ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের শহরে ‘অতিথি’র আগমন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০
  • ২২৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয়। শীতের আমেজ না, সত্যিকারের শীত। দূর্বা ঘাসে কিংবা ধানের কচি ডগায় মুক্তার মতো আলো ছড়িয়ে ভোরের শিশির জানান দিচ্ছে শীত আসছে। উত্তরের হিমেল হাওয়ার দাপটে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সেই ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ভোরে কিংবা খুব সকালে ওঠা মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কম। তেমনি এক সকালে বের হওয়া নতুন সংবাদের খোঁজে। ইট পাথরের শহরে তখনো শুরু হয়নি যান্ত্রিক কোলাহল। পূব আকাশে কেবল উঁকি মারছে রক্তিম সূর্য।

অতিথি পাখির গুঞ্জনে-কুঞ্জনে সবুজ-বনানী পরিবেষ্টিত রূপসী বাংলার নির্জন প্রান্তর তখন সেজে ওঠে নতুন সাজে, নবরূপে। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে হয়ত শহরের দূষণের মাত্রা এ বছর কম। শীত আসার মুখেই শহরে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক প্রাতঃভ্রমণকারীদের পাশাপাশি পেশাদার ও শৌখিনরাও ভিড় জমাচ্ছেন এই অতিথিদের দেখতে।

এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো জলাশয়ের চারপাশ। উড়াউড়ি, ছুটোছুটি, খুনসুটি আর মনের সুখে সাঁতার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো এক ঝাঁক পাখি। শহরের নতুন অতিথি এখন তারা। অন্য এলাকা থেকে উড়ে আসা এই পাখির নাম পাতি সরালি। অতিথি আগমনের এই মনোরম দৃশ্যের দেখা মিললো। আর যান্ত্রিক শহরে এখন এই নতুন অতিথিদের কোলাহলে ঘুম ভাঙে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রতি বছর শীতকালে আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা আসে। ওরা আসে মূলত হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে। এই পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই সুন্দর তাদের গায়ের বাহারি রঙ। ওদের দেখলেই মন ভরে যায়। আমাদের দেশে মোট পাখি আছে প্রায় ৬২৮ প্রজাতির। এর মধ্যে ২৪৪ প্রজাতির পাখিই স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বাস করে না।

শীতপ্রধান দেশ থেকে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে সবুজ পাহাড়ের হাতছানিতে প্রকৃতির ডাকে ছুটে আসে অতিথি পাখি। হ্রদের জলেভাসা চরগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে প্রকৃতি। বিশেষ করে শীত মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন শহরের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে থাকে অতিথি পাখির দল। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে যায় নদীর তীর ও জলেভাসা চরগুলো। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত অতিথি পাখি বেশি দেখা যায়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শীতের শুরুতেই পাহাড়ি অঞ্চলে অতিথি পাখি এসেছে চোখে পড়ার মতো।

পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। আর তারপর মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে ওদের দেশে বরফ গলতে শুরু করলে ফিরে যেতে থাকে নিজেদের দেশে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশিরভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে।

বাংলাদেশের বিলে-ঝিলে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। ঝাঁকে ঝাঁকে এইসব পাখি এসে বসে বিলে। এ দেশের বিল তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে। পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাঙ কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাঁকে মুখরিত হয়ে থাকে বাংলাদেশের বিল-ঝিল।

শীতকালে বাংলাদেশে যেসকল পাখি দেখা যায় তার মধ্যে এই পাতি সরালি অন্যতম। এটি ছোট সরালি বা গেছো হাঁস নামেও পরিচিত। এটি মূলত দেশি বা আবাসিক পাখি। তবে শীতকালে লোকালয়ে দলবদ্ধভাবে এদের দেখা মেলে। এজন্য অনেকেই একে পরিযায়ী পাখি ভেবে ভুল করেন। দেশি পাখি হলেও শীতকালে ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উড়ে এসে এদেশে আবাস গড়ে তোলে এই পাখি ।

বাংলাদেশকে অতিথি পাখিরা অস্থায়ী আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। তীব্র শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতেই তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে হাঁস প্রজাতির আধিক্যই বেশি। শিকারিরা যেন পাখি শিকারে অপতৎপরতা না চালাতে পারে, সে জন্য স্থানীয় মানুষ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নজরে রাখছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীতের শহরে ‘অতিথি’র আগমন

আপডেট টাইম : ০৬:০৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয়। শীতের আমেজ না, সত্যিকারের শীত। দূর্বা ঘাসে কিংবা ধানের কচি ডগায় মুক্তার মতো আলো ছড়িয়ে ভোরের শিশির জানান দিচ্ছে শীত আসছে। উত্তরের হিমেল হাওয়ার দাপটে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সেই ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ভোরে কিংবা খুব সকালে ওঠা মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কম। তেমনি এক সকালে বের হওয়া নতুন সংবাদের খোঁজে। ইট পাথরের শহরে তখনো শুরু হয়নি যান্ত্রিক কোলাহল। পূব আকাশে কেবল উঁকি মারছে রক্তিম সূর্য।

অতিথি পাখির গুঞ্জনে-কুঞ্জনে সবুজ-বনানী পরিবেষ্টিত রূপসী বাংলার নির্জন প্রান্তর তখন সেজে ওঠে নতুন সাজে, নবরূপে। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে হয়ত শহরের দূষণের মাত্রা এ বছর কম। শীত আসার মুখেই শহরে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক প্রাতঃভ্রমণকারীদের পাশাপাশি পেশাদার ও শৌখিনরাও ভিড় জমাচ্ছেন এই অতিথিদের দেখতে।

এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো জলাশয়ের চারপাশ। উড়াউড়ি, ছুটোছুটি, খুনসুটি আর মনের সুখে সাঁতার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো এক ঝাঁক পাখি। শহরের নতুন অতিথি এখন তারা। অন্য এলাকা থেকে উড়ে আসা এই পাখির নাম পাতি সরালি। অতিথি আগমনের এই মনোরম দৃশ্যের দেখা মিললো। আর যান্ত্রিক শহরে এখন এই নতুন অতিথিদের কোলাহলে ঘুম ভাঙে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রতি বছর শীতকালে আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা আসে। ওরা আসে মূলত হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে। এই পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই সুন্দর তাদের গায়ের বাহারি রঙ। ওদের দেখলেই মন ভরে যায়। আমাদের দেশে মোট পাখি আছে প্রায় ৬২৮ প্রজাতির। এর মধ্যে ২৪৪ প্রজাতির পাখিই স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বাস করে না।

শীতপ্রধান দেশ থেকে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে সবুজ পাহাড়ের হাতছানিতে প্রকৃতির ডাকে ছুটে আসে অতিথি পাখি। হ্রদের জলেভাসা চরগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে প্রকৃতি। বিশেষ করে শীত মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন শহরের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে থাকে অতিথি পাখির দল। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে যায় নদীর তীর ও জলেভাসা চরগুলো। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত অতিথি পাখি বেশি দেখা যায়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শীতের শুরুতেই পাহাড়ি অঞ্চলে অতিথি পাখি এসেছে চোখে পড়ার মতো।

পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। আর তারপর মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে ওদের দেশে বরফ গলতে শুরু করলে ফিরে যেতে থাকে নিজেদের দেশে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশিরভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে।

বাংলাদেশের বিলে-ঝিলে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। ঝাঁকে ঝাঁকে এইসব পাখি এসে বসে বিলে। এ দেশের বিল তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে। পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাঙ কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাঁকে মুখরিত হয়ে থাকে বাংলাদেশের বিল-ঝিল।

শীতকালে বাংলাদেশে যেসকল পাখি দেখা যায় তার মধ্যে এই পাতি সরালি অন্যতম। এটি ছোট সরালি বা গেছো হাঁস নামেও পরিচিত। এটি মূলত দেশি বা আবাসিক পাখি। তবে শীতকালে লোকালয়ে দলবদ্ধভাবে এদের দেখা মেলে। এজন্য অনেকেই একে পরিযায়ী পাখি ভেবে ভুল করেন। দেশি পাখি হলেও শীতকালে ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উড়ে এসে এদেশে আবাস গড়ে তোলে এই পাখি ।

বাংলাদেশকে অতিথি পাখিরা অস্থায়ী আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। তীব্র শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতেই তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে হাঁস প্রজাতির আধিক্যই বেশি। শিকারিরা যেন পাখি শিকারে অপতৎপরতা না চালাতে পারে, সে জন্য স্থানীয় মানুষ বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নজরে রাখছে।