ঢাকা ০৯:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক চাপে ত্বকের ১২ ক্ষতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৬৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত কাজের চাপ। দীর্ঘসময় মানসিক চাপে থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষণা অনুসারে বলা যায় যে মানসিক চাপে ত্বকে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে অথবা বিদ্যমান ত্বকের সমস্যা আরো শোচনীয় হতে পারে। এখানে মানসিক চাপের প্রতি ত্বক কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা সম্পর্কে বলা হলো।

* ব্রণ ওঠে: সাধারণত হরমোন জনিত পরিবর্তনে কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ ওঠলেও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের ব্রণ ওঠার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্রণ দেখে চট করে বলা কঠিন যে কি কারণে এগুলোর আবির্ভাব হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মানসিক চাপে ছিলেন তাদের ব্রণের প্রবণতা বেশি ছিল। এমডিসিএস ডার্মাটোলজির ডার্মাটোলজিস্ট মারিসা কে. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে শরীর স্ট্রেস হরমোন (যেমন- করটিসোল) নিঃসরণ করে, যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের ত্বকে তেলের উৎপাদন বাড়ায়। এর ফলে ব্রণের প্রাদুর্ভাব ঘটে।’ হঠাৎ করে ব্রণ ওঠতে থাকলে মানসিক চাপের মাত্রা নিরূপণ করুন।

* রোসাশিয়া বাড়ে: ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপের প্রদাহ কেবল একজিমাকে তীব্র করে না, এটি রোসাশিয়ার উপসর্গকেও উক্ত্যক্ত করতে পারে। ত্বকে লাল স্ফীতি, লাল আভা অথবা দৃশ্যমান রক্তনালী দেখে রোসাশিয়াকে চেনা যায়। রোসাশিয়ার অনেক উদ্দীপক রয়েছে, যেখানে মানসিক চাপও অন্তর্ভুক্ত। মানসিক চাপে থাকলে প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া বাড়ে, যেটা রোসাশিয়ায় আক্রান্ত ত্বকের লালতা ও স্ফীতি বাড়ায়।’

* আমবাত ওঠে: ডা. গারশিক বলেন, ‘আমাদের শরীরে হিস্টামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে আমবাত ওঠে, যেটা হাইভস বা আর্টিকেরিয়া নামেও পরিচিত। অনেকসময় আমবাতের প্ররোচককে সহজে শনাক্ত করা যায় না। সাম্প্রতিক সংক্রমণ, নতুন ওষুধের ব্যবহার অথবা ওষুধের ডোজ পরিবর্তন, খাবারের প্রতি অ্যালার্জি এবং এমনকি মানসিক চাপেও আমবাত ওঠতে পারে। মানসিক চাপ হিস্টামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে আমবাতকে উদ্দীপ্ত করে অথবা তীব্র করে তোলে।’ হঠাৎ করে ত্বকের যেকোনো প্রতিক্রিয়া ডার্মাটোলজিস্ট দ্বারা পরীক্ষা করানো উচিত, তিনিই ভালো বলতে পারবেন এটা মানসিক চাপ সম্পর্কিত নাকি অন্যকোনো কারণে হয়েছে।

* ত্বক ফ্যাকাসে হয়: মানসিক চাপ ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে ফেলতে পারে। সম্প্রতি আপনার ত্বককে ফ্যাকাসে দেখালে কতটা মানসিক চাপে আছেন তা নির্ধারণের চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ ত্বকের উজ্জ্বলতা কমায় কীভাবে? এ প্রসঙ্গে ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে আমরা ত্বকের যত্ন নিতে ভুলে যাই অথবা প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করতে মনে থাকে না। এর ফলে ত্বক ফ্যাকাসে হয় তথা উজ্জ্বলতা কমে যায়।’ অনেকের ক্ষেত্রে ত্বকের যত্ন নেয়া হলো নিজের যত্ন নেয়ার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মানসিক চাপ বেড়ে গেলে ত্বকের যত্ন নেয়ার আগ্রহও কমে যেতে পারে। তাই নিয়মিত ত্বকের যত্ন তথা নিজের যত্ন নিতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

* ত্বক ফেটে যায়: আপনার সুন্দর ত্বকে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটলে (যেমন- ত্বক ফেটে যাওয়া ও আঁইশ ওঠা) মানসিক চাপ কমানোর প্রক্রিয়ায় থাকুন। ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে করটিসোলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এটা হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের সিন্থেসিস কমিয়ে ফেলে, যার ফলে ত্বক আর্দ্রতা হারায়। মানসিক চাপে থাকলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহারের হারও কমে যায়। উভয়ের সমন্বয়ে শুষ্কতা বেড়ে গিয়ে ত্বক ফেটে যায়।’

* সোরিয়াসিস আরো শোচনীয় হয়: মানসিক চাপে সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ দুষ্টুচক্রে পড়তে পারে। যেখানে সোরিয়াসিস হয় সেখানকার ত্বক লাল হয়ে যায়, পুরুত্ব বাড়ে ও আঁইশ ওঠে। চিকিৎসা না করলে চর্মরোগটি সারা শরীরে ছড়াতে পারে। ত্বক বিশেষজ্ঞরা জানান যে সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো মানসিক চাপ কমানো। ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপকে সোরিয়াসিস বৃদ্ধির প্ররোচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু সোরিয়াসিস হলে মানসিক চাপও বেড়ে যেতে পারে। এভাবে সোরিয়াসিস দুষ্টুচক্র পড়ে যায় ও ছড়াতে থাকে।’
* ঘামগ্রন্থির ক্রিয়া বাড়ে: বড় সভায় অথবা অনেক লোকের সামনে কথা বলার পূর্বে ঘেমে যাওয়া একটি বিস্ময়কর প্রচলিত ঘটনা। মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে (বিশেষ করে নতুন কিছু মোকাবেলার ক্ষেত্রে) মানুষের শরীর থেকে যে ঘাম বের হয় এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এমনটা ঘটে আসছে। ডা. গারশিক বলেন, ‘যখন শরীর কোনো মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন এটি ঘাম ঝরিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়। মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে শরীরের ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্সের অংশ হিসেবে অ্যাড্রিনালিন নামক হরমোন নিঃসরিত হয়। এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসরিত হয়।’

* ত্বক অকালে বুড়িয়ে যায়: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আপনার মুখমণ্ডলে প্রকাশ পেতে পারে, অর্থাৎ আসল বয়সের চেয়ে আপনাকে বয়স্ক দেখাতে পারে। ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে করটিসোল বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত করটিসোল কোলাজেনকে ভেঙে ফেলে ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের সিন্থেসিস কমায়। কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমে যায় বলে ত্বকে বলিরেখা দেখা যায় তথা বয়স্কতার ছাপ পড়ে। এছাড়া মানসিক চাপে শরীরে ফ্রি রেডিক্যালসের গঠন বেড়ে যায়। এটাও ত্বককে অকালে বুড়ো করে।’

* ত্বক মেরামতে দেরি হয়: আর্কাইভস অব ডার্মাটোলজির একটি গবেষণা মতে, মানসিক চাপে ত্বকের আর্দ্রতা নিঃশেষ হয় বলে কোনো ইনজুরির পর ত্বকের মেরামত বিলম্বিত হয়। ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামির মিলার স্কুল অব মেডিসিনের ডিপার্টমেন্টস অব ডার্মাটোলজি অ্যান্ড কিউটেনিয়াস সার্জারির ক্লিনিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর ও ডার্মাটোলজিস্ট ফ্লোর এ. মায়োরাল বলেন, ‘আগে আমরা ত্বক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতাম যে মানসিক চাপে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়। এই গবেষণা আমাদের ধারণাটিকে শক্তিশালী করেছে। এখন আমরা অনেকটা নিশ্চিত যে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ত্বকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।’

 * চুল পড়ে: ডা. গারশিক বলেন, ‘যদি খেয়াল করেন যে উল্লেখযোগ্য হারে চুল পড়ে যাচ্ছে, তাহলে আপনি সম্ভবত মানসিক চাপে ভুগছেন।’ যারা দীর্ঘসময় মানসিক চাপে ভুগেন তারা কয়েক মাস পর লক্ষ্য করতে পারেন যে চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে তথা বেশি সংখ্যক চুল পড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপে এমনকিছু প্রদাহক প্রতিনিধি প্ররোচিত হয়, যা চুলকে অকালে রেস্টিং ফেজে পাঠিয়ে দেয়। একারণে মানসিক চাপপূর্ণ ঘটনার দুই থেকে তিন মাস পর অস্বাভাবিক হারে চুল পড়তে থাকে। ডা. গারশিক জানান যে এটা সাময়িক সমস্যা, মানসিক চাপ কমাতে পারলে চুল পড়ার সংখ্যাও কমে যাবে। মানসিক চাপ কমানোর পরও চুল পড়তে থাকলে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতে হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মানসিক চাপে ত্বকের ১২ ক্ষতি

আপডেট টাইম : ১২:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত কাজের চাপ। দীর্ঘসময় মানসিক চাপে থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষণা অনুসারে বলা যায় যে মানসিক চাপে ত্বকে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে অথবা বিদ্যমান ত্বকের সমস্যা আরো শোচনীয় হতে পারে। এখানে মানসিক চাপের প্রতি ত্বক কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা সম্পর্কে বলা হলো।

* ব্রণ ওঠে: সাধারণত হরমোন জনিত পরিবর্তনে কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ ওঠলেও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের ব্রণ ওঠার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্রণ দেখে চট করে বলা কঠিন যে কি কারণে এগুলোর আবির্ভাব হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মানসিক চাপে ছিলেন তাদের ব্রণের প্রবণতা বেশি ছিল। এমডিসিএস ডার্মাটোলজির ডার্মাটোলজিস্ট মারিসা কে. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে শরীর স্ট্রেস হরমোন (যেমন- করটিসোল) নিঃসরণ করে, যা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের ত্বকে তেলের উৎপাদন বাড়ায়। এর ফলে ব্রণের প্রাদুর্ভাব ঘটে।’ হঠাৎ করে ব্রণ ওঠতে থাকলে মানসিক চাপের মাত্রা নিরূপণ করুন।

* রোসাশিয়া বাড়ে: ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপের প্রদাহ কেবল একজিমাকে তীব্র করে না, এটি রোসাশিয়ার উপসর্গকেও উক্ত্যক্ত করতে পারে। ত্বকে লাল স্ফীতি, লাল আভা অথবা দৃশ্যমান রক্তনালী দেখে রোসাশিয়াকে চেনা যায়। রোসাশিয়ার অনেক উদ্দীপক রয়েছে, যেখানে মানসিক চাপও অন্তর্ভুক্ত। মানসিক চাপে থাকলে প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া বাড়ে, যেটা রোসাশিয়ায় আক্রান্ত ত্বকের লালতা ও স্ফীতি বাড়ায়।’

* আমবাত ওঠে: ডা. গারশিক বলেন, ‘আমাদের শরীরে হিস্টামিনের মাত্রা বেড়ে গেলে আমবাত ওঠে, যেটা হাইভস বা আর্টিকেরিয়া নামেও পরিচিত। অনেকসময় আমবাতের প্ররোচককে সহজে শনাক্ত করা যায় না। সাম্প্রতিক সংক্রমণ, নতুন ওষুধের ব্যবহার অথবা ওষুধের ডোজ পরিবর্তন, খাবারের প্রতি অ্যালার্জি এবং এমনকি মানসিক চাপেও আমবাত ওঠতে পারে। মানসিক চাপ হিস্টামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে আমবাতকে উদ্দীপ্ত করে অথবা তীব্র করে তোলে।’ হঠাৎ করে ত্বকের যেকোনো প্রতিক্রিয়া ডার্মাটোলজিস্ট দ্বারা পরীক্ষা করানো উচিত, তিনিই ভালো বলতে পারবেন এটা মানসিক চাপ সম্পর্কিত নাকি অন্যকোনো কারণে হয়েছে।

* ত্বক ফ্যাকাসে হয়: মানসিক চাপ ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে ফেলতে পারে। সম্প্রতি আপনার ত্বককে ফ্যাকাসে দেখালে কতটা মানসিক চাপে আছেন তা নির্ধারণের চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ ত্বকের উজ্জ্বলতা কমায় কীভাবে? এ প্রসঙ্গে ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে আমরা ত্বকের যত্ন নিতে ভুলে যাই অথবা প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করতে মনে থাকে না। এর ফলে ত্বক ফ্যাকাসে হয় তথা উজ্জ্বলতা কমে যায়।’ অনেকের ক্ষেত্রে ত্বকের যত্ন নেয়া হলো নিজের যত্ন নেয়ার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু মানসিক চাপ বেড়ে গেলে ত্বকের যত্ন নেয়ার আগ্রহও কমে যেতে পারে। তাই নিয়মিত ত্বকের যত্ন তথা নিজের যত্ন নিতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

* ত্বক ফেটে যায়: আপনার সুন্দর ত্বকে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটলে (যেমন- ত্বক ফেটে যাওয়া ও আঁইশ ওঠা) মানসিক চাপ কমানোর প্রক্রিয়ায় থাকুন। ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে করটিসোলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এটা হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের সিন্থেসিস কমিয়ে ফেলে, যার ফলে ত্বক আর্দ্রতা হারায়। মানসিক চাপে থাকলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহারের হারও কমে যায়। উভয়ের সমন্বয়ে শুষ্কতা বেড়ে গিয়ে ত্বক ফেটে যায়।’

* সোরিয়াসিস আরো শোচনীয় হয়: মানসিক চাপে সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ দুষ্টুচক্রে পড়তে পারে। যেখানে সোরিয়াসিস হয় সেখানকার ত্বক লাল হয়ে যায়, পুরুত্ব বাড়ে ও আঁইশ ওঠে। চিকিৎসা না করলে চর্মরোগটি সারা শরীরে ছড়াতে পারে। ত্বক বিশেষজ্ঞরা জানান যে সোরিয়াসিসকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো মানসিক চাপ কমানো। ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপকে সোরিয়াসিস বৃদ্ধির প্ররোচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু সোরিয়াসিস হলে মানসিক চাপও বেড়ে যেতে পারে। এভাবে সোরিয়াসিস দুষ্টুচক্র পড়ে যায় ও ছড়াতে থাকে।’
* ঘামগ্রন্থির ক্রিয়া বাড়ে: বড় সভায় অথবা অনেক লোকের সামনে কথা বলার পূর্বে ঘেমে যাওয়া একটি বিস্ময়কর প্রচলিত ঘটনা। মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে (বিশেষ করে নতুন কিছু মোকাবেলার ক্ষেত্রে) মানুষের শরীর থেকে যে ঘাম বের হয় এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এমনটা ঘটে আসছে। ডা. গারশিক বলেন, ‘যখন শরীর কোনো মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন এটি ঘাম ঝরিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়। মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে শরীরের ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্সের অংশ হিসেবে অ্যাড্রিনালিন নামক হরমোন নিঃসরিত হয়। এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসরিত হয়।’

* ত্বক অকালে বুড়িয়ে যায়: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ আপনার মুখমণ্ডলে প্রকাশ পেতে পারে, অর্থাৎ আসল বয়সের চেয়ে আপনাকে বয়স্ক দেখাতে পারে। ডা. গারশিক বলেন, ‘মানসিক চাপে করটিসোল বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত করটিসোল কোলাজেনকে ভেঙে ফেলে ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের সিন্থেসিস কমায়। কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমে যায় বলে ত্বকে বলিরেখা দেখা যায় তথা বয়স্কতার ছাপ পড়ে। এছাড়া মানসিক চাপে শরীরে ফ্রি রেডিক্যালসের গঠন বেড়ে যায়। এটাও ত্বককে অকালে বুড়ো করে।’

* ত্বক মেরামতে দেরি হয়: আর্কাইভস অব ডার্মাটোলজির একটি গবেষণা মতে, মানসিক চাপে ত্বকের আর্দ্রতা নিঃশেষ হয় বলে কোনো ইনজুরির পর ত্বকের মেরামত বিলম্বিত হয়। ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামির মিলার স্কুল অব মেডিসিনের ডিপার্টমেন্টস অব ডার্মাটোলজি অ্যান্ড কিউটেনিয়াস সার্জারির ক্লিনিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর ও ডার্মাটোলজিস্ট ফ্লোর এ. মায়োরাল বলেন, ‘আগে আমরা ত্বক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতাম যে মানসিক চাপে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়। এই গবেষণা আমাদের ধারণাটিকে শক্তিশালী করেছে। এখন আমরা অনেকটা নিশ্চিত যে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ত্বকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।’

 * চুল পড়ে: ডা. গারশিক বলেন, ‘যদি খেয়াল করেন যে উল্লেখযোগ্য হারে চুল পড়ে যাচ্ছে, তাহলে আপনি সম্ভবত মানসিক চাপে ভুগছেন।’ যারা দীর্ঘসময় মানসিক চাপে ভুগেন তারা কয়েক মাস পর লক্ষ্য করতে পারেন যে চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে তথা বেশি সংখ্যক চুল পড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপে এমনকিছু প্রদাহক প্রতিনিধি প্ররোচিত হয়, যা চুলকে অকালে রেস্টিং ফেজে পাঠিয়ে দেয়। একারণে মানসিক চাপপূর্ণ ঘটনার দুই থেকে তিন মাস পর অস্বাভাবিক হারে চুল পড়তে থাকে। ডা. গারশিক জানান যে এটা সাময়িক সমস্যা, মানসিক চাপ কমাতে পারলে চুল পড়ার সংখ্যাও কমে যাবে। মানসিক চাপ কমানোর পরও চুল পড়তে থাকলে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যেতে হবে।