ঢাকা ০৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকার পালে শরিকেরা হাওয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৯:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৩৫১ বার

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্তর্ভুক্ত হলেও নির্বাচনী গ্যাঁড়াকলে পড়ে মহাজোটের শরিক বাম সংগঠনগুলো প্রায় বিলিনের পথে। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আর স্থানীয় নির্বাচনে আলাদা নির্বাচন করে বাম দলগুলোর নিজস্বতা দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও বাম নেতারা এখন আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলছেন। যেন আওয়ামী লীগের নৌকার পালে বাম দলগুলোর লাল পতাকা অনেকটাই হাওয়া হয়ে যাওয়া।

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় মহাজোটের বাম ঘরানার শরিক দলগুলো। ওই জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে অংশ নিলেও ফলাফলে শরিকদের অবস্থা ছিল ভরাডুবি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও শরিকরা আওয়ামী লীগের ছঁকেই অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়জয়কার ফলাফলে ফুরফুরে হয়ে ওঠে মহাজোটের বামপন্থি নেতারা। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে একাধিক বাম নেতা আলোচনা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন।

এসময় দলের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। জোটের বাইরে থাকা অন্যান্য বাম দলগুলো ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও জোটে থাকা ওয়ার্কাস পার্টি বা জাসদের মতো শরিকেরা ওই নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কাছে জোটগতভাবে নির্বাচনের আহ্বান জানায় অন্যান্য শরিকরা। এ নিয়ে জোটের মধ্যে একাধিকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব এককভাবে স্থানীয় নির্বাচনে লড়ার পক্ষে অবস্থান নেয় বলে শরিকদের আহ্বান গুরুত্ব পায়নি।

এ নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের অনেকেই নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ করলেও, তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। পৌরসভায় দর কষাকষিতে হালে পানি না পেয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদসহ জোটের কয়েকটি শরিক দল। বেশ কয়েকটি পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিলেও একটিতেও জিততে পারেনি শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা।

ভরাডুবি হয় সর্বত্রই। শরিকেরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কারচুপি, জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও, তা ছিল প্রায় ধামাচাপা। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও মিডিয়ার সামনে টু শব্দটি করেনি হেরে যাওয়া বাম দলের প্রার্থীরা।

পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এককভাবে লড়ছে আওয়ামী লীগ। শরিকরা জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তাব দিলেও আওয়ামী লীগ তা ফিরিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূল রাজনীতিতেও একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে শরিকদের এড়িয়ে চলতে চাইছে।

ভোট আর মাঠে উভয়তেই ধরা মহাজোটের শরিকরা। জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফলাফল ভালো করলেও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নীতিতেই সিদ্ধান্ত মানতে হচ্ছে তাদের। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সংসদ আলোচনায় তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো ইস্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ দুই একজন আওয়ামী লীগের নীতির বিরোধিতা করলেও এখন তাও করেন না। এতে জোটের মধ্যে থাকা বাম দলগুলোর ভেতর-বাহির আওয়ামী লীগের মোড়কেই ঢাকা পড়ছে।

অন্যদিকে, স্থানীয় রাজনীতিতেও আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে ধরাশায়ী বাম সংগঠনগুলো। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গ না পেয়ে ভোটে অনেকটাই কোণঠাসা তারা।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ থাকলেও বামদলের প্রার্থীরা মুখ খুলতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত মোকাবেলায় অনেকেই আওয়ামী লীগের হয়ে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ বলতেও বাধ্য হয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মহাজোট গঠন করেছি। আমাদের রাজনীতির নিজস্ব আদর্শ আছে, কাঠামো আছে। জোটে থাকলেও আমরা সেই আদর্শ থেকে সরে আসিনি।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও জোটগতভাবে অংশ নেই। আওয়ামী লীগ সাড়া দেয়নি। তবে আমরা এককভাবেই অংশ নিচ্ছি এবং দলের কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছি। সামনে কাউন্সিল। এর মধ্য দিয়ে দলের কার্যক্রম আরও চাঙা হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, মহাজোট গঠন করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে। আমরা লক্ষ্য পূরণেই এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে তফাত রয়েছে। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অবস্থান তৈরি করবে, এটিই একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সৌন্দর্য্য। শরিক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচনে নিজেদের জনপ্রিয়তা তৈরি করার আলাদা সুযোগ পাচ্ছে। সেই সুযোগের ব্যবহার করতে না পারলে, এর দায় অন্যের উপরে বর্তানো যায় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নৌকার পালে শরিকেরা হাওয়া

আপডেট টাইম : ১১:০৯:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্তর্ভুক্ত হলেও নির্বাচনী গ্যাঁড়াকলে পড়ে মহাজোটের শরিক বাম সংগঠনগুলো প্রায় বিলিনের পথে। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আর স্থানীয় নির্বাচনে আলাদা নির্বাচন করে বাম দলগুলোর নিজস্বতা দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও বাম নেতারা এখন আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলছেন। যেন আওয়ামী লীগের নৌকার পালে বাম দলগুলোর লাল পতাকা অনেকটাই হাওয়া হয়ে যাওয়া।

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় মহাজোটের বাম ঘরানার শরিক দলগুলো। ওই জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে অংশ নিলেও ফলাফলে শরিকদের অবস্থা ছিল ভরাডুবি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও শরিকরা আওয়ামী লীগের ছঁকেই অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়জয়কার ফলাফলে ফুরফুরে হয়ে ওঠে মহাজোটের বামপন্থি নেতারা। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে একাধিক বাম নেতা আলোচনা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন।

এসময় দলের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। জোটের বাইরে থাকা অন্যান্য বাম দলগুলো ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও জোটে থাকা ওয়ার্কাস পার্টি বা জাসদের মতো শরিকেরা ওই নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কাছে জোটগতভাবে নির্বাচনের আহ্বান জানায় অন্যান্য শরিকরা। এ নিয়ে জোটের মধ্যে একাধিকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব এককভাবে স্থানীয় নির্বাচনে লড়ার পক্ষে অবস্থান নেয় বলে শরিকদের আহ্বান গুরুত্ব পায়নি।

এ নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের অনেকেই নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ করলেও, তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। পৌরসভায় দর কষাকষিতে হালে পানি না পেয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদসহ জোটের কয়েকটি শরিক দল। বেশ কয়েকটি পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিলেও একটিতেও জিততে পারেনি শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা।

ভরাডুবি হয় সর্বত্রই। শরিকেরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কারচুপি, জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও, তা ছিল প্রায় ধামাচাপা। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও মিডিয়ার সামনে টু শব্দটি করেনি হেরে যাওয়া বাম দলের প্রার্থীরা।

পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এককভাবে লড়ছে আওয়ামী লীগ। শরিকরা জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তাব দিলেও আওয়ামী লীগ তা ফিরিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূল রাজনীতিতেও একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে শরিকদের এড়িয়ে চলতে চাইছে।

ভোট আর মাঠে উভয়তেই ধরা মহাজোটের শরিকরা। জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফলাফল ভালো করলেও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নীতিতেই সিদ্ধান্ত মানতে হচ্ছে তাদের। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সংসদ আলোচনায় তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো ইস্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ দুই একজন আওয়ামী লীগের নীতির বিরোধিতা করলেও এখন তাও করেন না। এতে জোটের মধ্যে থাকা বাম দলগুলোর ভেতর-বাহির আওয়ামী লীগের মোড়কেই ঢাকা পড়ছে।

অন্যদিকে, স্থানীয় রাজনীতিতেও আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে ধরাশায়ী বাম সংগঠনগুলো। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গ না পেয়ে ভোটে অনেকটাই কোণঠাসা তারা।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ থাকলেও বামদলের প্রার্থীরা মুখ খুলতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত মোকাবেলায় অনেকেই আওয়ামী লীগের হয়ে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ বলতেও বাধ্য হয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মহাজোট গঠন করেছি। আমাদের রাজনীতির নিজস্ব আদর্শ আছে, কাঠামো আছে। জোটে থাকলেও আমরা সেই আদর্শ থেকে সরে আসিনি।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও জোটগতভাবে অংশ নেই। আওয়ামী লীগ সাড়া দেয়নি। তবে আমরা এককভাবেই অংশ নিচ্ছি এবং দলের কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছি। সামনে কাউন্সিল। এর মধ্য দিয়ে দলের কার্যক্রম আরও চাঙা হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, মহাজোট গঠন করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে। আমরা লক্ষ্য পূরণেই এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে তফাত রয়েছে। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অবস্থান তৈরি করবে, এটিই একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সৌন্দর্য্য। শরিক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচনে নিজেদের জনপ্রিয়তা তৈরি করার আলাদা সুযোগ পাচ্ছে। সেই সুযোগের ব্যবহার করতে না পারলে, এর দায় অন্যের উপরে বর্তানো যায় না।