রাজধানীর উত্তরায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৭২টি ফ্ল্যাট নির্মাণে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার সচিবালয়ে এ ফ্ল্যাট নির্মাণসহ ১২টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে মোট ১২টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকার উত্তরার ১৮নং সেক্টরে ‘স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ-ডি-এর আওতায় একটি বেসমেন্টসহ ১৬ তলা বিশিষ্ট ৮টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক হাজার ২৫০ ফুট আয়তনের ‘এ’ টাইপের এই ৮টি ভবনে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা হচ্ছে ৬৭২টি।’
তিনি জানান- ৪, ৫ ও ৬ এ তিনটি গ্রুপে ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে গ্রুপ ৪-এর আওতায় চারটি ভবন যৌথভাবে নির্মাণ করবে এআরকে-এমবিপি। চারটি ভবনে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা হচ্ছে ৩৩৬টি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা।
গ্রুপ ৫-এর আওতায় দুটি ভবন নির্মাণ করবে নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। দুটি ভবনে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা হচ্ছে ১৮০টি। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
গ্রুপ ৬-এর আওতায় দুটি ভবন নির্মাণ করবে এআরকে-এমবিপি। দুটি ভবনে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা হচ্ছে ১৮০টি। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৯ কোটি চার লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ‘ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে চালাকচর পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ ডব্লিউডি-৪ (লট বি) পাবনা-ধলারচর সেকশনের ২৫+০০০ কিলোমিটার থেকে ৭৮+৮০০ কিলোমিটার রেল সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি পেয়েছে পিবিএএল-এসি। এতে ব্যয় হবে ১৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
রাজধানীর তেজগাঁও-এ রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগের প্রধান কার্যালয় নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে যৌথভাবে ‘প্রতিভা কনস্ট্রাকশন’ ও ‘নাভানা কনস্ট্রাকশন’। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
তিনি জানান, ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে সারফেস ড্রেনসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটি প্যাকেজে এ কাজটি করা হবে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১১ (লট-০১)-এর কাজটি পেয়েছে মেসার্স আতাউর রহমান। এতে ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে প্যাকেজ-১৭ (লট-০২)-এর কাজটি পেয়েছে এমপিসি-আরবিএম। এতে ব্যয় হবে ১৫ কোটি চার লাখ টাকা।
এ ছাড়া উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (তৃতীয় পর্ব) প্রকল্পের ৬ নং ব্রিজের অবশিষ্ট নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ কাজটি পেয়েছে কাজী এন্টারপ্রাইজ। এতে ব্যয় হবে ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
তিনি বলেন,বৈঠকে বাস্তবায়নাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি প্যাকেজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর চারটি প্যাকেজে নির্মাণ ব্যয় মোট ১৫১ কোটি ৮১ লাখ টাকা বাড়ছে ও দুটিতে মোট কমছে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
প্যাকেজগুলো হচ্ছে প্যাকেজ-০১-এর আওতায় দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে কুটুম্বপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়ক; প্যাকেজ-০২-এর আওতায় কুটুম্বপুর থেকে কুমিল্লা বাইপাসের শুরু পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক; প্যাকেজ-০৪-এর আওতায় কুমিল্লা বাইপাসের শেষ থেকে বাতিশা বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক; প্যাকেজ-০৮-এর আওতায় মিরসরাই বাজার থেকে পঞ্চশিলা বাজার পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক ও প্যাকেজ-০৯-এর আওতায় পঞ্চশিলা বাজার থেকে কুমিল্লা বাইপাসের শেষ পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার সড়কের ভেরিয়েশন অর্ডার-১ এবং প্যাকেজ-১০-এর আওতায় কুমিল্লা বাইপাসের শেষ প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেইট পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন অর্ডার-২ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে প্যাকেজ-০১-এর কাজের জন্য ব্যয় বাড়ছে ৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা (মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা); প্যাকেজ-০২-এর কাজে ব্যয় কমছে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা (মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা); প্যাকেজ-০৪-এর কাজের জন্য ব্যয় বাড়ছে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা (মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৮ লাখ টাকা); প্যাকেজ-০৮-এর কাজে ব্যয় কমছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা (মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬১ কোটি ১৫ লাখ টাকা); প্যাকেজ-০৯-এর কাজের জন্য ব্যয় বাড়ছে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা (মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা) এবং প্যাকেজ-১০-এর কাজের জন্য ব্যয় বাড়ছে ৬৩ কোটি ৭ লাখ টাকা (মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা)।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং-এর জন্য চুক্তিপত্রভুক্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুযায়ী এ কাজে ব্যয় বাড়ছে ২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। মূল প্রস্তাবে এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে তিনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পিপিপি’র আওতায় কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক স্থাপনে ব্লক-২ ও ব্লক-৫-এর জন্য এসআইএমসিএল-ইনফিনিটি-এর সঙ্গে সম্পাদিতব্য চুক্তির পুনঃসংশোধিত কনসেশন এগ্রিমেন্ট অনুমোদন; কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক স্থাপনে ব্লক-৩-এর জন্য ‘ফাইবার হোম লিমিটেড’- ‘টেকনোলজি পার্ক মালয়েশিয়া করপোরেশন এসডিএন বিএইচডি’-‘আইরিস করপোরেশন বেরহাদ’-এমএসসি টেকনোলজি সেন্টার এসডিএন বিএইচডি’-‘আলফা ইনফরমেটিকস লিমিটেড’-এর সঙ্গে পিপিপি’র আওতায় সম্পাদিতব্য চুক্তি অনুমোদন এবং ‘চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স’-কে বেসরকারিকরণের তালিকা থেকে অবমুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।