের পেছনেই কোনো না কোন নারীর অবদান থাকে।’ আমাদের সমাজের নারীরা সধারণত নিজেদের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে হলেও স্বামীর স্বপ্ন পুরণে সহায়তা করে থাকেন। তারাই পুরুষের প্রতিটি কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়ে নিরন্তর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণার যোগান দেন।
এভাবেই একজন পুরুষ কোনো নারী তার উপর যতটা না নির্ভরশীল থাকেন তার চেয়ে তিনিই ওই নারীর উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। সূতরাং প্রতিদিনই একজন নারীর জয়গান গাওয়ার জন্য একজন পুরুষ হিসেবে আপনার জীবনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে।