ঢাকা ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে হয়রানির শিকার শিক্ষকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৩০৪ বার

অবসরপ্রাপ্ত ২৭ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা তুলতে হন্য হয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। দীর্ঘ চাকরি জীবনে যে এমপিও পেয়েছেন, সেখান থেকে এই তহবিলের জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অর্থ সংকটের কারণে নিজেদের জমা করা অর্থই এখন পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই অর্থ সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। কেউ কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর পলাশী এলাকায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যালয়ে গত এক সপ্তাহ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোগান্তির শিকার শত শত শিক্ষকের ভিড়। তাদের কেউ কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা। কেউ বয়সজনিত নানা রোগশোকে আক্রান্ত। শেষ বয়সে উপার্জন বন্ধ হওয়ায় এসব শিক্ষকের অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারেও দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষক আবেদন করে টাকার জন্য ঘুরে বেড়ালেও কল্যাণ ফাণ্ডের আর্থিক সুবিধা তারা পাচ্ছেন না।

কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থ সংকটই হাজার হাজার শিক্ষকের দুর্ভোগের কারণ। যে সংখ্যক শিক্ষক আবেদন করেন, তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য সেই পরিমাণ অর্থ নেই। ফলে আবেদনের পর শিক্ষকদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে টাকার অপেক্ষায় থেকে থেকে মারাও গেছেন। এ সংকট মেটাতে হলে ৫শ’ কোটি টাকা লাগবে। আর পে স্কেল বাস্তবায়নের পর এ চাহিদা দ্বিগুন বেড়ে যাবে। কল্যাণ ট্রাস্ট এখন ২০১৩ সালের মে মাসের আবেদন নিষ্পত্তি করছে। এখানে জট আছে প্রায় আড়াই বছরের, যা বেড়ে হবে ৫ বছর। অর্থাৎ একজন শিক্ষককে আবেদনের পর কল্যাণ সুবিধার জন্য ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ২ শতাংশ হারে চাঁদা আদায় হয় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। আর প্রতি মাসে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পরিশোধ করতে হয় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতি মাসে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি। আবার নতুন পে-স্কেল যখন কার্যকর হবে তখন তখন চাহিদা ঘাটতি দ্বিগুন হয়ে যাবে।

সংকটের কারণ হিসেবে তারা বলেন, ১৯৯০ সালে আইন হওয়ার পরে ৯১ সালে কল্যাণ ট্রাষ্ট চালু হয়। ৬ মাস চলার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাষ্ট বন্ধ থাকায় এসময় চাঁদা আদায় বন্ধ ছিলো। এই সময় চাঁদা আদায় বন্ধ না হলে আরও অন্তত ৪ থেকে ৫শ’ কোটি টাকা আদায় হতো। কল্যাণ ট্রাস্ট আইনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে এককালীন ৫ টাকা আদায় করার বিধান ছিল। ২০০৪ সালে সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল এই ১২ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলে আরও ২শ’ কোটি টাকা আদায় করা হতো। বিএনপি সরকারের এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান সাজু বলেন, ২০১০ সালে বোর্ডের সভায় শিক্ষকদের এমপিও থেকে ২ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ করে নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বার্ষিক ২০ টাকা করে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। এ দু’টি সুপারিশ কার্যকরের সঙ্গে সরকার এখানে বরাদ্দ দিলে ভবিষ্যতে এ সংকট থাকবে না। সংকট সমাধানের জন্য শিক্ষামন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন। অর্থের সংস্থান করা গেলে সবার মুখে হাসি ফোটানো যাবে। তবে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা, হজ বা তীর্থযাত্রী, গুরুতর অসুস্থ ও মৃত ব্যক্তির পক্ষে আবেদনকারীদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধ করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে হয়রানির শিকার শিক্ষকরা

আপডেট টাইম : ১১:৫২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

অবসরপ্রাপ্ত ২৭ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা তুলতে হন্য হয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। দীর্ঘ চাকরি জীবনে যে এমপিও পেয়েছেন, সেখান থেকে এই তহবিলের জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অর্থ সংকটের কারণে নিজেদের জমা করা অর্থই এখন পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই অর্থ সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। কেউ কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর পলাশী এলাকায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যালয়ে গত এক সপ্তাহ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোগান্তির শিকার শত শত শিক্ষকের ভিড়। তাদের কেউ কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা। কেউ বয়সজনিত নানা রোগশোকে আক্রান্ত। শেষ বয়সে উপার্জন বন্ধ হওয়ায় এসব শিক্ষকের অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারেও দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষক আবেদন করে টাকার জন্য ঘুরে বেড়ালেও কল্যাণ ফাণ্ডের আর্থিক সুবিধা তারা পাচ্ছেন না।

কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থ সংকটই হাজার হাজার শিক্ষকের দুর্ভোগের কারণ। যে সংখ্যক শিক্ষক আবেদন করেন, তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য সেই পরিমাণ অর্থ নেই। ফলে আবেদনের পর শিক্ষকদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে টাকার অপেক্ষায় থেকে থেকে মারাও গেছেন। এ সংকট মেটাতে হলে ৫শ’ কোটি টাকা লাগবে। আর পে স্কেল বাস্তবায়নের পর এ চাহিদা দ্বিগুন বেড়ে যাবে। কল্যাণ ট্রাস্ট এখন ২০১৩ সালের মে মাসের আবেদন নিষ্পত্তি করছে। এখানে জট আছে প্রায় আড়াই বছরের, যা বেড়ে হবে ৫ বছর। অর্থাৎ একজন শিক্ষককে আবেদনের পর কল্যাণ সুবিধার জন্য ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ২ শতাংশ হারে চাঁদা আদায় হয় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। আর প্রতি মাসে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পরিশোধ করতে হয় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতি মাসে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি। আবার নতুন পে-স্কেল যখন কার্যকর হবে তখন তখন চাহিদা ঘাটতি দ্বিগুন হয়ে যাবে।

সংকটের কারণ হিসেবে তারা বলেন, ১৯৯০ সালে আইন হওয়ার পরে ৯১ সালে কল্যাণ ট্রাষ্ট চালু হয়। ৬ মাস চলার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাষ্ট বন্ধ থাকায় এসময় চাঁদা আদায় বন্ধ ছিলো। এই সময় চাঁদা আদায় বন্ধ না হলে আরও অন্তত ৪ থেকে ৫শ’ কোটি টাকা আদায় হতো। কল্যাণ ট্রাস্ট আইনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে এককালীন ৫ টাকা আদায় করার বিধান ছিল। ২০০৪ সালে সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল এই ১২ বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলে আরও ২শ’ কোটি টাকা আদায় করা হতো। বিএনপি সরকারের এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান সাজু বলেন, ২০১০ সালে বোর্ডের সভায় শিক্ষকদের এমপিও থেকে ২ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ করে নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বার্ষিক ২০ টাকা করে নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। এ দু’টি সুপারিশ কার্যকরের সঙ্গে সরকার এখানে বরাদ্দ দিলে ভবিষ্যতে এ সংকট থাকবে না। সংকট সমাধানের জন্য শিক্ষামন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন। অর্থের সংস্থান করা গেলে সবার মুখে হাসি ফোটানো যাবে। তবে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা, হজ বা তীর্থযাত্রী, গুরুতর অসুস্থ ও মৃত ব্যক্তির পক্ষে আবেদনকারীদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধ করা হয়।