মায়ের দুধ যে শিশুর শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য অতুলনীয় এ কথা কে না জানে। এ কথা শুনলে অনেকেই অবাক হবেন যে, দীর্ঘদিন ধরে যে মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান, তারা বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩০ হাজার কোটি (৩০০ বিলিয়ন ডলার) ডলার বাঁচাচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চিকিৎসা-বিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রবন্ধে এমনটা জানা যায়।
এএফপির খবরে জানানো হয়, দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ জার্নাল পরিচালিত জরিপ বলছে, মায়ের বুকের দুধ পান করলে আট লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু রোধ করা যায়। আর প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে ২০ হাজার মায়ের মৃত্যু রোধ করা যায়।
গবেষণার অন্যতম গবেষক ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব পেলোতাসের ইমেরিটাস অধ্যাপক চেজার ভিক্টোরিয়া বলেন, ধনী, দরিদ্র সব দেশে মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে টাকা ও জীবন দুটিই বাঁচানো সম্ভব।
গবেষণায় ১ হাজার ৩০০টির বেশি গবেষণাপত্র পর্যালোচনায় নেওয়া হয়েছে। ২৮ ধরনের বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মায়ের বুকের দুধ পান করলে সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভবান হওয়া যায়।
মাতৃদুগ্ধ পান না করালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
২০১২ সালে মাতৃদুগ্ধ কম পান করানো ও শিশুর বিকল্প খাদ্যের ব্যবহার বেশি হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩০ হাজার কোটি ডলার বেশি ব্যয় হয়েছে।
জরিপ ও গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ব্রাজিলে ৯০ শতাংশ শিশু ছয় মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করে। ব্রিটেনে ৪৫ শতাংশ শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করে।
মাতৃদুগ্ধ পান করলে শিশুরা ফুসফুসের প্রদাহ, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ থেকে রক্ষা পায়। এতে চিকিৎসার খরচ বাঁচে।
যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে ২০০ কোটির বেশি, ব্রিটেনে ২ কোটি ৯০ লাখ, চীনে ২০ কোটি ও ব্রাজিলে ৬০ লাখ ডলার খরচ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
ধনী দেশগুলোতে প্রতি পাঁচজনে একজন মা ১২ মাস ধরে সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করান। নিম্ন আয়ের দেশে তিনজনে একজন ও মধ্য আয়ের দেশে প্রথম ছয় মাস সন্তানদের মাতৃদুগ্ধ পান করানো হয়।
ব্রিটেনে এক বছর বয়স পর্যন্ত ১ শতাংশ শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো হয়। আয়ারল্যান্ডে ২ শতাংশ আর ডেনমার্কে ৩ শতাংশ শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো হয়।
মাতৃদুগ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি উপযুক্ত পরিবেশ, পরিস্থিতি তৈরির কথা বলেছেন গবেষকেরা। ল্যানসেট এটিকে বিনিয়োগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিকল্প শিশু খাদ্যের বাজার যেভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে ও প্রচার চালাচ্ছে, সেখানে মায়েদের মাতৃদুগ্ধ পান করানোর মতো উপযুক্ত পরিবেশ ও সুবিধা দিতে না পারলে এটি হারিয়ে যেতে পারে।
এই সুবিধার মধ্যে রয়েছে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানো, কর্মস্থলে মাতৃদুগ্ধ পানের ব্যবস্থা রাখা, জনসমক্ষে মাতৃদুগ্ধ পানের ব্যবস্থা রাখা প্রভৃতি।