ঢাকা ০৯:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যানসার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩২:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এবার বিশ্ব ক্যানসার দিবসের স্লোগান ছিল ‘I am & I will’, অর্থাৎ আমি আছি এবং আমি থাকব। এর অর্থ আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের মধ্যে ক্যানসারের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রতি মিনিটে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন ১৭ জন মানুষ।

যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনই গড়ে তুলতে না পারলে এর সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হারে বাড়বে। কোলন (অন্ত্রতন্ত্র) ক্যানসারের অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থাৎ ফুসফুস ক্যানসারের পরই এর অবস্থান পুরুষের ক্ষেত্রে। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের পরই কোলন ক্যানসারের অবস্থান।

শরীরের যে কোনো স্থানে যখন কোষগুলো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে পিণ্ড সৃষ্টি করে, তখন তাকে ক্যানসার বলা হয়। ক্যানসারের সুপ্ত কাল ৩০-৫০ বছর। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি অতি মূল্যবান উক্তি আছে : ‘শুরুতে পড়লে ধরা, ক্যানসার রোগ যায় যে সারা’। শরীরে ক্যানসার হলেই যে উপসর্গ শুরু হবে তা কিন্তু না; উপসর্গ শুরু হলে তখন চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের দেশে ক্যানসার গবেষণায় আজও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আমেরিকায় প্রতি বছর ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৫০ হাজারের মতো অকালে প্রাণ হারায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সেদেশে প্রতি ২৩ জনে একজন পুরুষ এবং ২৫ জনে একজন মহিলা কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। কোলন ক্যানসার এবং রেকটাল (মলাশয়) ক্যানসারকে একই সূত্রে গাঁথা ধরা হয়। উপসর্গের মধ্যে খুব বেশি তফাত পাওয়া যায় না।

চিকিৎসাশাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে সত্য; কিন্তু ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আজও খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ক্যানসার চিকিৎসার সফলতা নির্ভর করে কোথায় ক্যানসার হয়েছে তার ওপর। বিপত্তি হচ্ছে, ক্যানসার যদি বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তখন তার চিকিৎসা করা এক কথায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা বছরের পর বছর নীরব থাকতে পারে, আবার স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ক্যানসার শরীরের যে কোনো স্থানে হতে পারে, যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারে রক্ত এবং লোসিকার মাধ্যমে। ক্যানসার যেখানে প্রথম শুরু হয় সেটিকে বলা হয় প্রাইমারি সাইট, আর সেখান থেকে অন্য যেখানে চলে যায় সেটিকে বলা হয় সেকেন্ডারি সাইট।

কোলন ক্যানসারের সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি, তবে বেশকিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে-১. বয়স যত বেশি হবে, ঝুঁকি তত বাড়বে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ৪৫ বছরের পর। ২. আফ্রিকান ও আমেরিকানদের কোলন ক্যানসার অন্যদের তুলনায় বেশি হয়। ৩. যদি কারও কোলনে পলিপ থাকে, সেখান থেকে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

৪. বংশগত প্রভাব অর্থাৎ যাদের পরিবারে ক্যানসার আছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি বেশি থাকে। ৫. যারা শাকসবজি, ফলমূল কম খায়; লাল মাংস, ফাস্টফুড, চর্বিদার খাদ্য বেশি খায়। ৬. যারা অকর্মণ্য জীবনযাপন করে। ৭. ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিস যেমন-আলসারেটিক কলাইটিস, ক্রন্স ডিজিজ উল্লেখযোগ্য। ৮. রোগগ্রস্ত মোটা। খাদ্য, ধূমপান, মদ্যপান এবং পারিবারিক কারণ-এ চারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।

উপসর্গ : পেট সবসময় ভার ভার অনুভূত হবে, পেটে কামড় দিয়ে ব্যথা করতে পারে। পেটে গ্যাস বেশি হবে। পায়খানার বেগ নিয়মিত হবে, তবে সবসময় পায়খানা নাও হতে পারে। শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হবে। হঠাৎ করেই ওজন দ্রুত কমতে থাকবে। দীর্ঘমেয়াদি অল্প অল্প করে রক্তক্ষরণ হলে শরীরে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। রক্তশূন্যতা বেশি হলে বুক ব্যথা, বুকের মধ্যে অস্থিরতা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে।

ডা. রফিক আহমেদ : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; বক্ষব্যাধি বিশেষেজ্ঞ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্যানসার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

আপডেট টাইম : ১০:৩২:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এবার বিশ্ব ক্যানসার দিবসের স্লোগান ছিল ‘I am & I will’, অর্থাৎ আমি আছি এবং আমি থাকব। এর অর্থ আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের মধ্যে ক্যানসারের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রতি মিনিটে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন ১৭ জন মানুষ।

যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনই গড়ে তুলতে না পারলে এর সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হারে বাড়বে। কোলন (অন্ত্রতন্ত্র) ক্যানসারের অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থাৎ ফুসফুস ক্যানসারের পরই এর অবস্থান পুরুষের ক্ষেত্রে। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসারের পরই কোলন ক্যানসারের অবস্থান।

শরীরের যে কোনো স্থানে যখন কোষগুলো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে পিণ্ড সৃষ্টি করে, তখন তাকে ক্যানসার বলা হয়। ক্যানসারের সুপ্ত কাল ৩০-৫০ বছর। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি অতি মূল্যবান উক্তি আছে : ‘শুরুতে পড়লে ধরা, ক্যানসার রোগ যায় যে সারা’। শরীরে ক্যানসার হলেই যে উপসর্গ শুরু হবে তা কিন্তু না; উপসর্গ শুরু হলে তখন চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের দেশে ক্যানসার গবেষণায় আজও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আমেরিকায় প্রতি বছর ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৫০ হাজারের মতো অকালে প্রাণ হারায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সেদেশে প্রতি ২৩ জনে একজন পুরুষ এবং ২৫ জনে একজন মহিলা কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। কোলন ক্যানসার এবং রেকটাল (মলাশয়) ক্যানসারকে একই সূত্রে গাঁথা ধরা হয়। উপসর্গের মধ্যে খুব বেশি তফাত পাওয়া যায় না।

চিকিৎসাশাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে সত্য; কিন্তু ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আজও খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ক্যানসার চিকিৎসার সফলতা নির্ভর করে কোথায় ক্যানসার হয়েছে তার ওপর। বিপত্তি হচ্ছে, ক্যানসার যদি বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তখন তার চিকিৎসা করা এক কথায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা বছরের পর বছর নীরব থাকতে পারে, আবার স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ক্যানসার শরীরের যে কোনো স্থানে হতে পারে, যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারে রক্ত এবং লোসিকার মাধ্যমে। ক্যানসার যেখানে প্রথম শুরু হয় সেটিকে বলা হয় প্রাইমারি সাইট, আর সেখান থেকে অন্য যেখানে চলে যায় সেটিকে বলা হয় সেকেন্ডারি সাইট।

কোলন ক্যানসারের সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি, তবে বেশকিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে-১. বয়স যত বেশি হবে, ঝুঁকি তত বাড়বে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ৪৫ বছরের পর। ২. আফ্রিকান ও আমেরিকানদের কোলন ক্যানসার অন্যদের তুলনায় বেশি হয়। ৩. যদি কারও কোলনে পলিপ থাকে, সেখান থেকে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

৪. বংশগত প্রভাব অর্থাৎ যাদের পরিবারে ক্যানসার আছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি বেশি থাকে। ৫. যারা শাকসবজি, ফলমূল কম খায়; লাল মাংস, ফাস্টফুড, চর্বিদার খাদ্য বেশি খায়। ৬. যারা অকর্মণ্য জীবনযাপন করে। ৭. ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিস যেমন-আলসারেটিক কলাইটিস, ক্রন্স ডিজিজ উল্লেখযোগ্য। ৮. রোগগ্রস্ত মোটা। খাদ্য, ধূমপান, মদ্যপান এবং পারিবারিক কারণ-এ চারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।

উপসর্গ : পেট সবসময় ভার ভার অনুভূত হবে, পেটে কামড় দিয়ে ব্যথা করতে পারে। পেটে গ্যাস বেশি হবে। পায়খানার বেগ নিয়মিত হবে, তবে সবসময় পায়খানা নাও হতে পারে। শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হবে। হঠাৎ করেই ওজন দ্রুত কমতে থাকবে। দীর্ঘমেয়াদি অল্প অল্প করে রক্তক্ষরণ হলে শরীরে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। রক্তশূন্যতা বেশি হলে বুক ব্যথা, বুকের মধ্যে অস্থিরতা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে।

ডা. রফিক আহমেদ : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; বক্ষব্যাধি বিশেষেজ্ঞ