হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণাই নেই যে শিশুদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। অনেকের ধারণা শুধু বড়দেরই ডায়াবেটিস হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ১৭ হাজার শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ টাইপ-১ এবং ২০ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বশেষ ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডায়াবেটিস নিয়ে যত শিশু এসেছে, তার শতকরা ২০ ভাগ শিশু টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যা গত ২০ বছর আগে আমাদের জানা ছিল না। তবে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, কেবল ৭ হাজার ৮০০ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর তালিকা আছে। যাদের বয়স শূন্য থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত। প্রতি বছর নতুন করে যোগ হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ শিশু।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস কেন হচ্ছে, এর সঠিক কোনো কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় হয়নি। তবে বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ক্ষেত্রে এটির জন্য জিনকে দায়ী করা হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশগত কারণ ও ভাইরাসের সংক্রমণকেও দায়ী করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর জন্মের পর প্রথম তিন মাস বুকের দুধের পরিবর্তে গরুর দুধ খাওয়ালে, সেসব শিশুর টাইপ-১ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আছে। যদি দ্রুত আমরা শিশুর টাইপ-১ ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে না পারি, তাহলে শিশুর শ্বাসকষ্ট শুরু হবে এবং মৃত্যুও হতে পারে। অথচ শুধু ইনসুলিন শুরু করলেই সেই ভয়াবহ বিপদ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে পারি।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, শিশু যদি বারবার পানি পান করে এবং প্রস্রাব করতে থাকে অথবা অল্প সময়ে হঠাৎ করে ওজন কমে যায়। সেটা শিশুর এক বছর পর থেকে যে কোনো সময় দেখা দিতে পারে। তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবার আগে জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা যায়। এজন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত বাচ্চার এক দিনও ইনসুলিন ছাড়া সুস্থ থাকা সম্ভব না। কিন্তু বেশির ভাগ শিশু স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে আসছে। যাদের পক্ষে এই শিশুদের ব্যয়ভার বহন করা কঠিন। তাদের জীবনে শুধু ইনসুলিন নয়, এর পাশাপাশি প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। দিনে তিন থেকে চার বার ইনসুলিন নিতে হয়, তিন থেকে চার বার রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করাতে হয়, এটা ব্যয়বহুল। এর পাশাপাশি চার থেকে পাঁচ বার পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারও তাদের দিতে হয়।
বাডাসের চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর ডা. বেদৌরা জাবীন ইত্তেফাককে বলেন, ছোটদের যে ডায়াবেটিস হয়, সেটা বড়দের থেকে ভিন্ন। শিশুদের হয় টাইপ-১ ডায়াবেটিস। আর বড়দের হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে শিশুদের শরীরে রক্তকে নিয়ন্ত্রণ করে ‘ইনসুলিন’ নামক যে হরমোন, সেটা তৈরি হয় না।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে ডা. বেদৌরা বলেন, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসও বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। দুটি ডোনার গ্রুপের মাধ্যমে শতকরা ৯০ শতাংশ ইনসুলিন শিশুদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। কোভিডের সময় আমরা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে রোগী দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, শুনছি মুজিব শতবর্ষে সরকার টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে ইনসুলিন সরবরাহ করবে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। পরিবারে যদি বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস থাকে, তবে তাদের সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই অতিরিক্ত ওজন, ফাস্টফুড খাওয়া এবং অলস জীবনযাপন করা থেকে বিরত রাখতে হবে। মায়েদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে সেসব শিশুর টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।