ঢাকা ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় অস্তিত্ব হারাচ্ছে বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জনের পৈতৃকভিটা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৫:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০
  • ১৬৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সঠিক রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে পড়ে থাকায় শিকড়-বাকড় এবং আগাছা জন্মে কালের বিবর্তনে অস্তিত্ব হারাচ্ছে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকারের ঐতিহ্যবাহী পৈত্রিক বাড়িটি। শতশত বছরের পুরনো বৃটিশ আমলের এ বাড়িটি সংরক্ষনের দাবী এলাকার সংস্কৃতিমনা সচেতন মহলের।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে ১৮৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সনাতন ধর্মালবম্বী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে লিনীরঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চন্দ্রনাথ সরকার। ১১ ভাই বোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নলিনীরঞ্জন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও ডানপিটে স্বভাবের। লেখাপড়া শেষ না করেই ভাগ্য অন্বেষনে চলে যান সুদুর কলকাতায়। সেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেন।

ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে তরুণ বয়সেই তিনি কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম বাঙ্গালী মেয়র হন। এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯০৯ সালে নেত্রকোনা শহরের মগড়া নদীর পাড়ে মালনী রোডে মনোরম পরিবেশে তার বাবার নামে চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ বিধান রায় এর মন্ত্রসভার অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত বিভক্তির পর নলিনী রঞ্জনের পুরো পরিবার জায়গা জমি রেখে ভারতে চলে যান। সেই থেকে তাদের ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে  আছে।

কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ দিকে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ১১ নম্বর চিরাং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। পরিষদ থেকে কিছুটা দূরেই সাজিউড়া গ্রাম। সেই গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে কালের স্বাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এক কালের ঐতিহ্যবাহী নলিনীরঞ্জন সরকারের পৈত্রিক বাড়ি। এক একর জমিতে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের বাড়িটি। বাড়ীটি ঘুরে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে বিশাল পুকুর। শান বাঁধানো ঘাট। নয়নাভিরাম বসত ঘরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দির। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাষ্টার খসে পড়ছে। লতাপাতার শেকড়-বাকড়ে ক্রমশ বন্দি হয়ে বিলীন হতে চলেছে বাড়ীটির অস্তিত্ব।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বাড়ির আশে-পাশে কয়েক একর জায়গা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে গ্রামের কয়েকজন বাস করছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রভাষক বিজয় দাস বলেন, নলিনীরঞ্জনের মত অনেক জ্ঞানীগুনী মানুষ আমাদের এই নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের স্মৃতিগুলো আমাদের যথাযথ সংরক্ষণ করে রাখা উচিৎ। এতে নতুন প্রজন্ম জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারবে।

জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্পাদক অসিত বাবু বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি বাড়িটি যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ নেন। তবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এ বাড়িটিও হতে পারে জেলার অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র। শিশু-কিশোরসহ পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন নলিনীরঞ্জনের অবদান ও ইতিহাস সম্পর্কে জেনে উপকৃত হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নেত্রকোনায় অস্তিত্ব হারাচ্ছে বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জনের পৈতৃকভিটা

আপডেট টাইম : ১০:৫৫:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সঠিক রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে পড়ে থাকায় শিকড়-বাকড় এবং আগাছা জন্মে কালের বিবর্তনে অস্তিত্ব হারাচ্ছে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকারের ঐতিহ্যবাহী পৈত্রিক বাড়িটি। শতশত বছরের পুরনো বৃটিশ আমলের এ বাড়িটি সংরক্ষনের দাবী এলাকার সংস্কৃতিমনা সচেতন মহলের।

এলাকা সূত্রে জানা যায়, জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে ১৮৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সনাতন ধর্মালবম্বী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে লিনীরঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চন্দ্রনাথ সরকার। ১১ ভাই বোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নলিনীরঞ্জন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও ডানপিটে স্বভাবের। লেখাপড়া শেষ না করেই ভাগ্য অন্বেষনে চলে যান সুদুর কলকাতায়। সেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেন।

ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে তরুণ বয়সেই তিনি কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম বাঙ্গালী মেয়র হন। এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯০৯ সালে নেত্রকোনা শহরের মগড়া নদীর পাড়ে মালনী রোডে মনোরম পরিবেশে তার বাবার নামে চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পুনরায় পশ্চিমবঙ্গ বিধান রায় এর মন্ত্রসভার অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত বিভক্তির পর নলিনী রঞ্জনের পুরো পরিবার জায়গা জমি রেখে ভারতে চলে যান। সেই থেকে তাদের ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে  আছে।

কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ দিকে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ১১ নম্বর চিরাং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। পরিষদ থেকে কিছুটা দূরেই সাজিউড়া গ্রাম। সেই গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে কালের স্বাক্ষী হিসেবে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এক কালের ঐতিহ্যবাহী নলিনীরঞ্জন সরকারের পৈত্রিক বাড়ি। এক একর জমিতে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের বাড়িটি। বাড়ীটি ঘুরে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে বিশাল পুকুর। শান বাঁধানো ঘাট। নয়নাভিরাম বসত ঘরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দির। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাষ্টার খসে পড়ছে। লতাপাতার শেকড়-বাকড়ে ক্রমশ বন্দি হয়ে বিলীন হতে চলেছে বাড়ীটির অস্তিত্ব।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বাড়ির আশে-পাশে কয়েক একর জায়গা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে গ্রামের কয়েকজন বাস করছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রভাষক বিজয় দাস বলেন, নলিনীরঞ্জনের মত অনেক জ্ঞানীগুনী মানুষ আমাদের এই নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের স্মৃতিগুলো আমাদের যথাযথ সংরক্ষণ করে রাখা উচিৎ। এতে নতুন প্রজন্ম জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারবে।

জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্পাদক অসিত বাবু বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি বাড়িটি যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ নেন। তবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এ বাড়িটিও হতে পারে জেলার অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র। শিশু-কিশোরসহ পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন নলিনীরঞ্জনের অবদান ও ইতিহাস সম্পর্কে জেনে উপকৃত হবে।