ঢাকা ০৯:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতেই দেখা মেলে বিরল চামচঠুঁটোর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রকৃতির সবচেয়ে উপকারী জীব বলা হয় পাখিকে। কেউ প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখছে, কেউবা করছে পরাগায়নের কাজ। পৃথিবীতে পাখির প্রজাতি রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং পুরনো কিছু প্রজাতিকে বিভাজন করে নতুন প্রজাতি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত জীবাশ্ম নির্দেশ করে যে পাখিদের আবির্ভাব হয়েছিল জুরাসিক যুগে, প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে।

সরীসৃপ ও পাখি একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত। প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, জীবিত সরীসৃপের মধ্যে কুমিরই পাখিদের নিকটতম জ্ঞাতি। পাখির মধ্যে দুটি বড় ধরনের শারীরিক স্থানগত অভিযোজন ঘটেছে। একটি হলো পালক, সম্ভবত সরীসৃপের আঁশ থেকে উদ্ভূত যা দেহ আবরকের কাজ করে এবং শরীরের স্থির তাপমাত্রা রক্ষার সামর্থ্য যোগায় এবং অন্যটি ডানা, সম্ভাব্য সরীসৃপীয় পূর্বপুরুষের ৫ আঙুলবিশিষ্ট অগ্রপদ অত্যধিক পরিবর্তিত হয়ে অভিযোজিত পালকসহ পাখনায় রূপান্তরিত হয়েছে, যা পাখিকে ওড়ার ক্ষমতা দিয়েছে।

একসঙ্গে চারটি ডিম পাড়ে এরা

একসঙ্গে চারটি ডিম পাড়ে এরা

তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম সংখ্যায় টিকে আছে চামচ ঠোঁটের পাখিটি। এর নাম স্পুন-বিল্ড স্যান্ডপাইপার বা চামচঠুঁটো বাটন। বলা হয়ে থাকে ওরা এখন মাত্র ৪০০ জোড়া টিকে আছে সারা পৃথিবীতে। শীতের সময়টাতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে  ভারত , বাংলাদেশ , শ্রীলঙ্কা , বার্মা , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , ফিলিপাইন , উপদ্বীপ মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে।

উপকূলীয় এলাকার কাদাচরে বা সৈকতের কাছাকাছি নরম মাটিতে। তাই এটি সৈকতপাখি হিসেবেও পরিচিত। এই পাখিটি মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। যেখানে তুলনামূলক শীত কম থাকে। সাইবেরিয়ার চুকটকা থেকে চীন-মায়ানমার হয়ে শেষ এই সোনাদিয়ায়—এখানেই ছোট খুদে রহস্যময় পাখিটি বছরান্তে তার পরিযায়ী উড়াল সমাপ্ত করে।

চামচঠুঁটো পাখি

চামচঠুঁটো পাখি

এই রহস্যময় পাখিটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পাঁচটি প্রজাতির একটি। এরা জুন-জুলাই মাসে টুন্ডার উপকূলীয় অঞ্চলে বাসা বাঁধে। এদের প্রধান খাবার টুন্ড্রাসের শ্যাওলা, মশা, মাছি, বিটল এবং মাকড়সার মতো ছোট প্রাণী। অনেক সময় এরা ছোট চিংড়িও খায়। ভেজা বালি-কাদার ওপরের স্তর থেকে মূলত এরা খাদ্য সংগ্রহ করে।

এরা একসঙ্গে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২০ দিনের মাথায় ডিম থেকে ছানা বের হয় এবং চার সপ্তাহের মাথায় ছানা বাসা ছেড়ে উড়তে শেখে। এই পাখির দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার, ডানা ১০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.২ সেন্টিমিটার, ঠোঁটের চামচের মতো অংশ ১.১ সেন্টিমিটার, পা ২.১ সেন্টিমিটার ও লেজ ৩.৮ সেন্টিমিটার। এর উপরের অংশের রঙ অনেকটা ফিকে ধূসর ও নিচের অংশটা সাদা।

খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন পোকামাকড়

খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন পোকামাকড়

তবে টিকে থাকার জন্য তাকে একেক জায়গায় এক এক রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। তবে চীন এবং মায়ানমারে এদের শিকার করা হত প্রচুর পরিমাণে। বন্দুক আর জালের সাহায্যে শিকারীরা দীর্ঘ পায়ের সব জলচর পাখিকেও শিকার লক্ষ করত, এতে প্রায় বিলুপ্ত স্পুন-বিল্ড স্যান্ডপাইপার বা চামচঠুঁটো বাটনও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীতেই দেখা মেলে বিরল চামচঠুঁটোর

আপডেট টাইম : ০২:৪৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রকৃতির সবচেয়ে উপকারী জীব বলা হয় পাখিকে। কেউ প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখছে, কেউবা করছে পরাগায়নের কাজ। পৃথিবীতে পাখির প্রজাতি রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং পুরনো কিছু প্রজাতিকে বিভাজন করে নতুন প্রজাতি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত জীবাশ্ম নির্দেশ করে যে পাখিদের আবির্ভাব হয়েছিল জুরাসিক যুগে, প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে।

সরীসৃপ ও পাখি একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত। প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, জীবিত সরীসৃপের মধ্যে কুমিরই পাখিদের নিকটতম জ্ঞাতি। পাখির মধ্যে দুটি বড় ধরনের শারীরিক স্থানগত অভিযোজন ঘটেছে। একটি হলো পালক, সম্ভবত সরীসৃপের আঁশ থেকে উদ্ভূত যা দেহ আবরকের কাজ করে এবং শরীরের স্থির তাপমাত্রা রক্ষার সামর্থ্য যোগায় এবং অন্যটি ডানা, সম্ভাব্য সরীসৃপীয় পূর্বপুরুষের ৫ আঙুলবিশিষ্ট অগ্রপদ অত্যধিক পরিবর্তিত হয়ে অভিযোজিত পালকসহ পাখনায় রূপান্তরিত হয়েছে, যা পাখিকে ওড়ার ক্ষমতা দিয়েছে।

একসঙ্গে চারটি ডিম পাড়ে এরা

একসঙ্গে চারটি ডিম পাড়ে এরা

তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম সংখ্যায় টিকে আছে চামচ ঠোঁটের পাখিটি। এর নাম স্পুন-বিল্ড স্যান্ডপাইপার বা চামচঠুঁটো বাটন। বলা হয়ে থাকে ওরা এখন মাত্র ৪০০ জোড়া টিকে আছে সারা পৃথিবীতে। শীতের সময়টাতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে  ভারত , বাংলাদেশ , শ্রীলঙ্কা , বার্মা , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , ফিলিপাইন , উপদ্বীপ মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে।

উপকূলীয় এলাকার কাদাচরে বা সৈকতের কাছাকাছি নরম মাটিতে। তাই এটি সৈকতপাখি হিসেবেও পরিচিত। এই পাখিটি মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। যেখানে তুলনামূলক শীত কম থাকে। সাইবেরিয়ার চুকটকা থেকে চীন-মায়ানমার হয়ে শেষ এই সোনাদিয়ায়—এখানেই ছোট খুদে রহস্যময় পাখিটি বছরান্তে তার পরিযায়ী উড়াল সমাপ্ত করে।

চামচঠুঁটো পাখি

চামচঠুঁটো পাখি

এই রহস্যময় পাখিটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পাঁচটি প্রজাতির একটি। এরা জুন-জুলাই মাসে টুন্ডার উপকূলীয় অঞ্চলে বাসা বাঁধে। এদের প্রধান খাবার টুন্ড্রাসের শ্যাওলা, মশা, মাছি, বিটল এবং মাকড়সার মতো ছোট প্রাণী। অনেক সময় এরা ছোট চিংড়িও খায়। ভেজা বালি-কাদার ওপরের স্তর থেকে মূলত এরা খাদ্য সংগ্রহ করে।

এরা একসঙ্গে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২০ দিনের মাথায় ডিম থেকে ছানা বের হয় এবং চার সপ্তাহের মাথায় ছানা বাসা ছেড়ে উড়তে শেখে। এই পাখির দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার, ডানা ১০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.২ সেন্টিমিটার, ঠোঁটের চামচের মতো অংশ ১.১ সেন্টিমিটার, পা ২.১ সেন্টিমিটার ও লেজ ৩.৮ সেন্টিমিটার। এর উপরের অংশের রঙ অনেকটা ফিকে ধূসর ও নিচের অংশটা সাদা।

খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন পোকামাকড়

খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন পোকামাকড়

তবে টিকে থাকার জন্য তাকে একেক জায়গায় এক এক রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। তবে চীন এবং মায়ানমারে এদের শিকার করা হত প্রচুর পরিমাণে। বন্দুক আর জালের সাহায্যে শিকারীরা দীর্ঘ পায়ের সব জলচর পাখিকেও শিকার লক্ষ করত, এতে প্রায় বিলুপ্ত স্পুন-বিল্ড স্যান্ডপাইপার বা চামচঠুঁটো বাটনও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।