সঙ্কটের মুহূর্তে ‘ভালো স্বামী’র মতোই স্ত্রীয়ের পাশে দাঁড়ালেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন৷ কয়েক ঘণ্টা পরেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রার্থী বাছাইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন শুরু হবে নিউ হ্যাম্পশায়ারে৷ এই অবস্থায়, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে হিলারি ক্লিনটনের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করলেন বিল ক্লিনটন। হিলারির ও তার সমর্থকদের দিকে ‘লিঙ্গবৈষম্যবাদী’ ও ‘নিম্নরুচি’র মন্তব্য ছুড়ে দেয়া, অনলাইন তথ্য ফাঁসের ফায়দা তোলাসহ একাধিক অভিযোগ প্রাকাশ করলেন ভার্মন্টের সেনেটর স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
রবিবার বিল ক্লিনটন দাবি করেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হিলারি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক প্রবন্ধ লিখেছিলেন এক মহিলা ব্লগার৷ কিন্তু স্যান্ডার্সদের প্রচার ম্যানেজারদের কটুক্তির ভয়ে লেখাটি ছদ্মনামে প্রকাশ করতে বাধ্য হন তিনি৷ ‘ওই মহিলা এবং অন্যান্য বহু মানুষ ইন্টারনেটে শুধুমাত্র হিলারিকে সমর্থনের কারণ ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাদের উদ্দেশে এমন বিষাক্ত ব্যঙ্গ আর আক্রমণ, যেগুলি লিঙ্গবৈষম্যবাদী তো বটেই, এবং এত নিম্নরুচির যে আবার উচ্চারণ করতে লজ্জা হয়’, বলেন ৬৯ বছর বয়সি বিল কিল্টন৷
তার দাবি, স্যান্ডার্সদের মতের সঙ্গে না মিললেই যে কাউকে ‘প্রতিষ্ঠানের দালাল’ হিসেবে দোষ দেয়া হচ্ছে৷ স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবার চৌহদ্দি বাড়ানো এবং মার্কিন রাজনীতিতে ধনকুবেরদের থেকে সাধারণ শ্রমিক ও তরুণ-তরুণীদের বক্তব্যকে বেশি মর্যাদা দেয়ার যে আশ্বাস স্যান্ডার্স দিয়েছেন, তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি হিলারির স্বামী৷ বলেছেন, ‘সত্যিই তো, বিপ্লব করতে গেলে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব একটা খেয়াল রাখা যায় না!’
স্যান্ডার্সের অভিযোগ ছিল, হিলারি ওয়াল স্ট্রিট শেয়ারবাজারের শিল্পপতিদের কাছ থেকে নির্বাচনী খরচের জন্য টাকা তুলেছেন, তাই ভোটে জিতলে কোটিপতি ব্যবসায়ীদের স্বার্থই দেখবেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরকে সামনে তুলে বিল ক্লিনটন দাবি করেন, ওয়াল স্ট্রিট সম্পর্কে ধারাবাহিক সমালোচনা করলেও, স্যান্ডার্সও কিন্তু বড়লোকদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন৷ ক্লিনটন আরো বলেন, ‘২০০২ সালে কমোডিটি ফিউচার্স মডার্নাইজেশন আইনের পক্ষে সই করেছিলেন স্যান্ডার্স, যিনি নাকি সব ছোট উদ্যোগের পক্ষে ও বড় উদ্যোগের বিরোধী! ওই আইন ওয়াল স্ট্রিটকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরতে সাহায্য করেছিল৷ কিন্তু হিলারিকে কখনও বলতে শুনবেন না যে, স্যান্ডার্স ওয়াল স্ট্রিটের দালাল৷’
পাশাপাশি, ক্লিনটনের অভিযোগ, গত ডিসেম্বরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির কম্পিউটার থেকে ফাঁস হওয়া হিলারির প্রচার ও ভোটার সম্পর্কিত তথ্যের অবৈধ ফায়দা উঠিয়েও, সেই দায় ঝেড়ে ফেলছেন স্যান্ডার্সরা৷ ‘তথ্য ফাঁসের ওই ৩০ মিনিটে আপনার প্রচার ম্যানেজাররা অন্তত ২৫ বার আলাদা-আলাদা ভাবে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিল! প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন ঠিকই৷ কিন্তু ব্যক্তিগত ই-মেলে তো দায়টা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উপরেই চাপিয়েছেন৷ আপনাদের যুক্তি, ওরা কেন গাড়ির চাবি গাড়িতেই ফেলে গেল! আপনারা তো শুধু গাড়ি নিয়ে পালিয়েছেন মাত্র! আর তার সাহায্যে কয়েক লক্ষ ডলারের তহবিলও গড়েছেন’, বললেন ক্লিনটন৷
স্যান্ডার্সের প্রচার বিভাগের মুখপাত্র মাইক ব্রিগসের পাল্টা মন্তব্য, ‘এই কথাগুলো খুবই হতাশাজনক৷ স্যান্ডার্স তার কথা বলেই যাবেন৷ অর্থাৎ, আমেরিকায় কারচুপি করা অর্থনীতি চলছে, অধিকাংশ নতুন সম্পদ উঁচুতে বসা লোকেদের হাতেই যাচ্ছে, আর ভোটের প্রচারে টাকা জুগিয়ে একটা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে ঠেকে দেয়া হচ্ছে৷’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক আইওয়া নির্বাচনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে কোনো ক্রমে ভগ্নাংশের শতাংশে স্যান্ডার্সের থেকে এগিয়ে ছিলেন হিলারি৷ তাই পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বাছাই নির্বাচনের আগে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে বিখ্যাত পতিদেবকে মাঠে নামাতে বাধ্য হলেন হিলারি৷