দুই হাত নেই, তবুও মিরাজুল জীবনযুদ্ধে জয়ী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষ কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর মনোবল দিয়েই পৃথিবী জয় করেছে। এর অনেক প্রমাণ আমাদের সমাজে রয়েছে। কেউ জন্মগতভাবে কিংবা দুর্ঘটনাজনিতভাবে অনেকেই শরীরের একটি অঙ্গ হারিয়ে জয় করেছেন পৃথিবী।

স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করেন। এমন অনেকের কথাই তো জেনেছেন। আজ এমন একজন অদম্য মনোবলের মানুষের কথা জানাবো যিনি মনের জোড়েই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জয় করেছেন পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মিরাজুল ইসলাম।

মিরাজুল ইসলাম পা দিয়ে ব্রাশ করে

মিরাজুল ইসলাম পা দিয়ে ব্রাশ করে

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় মিরাজুল ইসলামের। তিন ভাইবোনের মধ্যে ছোট মিরাজুল ইসলাম। মিরাজের দুই হাত নেই জন্ম থেকেই। হাত না থাকার পরও জীবনযুদ্ধে থেমে নেই মিরাজ। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মাই টিভির ‘আমরাও পারি’ নামের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।

মিরাজের বাবার নাম তোরাব আলী ও মায়ের নাম সূর্য্য খাতুন জানান, আমাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে, তাদের মধ্যে ছোট ছেলেটার জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। বিকলাঙ্গ হওয়ায় মিরাজকে অবহেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি তাকে স্কুলেও ভর্তি করাতে রাজি ছিলেন না শিক্ষকরা। তারপর তার বোন বাসের কাঠি বানিয়ে দেন, পা দিয়ে মাটিতে লেখতে।

মিরাজুর ইসলাম পা দিয়ে খাবার খায়

মিরাজুর ইসলাম পা দিয়ে খাবার খায়

প্রথম প্রথম পারতো না লেখতে, আস্তে আস্তে মাটিতে লেখা শেখেন মিরাজুল। মাটিতে লেখতে পারলেও কাগজে লিখতে পারতোনা। অনেক চেষ্টার পর কাগজে লেখা শেখেন মিরাজুল। পরবর্তীতে পা দিয়ে লিখে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে স্কুলে ভর্তি হোন তিনি। দুটি হাত না থাকা সত্যেও পা দিয়ে সব ধরনের কাজ করতে পারেন তিনি।

হাত নেই বলে গ্রামের অনেকেই তার জন্মকে বৃথা বলে উপহাস করেছিল। তবে সেই মিরাজ তার মনের প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। তিনি আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ‘এ’ গ্রেড নিয়ে এসএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি পাবনা জেলার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

মিরাজুল ইসলাম পা দিয়ে ধরে মোবাইলে কথা বলে

মিরাজুল ইসলাম পা দিয়ে ধরে মোবাইলে কথা বলে

মিরাজ জানান, কাউকে কখনো ছোট করে দেখবেন না, মানুষ চেষ্টা করলে সব কিছুই করতে পারে। কেউ ইচ্ছা করে প্রতিবন্ধী হয় না, সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের সমাজে এই মিরাজের মতো অনেকেই আছে যাদেরকে আমরা অবহেলা করি, কিন্তু এদের দরকার একটু সহানুভূতি আর ভালোবাসা। তাহলেই তারা অনুপ্রাণিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর