অপরাধ কমাতে এলাকাবাসীর সঙ্গে উঠান বৈঠক করছি

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)`র মিরপুর বিভাগের থানা শাহআলী। ২০০৫ সালে এ থানার পথ চলা শুরু। অন্যান্য থানার চেয়ে আয়তনে ছোট হলেও এলাকাটিতে ক্রমশই বাড়ছে জনবসতি। এছাড়া দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাসের এ থানাটিতে রয়েছে চিড়িয়াখানা, মাজার ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। থানাটিতে এখন পর্যন্ত ১০ জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ ১১তম ওসি হিসেবে গত বছরের ২০ মে যোগদান করেছেন এ কে এম শাহীন মন্ডল।

শাহীন মন্ডল আসার পর এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শাহআলী থানাকে ৩টি বিটে ভাগ করেছেন। অপরাধীদের ধরতে নিয়মিত ক্রাইম কনফারেন্স করছেন এলাকাবাসীর সঙ্গে। এমন উদ্যোগগে ইতোমধ্যে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ওসি এ কে এম শাহীন মন্ডলের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা ওঠে আসে নানা বিষয়। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

কেমন আছেন?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। জ্বি, আমি ভালো আছি। এদিকে তো সাংবাদিকদের আনাগোনা কম, ঘটনাও কম। আপনি এসেছেন খুব ভালো লাগছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মধ্যে শাহআলী থানাটি গুরুত্বপূর্ণ, কী কারণে?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : মিরপুর চিড়িয়াখানা ও শাহআলীর মাজার এ থানা এলাকায়। জাতীয় উদ্যান বোটানিক্যাল গার্ডেনও এ থানা এলাকায়। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জনবসতিও বাড়ছে। সঙ্গত কারণে ক্রমশই থানাটির গুরুত্ব বাড়ছে।

এ থানা এলাকায় কী কী ধরণের অপরাধ সংগঠিত হয়?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : এখানে প্রধান সমস্যা মাদক। আগে নিয়মিত নেশা জাতীয় দ্রব্যের কেনাবেচা থেকে শুরু করে সবই হতো। নজরদারি ও অভিযানের কারণে ইদানিং কমে গেছে। জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় ডাকাতি বা চুরির ঘটনাও মাঝে মধ্যে ঘটে। এছাড়া বড় অপরাধ নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্যসহ এ থানা এলাকার একটি বাসা থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এরপরও বলবেন নিরাপদ?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : দেখুন, জঙ্গি ইস্যুটি এখন জাতীয় ভাবনায়। সরকার ও বাংলাদেশ পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এই এলাকায় এমন এটি রহস্যজনক ঘটনার খবর আমরাই ডিবি পুলিশকে অবগত করেছি। পরে ডিবি পুলিশ এসে কয়েকজন জঙ্গি সদস্যকে বিস্ফোরকসহ আটক করে। থানার সহযোগীতায় তারা আটক হয়েছে। আর তাদের পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। নিরাপদই বলতে পারেন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও নজরদারি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও নজরদারি বাড়াতে পুরো থানা এলাকাকে ৩টি বিটে ভাগ করা হয়েছে। একজন এসআই-এর নের্তৃত্বে একটি করে বিটে ৫ থেকে ৭ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছে। আর আমরা নিয়মিত এলাকাবাসীর সঙ্গে উঠান বৈঠক করছি। তাদের সহযোগীতা চেয়েছি। অপরিচিত সন্দেহভাজন কাউকে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে বলছি। এলাকাবাসীও বেশ সাড়া দিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সুসম্পর্ক রাখতে মাসে একটি করে ক্রাইম কনফারেন্স করা হয়। গত ৬ মাসে ৬টি কনফারেন্স করা হয়েছে। প্রতিমাসে একটি করে বিশেষ অভিযানও পরিচালনা করা হয়। বলতে পারেন শুদ্ধি অভিযান। এলাকার ভাড়াটিয়া, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মসজিদ কমিটির বাদ যাচ্ছে না। মসজিদ কমিটির অনুমতি ছাড়া অপরিচিত কাউকে মসজিদে রাত্রি যাপন করতে দেয়া হচ্ছে না।

আপনার থানা এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : না, আমাদের কোনো স্থায়ী চেকপোস্ট নেই। তবে আমাদের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখি।

আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : শাহআলী মাজার, বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। শাহআলী মাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার গান হয়। ওই অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি শ্রোতা ও শিল্পীরা আসেন। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আপনার থানার জনবল, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : এ থানার মূলত: ২টি সমস্যা। একটি আবাসন সমস্যা। ভাড়া বাসায় থানার কাজ চলছে। অফিসাররা বসারও জায়গা পান না। অন্যটি যানবাহন। মামলা ও জিডির পরিমাণে জনবলও কম বলতে পারেন।

অপরাধী কিংবা রাজনৈতিকভাবে চাপ বোধ করেন কি না?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : এখানে আসার পর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। আপাতত কোনো চাপ নেই।

পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে পেশাটিকে কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
এ কে এম শাহীন মন্ডল : আমার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা থানায়। ১৯৯০ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে নাটোরের সিংড়া থানায় পুলিশে যোগদান করি। ১৯৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করি। এরপর নাটোরেই গুরুদাসপুর থানা, রাজধানীর উত্তরা, গুলশান কাজ করেছি।

ওসি হিসেবে ২০০০ সালে থেকে পল্লবী, শ্যামপুর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুন, জামালপুরের মেলানদহ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, শেরপুর সদর, মাদারিপুরের কালকিনিতে দায়িত্ব পালন করেছি। রাজধানীর কলাবাগান থানার ফাউন্ডার ওসি হিসেবেও কাজ করেছি। ডিবিতেও ইন্সেপেক্টরের দায়িত্বপালন করেছি। দেশের সেবায় কাজ করতে পারাটা সৌভাগ্যবান মনে হয়। আর এই পেশায় থেকে নানা মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ রয়েছে। মানুষের সেবা করার সুযোগ তো এখানেই।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এ কে এম শাহীন মন্ডল : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর