ঢাকা ০৭:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)-এর পূর্ণ নাম মুহিউদ্দিন আবু মোহাম্মদ ইবনে আবু সালেহ মুছা জঙ্গী (রহ.)। তিনি একজন কামেল সুফী ধর্মপ্রচারক ছিলেন। তার নামে কাদেরিয়া তরীকার নামকরণ করা হয়েছে। ৪৭০ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫৬১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। পিতৃকুলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা.)-এর সরাসরি বংশধর ছিলেন। তার জননী ছিলেন আবদুল্লাহ আস মাউমেয়ী (রহ.)-এর কন্যা ফাতিমা (রহ.)। তারা উভয়েই সে যুগের শ্রেষ্ঠ দরবেশ ছিলেন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তার নাম নীক বা নায়ক। উহা কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণে গীলান বা জীলান জিলায় অবস্থিত।

আঠারো বছর বয়সে তিনি পড়াশুনার জন্য বাগদাদে প্রেরীত হন। তিনি আল্লামা তিবরিযা (রহ.) এর নিকটে ভাষাতত্ত¡ এবং কয়েকজন শায়খ বা উস্তাদের নিকট হাম্বালী মতান্তরে শাফেয়ী ফিকাহ অধ্যায়ন করেন। তার ৪৮৮ হতে ৫২১ হি. পর্যন্ত জীবনকাল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা হলো এ সময়ে তিনি হজ্জ ও বিবাহ করেন। কারণ তার পুত্র-কন্যার মধ্যে একজনের জন্ম হিজরী ৫০৮ সালে। কোনো কোনো গ্রন্থাকারের মতে, তৎকালে তিনি ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাযারের খাদিমও ছিলেন। তিনি আবু খায়ের মোহাম্মাদ ইবনে মুসলিম (রহ.)-এর নিকট সুফীবাদ শিক্ষা করেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকাতেই আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী মতে দীক্ষিত হয়ে পড়েন। উস্তাদ আবুল খায়ের (রহ.)-এর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করতে তাকে যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করতে হয়।

আবুল খায়েরের (রহ.) খানকাহ্্র মধ্যে একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তির অনুপ্রবেশ অন্যান্য শিক্ষারত সাধকদের ক্ষোভ প্রকাশের কারণ হয়েছিল বলে জানা যায়। কিছুকাল পরে আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী পরিচ্ছদ লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। বাগদাদে হাম্বলী ফিকহের একটি মাদরাসা ছিল। সেই মাদরাসার প্রিন্সিপাল কাযী আবু সাঈদ মাখযুমী (রহ.) তাকে শিক্ষা দান করেন। ৫২১ হি. সালে সুফী ইউসুফ আল হামযানী (রহ.)-এর পরামর্শে তিনি প্রকাশ্যে প্রচার কার্য আরম্ভ করেন।

প্রথমে তার শ্রোতার সংখ্যা ছিল অল্প। ক্রমশঃ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বাগদাদের হালবা দ্বারের বিখ্যাত কক্ষে আসন গ্রহণ করেন। কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলায় তাকে দরজার বাইরে যেতে হয়। যেখানে তার জন্য একটি বিরাত বা খানকাহ নির্মিত হয়। ৫২৮ হিজরী সনে জনসাধারণের চাঁদায় পার্শ্ববর্তী অট্টালিকাগুলো মুবারাকুল মাখযুমীর মাদরাসার অন্তর্ভুক্ত করে আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-কে তার প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। তার কার্যপ্রণালীর প্রকৃতি ছিল সম্ভবতঃ জামালুদ্দিন আয-জাওযীর অনুরূপ। শুক্রবার প্রাতে ও সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তার মাদরাসায় ওয়াজ করতেন। রোববার প্রাতে করতেন খানকায়। তার অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে দরবেশ বলে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার ধর্মোপদেশ শ্রবণে অনেক ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এতে অনেক মুসলমান ও উচ্চতর জীবন লাভে ধন্য হয়। বহুস্থানে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার ফলে বহুস্থান হতে তার নিকট নযর-নিয়াজ আসত। এর দ্বারা তিনি প্রার্থীদের চাহিদা পূরণ করতেন এবং সর্বদাই গৃহদ্বার খোলা রাখতেন। দেশের সকল অংশ হতে তার নিকট ইসলামী আইন সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রেরিত হতো। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এগুলোর উত্তর দিতেন। এতে অনুমতি হয় যে, তৎকালীন খলীফাগণ তার অনুরক্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত (১) আল গুনিয়াতুত তালেবীন (২) আল ফাতহুর রাব্বানী, (৩) ফতুহুল গায়ব, (৪) সিররুল আসরার প্রভৃতি। আল্লাহ পাক তাকে কুরব ও মানজেলাতের আ’লা হতে আলা দারাজাত দান করুন। আমীন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)

আপডেট টাইম : ১০:১৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)-এর পূর্ণ নাম মুহিউদ্দিন আবু মোহাম্মদ ইবনে আবু সালেহ মুছা জঙ্গী (রহ.)। তিনি একজন কামেল সুফী ধর্মপ্রচারক ছিলেন। তার নামে কাদেরিয়া তরীকার নামকরণ করা হয়েছে। ৪৭০ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫৬১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। পিতৃকুলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা.)-এর সরাসরি বংশধর ছিলেন। তার জননী ছিলেন আবদুল্লাহ আস মাউমেয়ী (রহ.)-এর কন্যা ফাতিমা (রহ.)। তারা উভয়েই সে যুগের শ্রেষ্ঠ দরবেশ ছিলেন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তার নাম নীক বা নায়ক। উহা কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণে গীলান বা জীলান জিলায় অবস্থিত।

আঠারো বছর বয়সে তিনি পড়াশুনার জন্য বাগদাদে প্রেরীত হন। তিনি আল্লামা তিবরিযা (রহ.) এর নিকটে ভাষাতত্ত¡ এবং কয়েকজন শায়খ বা উস্তাদের নিকট হাম্বালী মতান্তরে শাফেয়ী ফিকাহ অধ্যায়ন করেন। তার ৪৮৮ হতে ৫২১ হি. পর্যন্ত জীবনকাল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা হলো এ সময়ে তিনি হজ্জ ও বিবাহ করেন। কারণ তার পুত্র-কন্যার মধ্যে একজনের জন্ম হিজরী ৫০৮ সালে। কোনো কোনো গ্রন্থাকারের মতে, তৎকালে তিনি ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাযারের খাদিমও ছিলেন। তিনি আবু খায়ের মোহাম্মাদ ইবনে মুসলিম (রহ.)-এর নিকট সুফীবাদ শিক্ষা করেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকাতেই আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী মতে দীক্ষিত হয়ে পড়েন। উস্তাদ আবুল খায়ের (রহ.)-এর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করতে তাকে যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করতে হয়।

আবুল খায়েরের (রহ.) খানকাহ্্র মধ্যে একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তির অনুপ্রবেশ অন্যান্য শিক্ষারত সাধকদের ক্ষোভ প্রকাশের কারণ হয়েছিল বলে জানা যায়। কিছুকাল পরে আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী পরিচ্ছদ লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। বাগদাদে হাম্বলী ফিকহের একটি মাদরাসা ছিল। সেই মাদরাসার প্রিন্সিপাল কাযী আবু সাঈদ মাখযুমী (রহ.) তাকে শিক্ষা দান করেন। ৫২১ হি. সালে সুফী ইউসুফ আল হামযানী (রহ.)-এর পরামর্শে তিনি প্রকাশ্যে প্রচার কার্য আরম্ভ করেন।

প্রথমে তার শ্রোতার সংখ্যা ছিল অল্প। ক্রমশঃ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বাগদাদের হালবা দ্বারের বিখ্যাত কক্ষে আসন গ্রহণ করেন। কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলায় তাকে দরজার বাইরে যেতে হয়। যেখানে তার জন্য একটি বিরাত বা খানকাহ নির্মিত হয়। ৫২৮ হিজরী সনে জনসাধারণের চাঁদায় পার্শ্ববর্তী অট্টালিকাগুলো মুবারাকুল মাখযুমীর মাদরাসার অন্তর্ভুক্ত করে আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-কে তার প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। তার কার্যপ্রণালীর প্রকৃতি ছিল সম্ভবতঃ জামালুদ্দিন আয-জাওযীর অনুরূপ। শুক্রবার প্রাতে ও সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তার মাদরাসায় ওয়াজ করতেন। রোববার প্রাতে করতেন খানকায়। তার অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে দরবেশ বলে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার ধর্মোপদেশ শ্রবণে অনেক ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এতে অনেক মুসলমান ও উচ্চতর জীবন লাভে ধন্য হয়। বহুস্থানে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার ফলে বহুস্থান হতে তার নিকট নযর-নিয়াজ আসত। এর দ্বারা তিনি প্রার্থীদের চাহিদা পূরণ করতেন এবং সর্বদাই গৃহদ্বার খোলা রাখতেন। দেশের সকল অংশ হতে তার নিকট ইসলামী আইন সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রেরিত হতো। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এগুলোর উত্তর দিতেন। এতে অনুমতি হয় যে, তৎকালীন খলীফাগণ তার অনুরক্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত (১) আল গুনিয়াতুত তালেবীন (২) আল ফাতহুর রাব্বানী, (৩) ফতুহুল গায়ব, (৪) সিররুল আসরার প্রভৃতি। আল্লাহ পাক তাকে কুরব ও মানজেলাতের আ’লা হতে আলা দারাজাত দান করুন। আমীন।