ঢাকা ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার কবরের পাশে দিন-রাত বসে থাকি, ছেলে ফিরে আসে না সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত কাকে ‘ননসেন্স’ বললেন বুবলী ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী পাসের ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন জর্জিনাকে ‘স্ত্রী’ সম্বোধন, তবে কি বিয়েটা সেরেই ফেলেছেন রোনালদো ৩১ ডিসেম্বর আসছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা মহাখালীতে আবাসিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের

প্রমাণ করুন, নইলে ভুল স্বীকার করুন , মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৬
  • ৪২৫ বার

৯ জানুয়ারি, শনিবার; অলস সকাল। হঠাৎ একগাদা দৈনিক পত্রিকার কপি নিয়ে আমার ছোট মেয়ে মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে এসে হাজির। তার উদ্বিগ্ন চেহারায় আমি কিছুটা অবাক হলাম। কথা না বাড়িয়ে মেয়ে আমার সামনে কয়েকটি পত্রিকা দেখালো। ওই পত্রিকাগুলো আমার নামে খবর ছাপিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুরের ৫৫টি ক্ষত্রিয় পরিবারের ওপর জমি-জমার দখল নিয়ে অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে। নির্যাতনের পেছনে নাকি আমার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। একটি পত্রিকাতে এ বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় ও ছাপা হয়েছে।

রিপোর্টগুলো পড়ে আমি যতটা হতাশ হয়েছি, ততটাই অবাক হয়েছি। জনগণের ভালোবাসায় বিগত ছয় বার একটানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু এমন অভিযোগের মুখোমুখি এবারই প্রথম। স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে কিছু গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন প্রচারণায় আমি বিস্মিত, যা মেনে নেয়া আমার জন্য কষ্টকর।

তাই সত্য প্রকাশে আমার এই ব্যাখ্যা। এমন একটি মিথ্যা বানোয়াট খবর যারা এভাবে প্রকাশ ও প্রচার করলেন, সেইসব গণমাধ্যম বা সাংবাদিকের নাম এখানে আমি নিতে চাই না, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সেটা আমার জন্য শোভনও নয়। পাশাপাশি এটাও সত্য, ন্যূনতম দুটি ইংরেজি পত্রিকা বিষয়টি তদন্ত করে খবরটি প্রকাশে বিরত থাকে, যা স্বস্তিদায়ক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো জাতির বিবেকের ধারক ও বাহক গণমাধ্যমের কিছু পত্রিকা কোনো রকম তদন্ত বা যাচাই ছাড়াই এক ব্যক্তির অভিযোগের সূত্র ধরে আরেকজনকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল। এটা কতটুকু যৌক্তিক? এটা সাংবাদিকতা পেশার নৈতিকতার পরিপন্থি নয় কি?

ঘটনার সত্যতা বিচারে পুরো বিষয়টি পাঠকের কাছে স্পষ্ট করছি এবং এটা যে কেউ যাচাই করতে পারেন। আজ থেকে ৩/৪ বছর আগে পাবর্তীপুরের কিছু ক্ষত্রিয় ও মুসলিম পরিবার (১৪-১৫ টা পরিবার) যখন তাদের উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে, তখনই আমি প্রথম এ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। তারা জানায়, সরকার থেকে সাময়িক বরাদ্দ নিয়ে তারা ওই জায়গাটিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করছে। আমি তৎকালীন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জানতে পারি যে, পরিবারগুলো যে সম্পত্তি জেলা প্রশাসক অফিস থেকে সাময়িক বরাদ্দ নিয়ে চাষাবাদ করছিল, সেই সম্পত্তি নিয়ে রাষ্ট্র পক্ষের সাথে জনৈক ইমদাদ চৌধুরী ও হাছিনা বেগম এর পরিবারের দীর্ঘদিন যাবৎ (১৯৬৭ সাল থেকে) আইনি লড়াই চলছিলো। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক জমিটির মালিক হিসেবে হাছিনা ও ইমদাদ চৌধুরীর পক্ষে চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ হেরে যাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ওই জমিতে চাষাবাদরত পরিবারগুলোর নামে প্রদত্ত আদেশ তৎকালীন জেলা প্রশাসন বাতিল করে দেয়। স্বভাবতই জমির প্রকৃত মালিক গত ১৪ বছর ধরেই তাদের সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

এসব বলার মূল কারণ হলো, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর ওই জায়গাটিতে আইনত রাষ্ট্রপক্ষ বা অন্য কেউ কোনো অধিকার বা মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আলোচ্য পরিবারগুলোকে এ ব্যাপারে সহায়তা করা ছিল আমার এখতিয়ারের বাইরে।

শুধুমাত্র ক্ষত্রিয় পরিবারগুলো নয়, অন্য যে কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমাদের খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তাদেরই ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি এক্ষেত্রে নিরূপায়। কারণ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আলোচ্য পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আমার নেই। তবে তাদের জন্য আমার সমবেদনা ও সহমর্মিতা রয়েছে।

বেশিরভাগ গণমাধ্যমে সংবাদের সূত্র হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী কাজল দেবনাথকে উদ্ধৃত করেছে। তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল তাঁর মতো সম্মানিত ব্যক্তি শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে অথবা লোকমুখে শুনে আরেকজন ব্যক্তির সম্পর্কে এই ধরনের অভিযোগ করতে পারেন না, তাও কিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে! জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কাজল দেবনাথের বক্তব্যে আমি হতাশ হয়েছি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই যে, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অথবা কোনো বিরাগের বশবর্তী হয়ে এই ভিত্তিহীন অভিযোগ করেননি। আমি সপ্তাহ দুয়েক আগে শ্রী দেবনাথকে উনার দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে বলেছি এবং উনি এখন পর্যন্ত তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উনি চাইলে আমি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব।

আমি মনে করি, এ ধরনের দায়িত্বহীন প্রচারণা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের মিথ্যাচার যখন এভাবে পত্রিকায় ছাপা হয় এবং ধীরে ধীরে ওই মিথ্যাচারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে তোলার সুযোগ দেয়া হয়, তখন তা একজন মানুষের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুন্ন করে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমি আমার সমস্ত জীবনের কর্ম ও মর্যাদাকে এমন মিথ্যাচারের কাছে জলাঞ্জলি দিতে পারি না।

পাঠক নিশ্চয় ইতোমধ্যে এই সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় আমার এভাবে মর্মাহত হওয়ার কারণ অনুধাবন করতে পারছেন। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কোমলমতি শিশুদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনেই ব্যস্ত ছিলাম এবং সাম্প্রতিক সময়ে এই জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার কাছে আর কেউই আসেননি।

একজন বাংলাদেশি ও বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে, আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু অলিখিত অধিকার আছে। যেমন, একজন মানুষকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযুক্ত করা যাবে না। কিন্তু শ্রী দেবনাথের ভিত্তিহীন অভিযোগের সূত্র ধরে কিছু গণমাধ্যম তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে দিলো। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই ধরনের ভিত্তিহীন ও বানোয়াট প্রচারণায় সাংবিধানিক এ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কারো জন্য কাম্য নয়।

অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে একটি ভুল তথ্য একজন ব্যক্তির সারাজীবনের অর্জনকে করতে পারে প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যগুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক বন্ধুরা ভুলবশত কোনো ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করলেও তাদের এই ভুল সংশোধনের সৎ সাহস রয়েছে। আমি আবারও বলছি, এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারলে আমি নিজেকেই আইন এর হাতে সঁপে দেব। আর তা যদি না হয়, আমি আশা করব যিনি বা যারা এ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তারা এই ভুল সংশোধন করবেন। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া একজন ভুক্তভোগীর কোনো বিকল্প থাকবে না।

লেখক: দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

প্রমাণ করুন, নইলে ভুল স্বীকার করুন , মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার

আপডেট টাইম : ১১:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৬

৯ জানুয়ারি, শনিবার; অলস সকাল। হঠাৎ একগাদা দৈনিক পত্রিকার কপি নিয়ে আমার ছোট মেয়ে মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে এসে হাজির। তার উদ্বিগ্ন চেহারায় আমি কিছুটা অবাক হলাম। কথা না বাড়িয়ে মেয়ে আমার সামনে কয়েকটি পত্রিকা দেখালো। ওই পত্রিকাগুলো আমার নামে খবর ছাপিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দিনাজপুর জেলার পাবর্তীপুরের ৫৫টি ক্ষত্রিয় পরিবারের ওপর জমি-জমার দখল নিয়ে অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে। নির্যাতনের পেছনে নাকি আমার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। একটি পত্রিকাতে এ বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় ও ছাপা হয়েছে।

রিপোর্টগুলো পড়ে আমি যতটা হতাশ হয়েছি, ততটাই অবাক হয়েছি। জনগণের ভালোবাসায় বিগত ছয় বার একটানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু এমন অভিযোগের মুখোমুখি এবারই প্রথম। স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে কিছু গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন প্রচারণায় আমি বিস্মিত, যা মেনে নেয়া আমার জন্য কষ্টকর।

তাই সত্য প্রকাশে আমার এই ব্যাখ্যা। এমন একটি মিথ্যা বানোয়াট খবর যারা এভাবে প্রকাশ ও প্রচার করলেন, সেইসব গণমাধ্যম বা সাংবাদিকের নাম এখানে আমি নিতে চাই না, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সেটা আমার জন্য শোভনও নয়। পাশাপাশি এটাও সত্য, ন্যূনতম দুটি ইংরেজি পত্রিকা বিষয়টি তদন্ত করে খবরটি প্রকাশে বিরত থাকে, যা স্বস্তিদায়ক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো জাতির বিবেকের ধারক ও বাহক গণমাধ্যমের কিছু পত্রিকা কোনো রকম তদন্ত বা যাচাই ছাড়াই এক ব্যক্তির অভিযোগের সূত্র ধরে আরেকজনকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল। এটা কতটুকু যৌক্তিক? এটা সাংবাদিকতা পেশার নৈতিকতার পরিপন্থি নয় কি?

ঘটনার সত্যতা বিচারে পুরো বিষয়টি পাঠকের কাছে স্পষ্ট করছি এবং এটা যে কেউ যাচাই করতে পারেন। আজ থেকে ৩/৪ বছর আগে পাবর্তীপুরের কিছু ক্ষত্রিয় ও মুসলিম পরিবার (১৪-১৫ টা পরিবার) যখন তাদের উচ্ছেদের চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে, তখনই আমি প্রথম এ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। তারা জানায়, সরকার থেকে সাময়িক বরাদ্দ নিয়ে তারা ওই জায়গাটিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করছে। আমি তৎকালীন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জানতে পারি যে, পরিবারগুলো যে সম্পত্তি জেলা প্রশাসক অফিস থেকে সাময়িক বরাদ্দ নিয়ে চাষাবাদ করছিল, সেই সম্পত্তি নিয়ে রাষ্ট্র পক্ষের সাথে জনৈক ইমদাদ চৌধুরী ও হাছিনা বেগম এর পরিবারের দীর্ঘদিন যাবৎ (১৯৬৭ সাল থেকে) আইনি লড়াই চলছিলো। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক জমিটির মালিক হিসেবে হাছিনা ও ইমদাদ চৌধুরীর পক্ষে চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ হেরে যাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ওই জমিতে চাষাবাদরত পরিবারগুলোর নামে প্রদত্ত আদেশ তৎকালীন জেলা প্রশাসন বাতিল করে দেয়। স্বভাবতই জমির প্রকৃত মালিক গত ১৪ বছর ধরেই তাদের সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

এসব বলার মূল কারণ হলো, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর ওই জায়গাটিতে আইনত রাষ্ট্রপক্ষ বা অন্য কেউ কোনো অধিকার বা মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আলোচ্য পরিবারগুলোকে এ ব্যাপারে সহায়তা করা ছিল আমার এখতিয়ারের বাইরে।

শুধুমাত্র ক্ষত্রিয় পরিবারগুলো নয়, অন্য যে কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমাদের খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তাদেরই ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি এক্ষেত্রে নিরূপায়। কারণ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আলোচ্য পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আমার নেই। তবে তাদের জন্য আমার সমবেদনা ও সহমর্মিতা রয়েছে।

বেশিরভাগ গণমাধ্যমে সংবাদের সূত্র হিসেবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী কাজল দেবনাথকে উদ্ধৃত করেছে। তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল তাঁর মতো সম্মানিত ব্যক্তি শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে অথবা লোকমুখে শুনে আরেকজন ব্যক্তির সম্পর্কে এই ধরনের অভিযোগ করতে পারেন না, তাও কিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে! জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কাজল দেবনাথের বক্তব্যে আমি হতাশ হয়েছি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই যে, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অথবা কোনো বিরাগের বশবর্তী হয়ে এই ভিত্তিহীন অভিযোগ করেননি। আমি সপ্তাহ দুয়েক আগে শ্রী দেবনাথকে উনার দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে বলেছি এবং উনি এখন পর্যন্ত তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উনি চাইলে আমি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করব।

আমি মনে করি, এ ধরনের দায়িত্বহীন প্রচারণা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের মিথ্যাচার যখন এভাবে পত্রিকায় ছাপা হয় এবং ধীরে ধীরে ওই মিথ্যাচারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে তোলার সুযোগ দেয়া হয়, তখন তা একজন মানুষের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুন্ন করে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমি আমার সমস্ত জীবনের কর্ম ও মর্যাদাকে এমন মিথ্যাচারের কাছে জলাঞ্জলি দিতে পারি না।

পাঠক নিশ্চয় ইতোমধ্যে এই সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় আমার এভাবে মর্মাহত হওয়ার কারণ অনুধাবন করতে পারছেন। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কোমলমতি শিশুদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনেই ব্যস্ত ছিলাম এবং সাম্প্রতিক সময়ে এই জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার কাছে আর কেউই আসেননি।

একজন বাংলাদেশি ও বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে, আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু অলিখিত অধিকার আছে। যেমন, একজন মানুষকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া অভিযুক্ত করা যাবে না। কিন্তু শ্রী দেবনাথের ভিত্তিহীন অভিযোগের সূত্র ধরে কিছু গণমাধ্যম তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে দিলো। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই ধরনের ভিত্তিহীন ও বানোয়াট প্রচারণায় সাংবিধানিক এ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কারো জন্য কাম্য নয়।

অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে একটি ভুল তথ্য একজন ব্যক্তির সারাজীবনের অর্জনকে করতে পারে প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যগুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক বন্ধুরা ভুলবশত কোনো ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করলেও তাদের এই ভুল সংশোধনের সৎ সাহস রয়েছে। আমি আবারও বলছি, এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারলে আমি নিজেকেই আইন এর হাতে সঁপে দেব। আর তা যদি না হয়, আমি আশা করব যিনি বা যারা এ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তারা এই ভুল সংশোধন করবেন। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া একজন ভুক্তভোগীর কোনো বিকল্প থাকবে না।

লেখক: দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।