হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের ভাটির প্রাণপুরুষ, হাওরাঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী, জনগনের আত্মার আত্মীয়, সদা হাস্যজ্বল, অত্যন্ত বিনয়ী এবং নিরহংকার একজন মানুষ ও জননেতা আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। যিনি ১৯৪৪ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত অঞ্চল মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে হাতেঘড়ি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া ছাত্রলীগ করার মাধ্যমে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করেন। এরপর ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে তিনি অত্যন্ত সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আট (৮) বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তাকে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার সুদীর্ঘ ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের সকল সময়ই কাটিয়ে দিয়েছেন হাওরবাসীর উন্নয়নে নানাবিধ কাজের মাধ্যমে। এবং একদিনের জন্যও শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাননি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য সর্বদা অবিচল থেকেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম হাওরাঞ্চল। বিস্তর জলরাশি ব্যষ্টিত এই হাওরাঞ্চল এখন পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসছে এই হাওরাঞ্চলের অপরুপ রূপবৈচিত্র উপভোগ করতে। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের অলওয়েদার সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পর্যটন এক নতুন মাত্রায় চলে যায়। দুর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা এই সড়কটি দেখতে প্রতিনিয়ত ভীর করছে। যা এই এলাকার অর্থনীতিতে এক বিরাট প্রভাব পড়ছে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের এ স্বপ্ন আজ বাস্তবতার মুখ দেখেছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই অলওয়েদার সড়কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট মহাসড়কের সাথে যুক্ত হবে। মহাসড়কের সাথে যুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হবে এবং পর্যটন শিল্প চলে যাবে এক অন্যন্য উচ্চতায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়কটিকে মুজিববর্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন শেষে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছি।’
এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে এমন মহাসড়ক তৈরির উদ্যোগ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাঁর (রাষ্ট্রপতির) অনুপ্রেরণা ও উদ্যোগের কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি।
এ অঞ্চলে এই জাতীয় মহাসড়ক নির্মিত হতে পারে এটা কল্পনার বাইরে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় এই মহাসড়কটি নির্মাণের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়ে যাবে।’ এ অঞ্চলের মানুষ এখন নাসিরনগর বা ভৈরব হয়ে দ্রুত ঢাকা যেতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মহাসড়ক নির্মাণ করে একটি দুর্দান্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
হাওরের বুক চিরে চলে যাওয়া ২৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অলওয়েদার সড়কে ৫৯০ দশমিক ৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯ দশমিক ৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৬১ দশমিক ৮১ মিটার দীর্ঘ ভাতশালা সেতু, ১৭১ দশমিক ৯৬৪ মিটার ঢাকী সেতু ও ১৫৬ দশমিক ৭২ মিটার দীর্ঘ ছিলনী সেতু মহাসড়কের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ষায় ভাঙন থেকে সড়ক রক্ষায় ৭ দশমিক ৬০ লাখ বর্গমিটার সিসি ব্লক দিয়ে স্লোপ প্রটেকশনের কাজ করা হয়েছে।
হাওরবেষ্টিত এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা সবসময়ই সংগ্রামী। বর্ষায় যতদুর চোখ যায় চারদিকে শুধু থৈ থৈ পানি আর এর মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ গ্রাম। বর্ষায় এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান বাহন নৌকা অথবা ইঞ্চিনচালিত জলযান। নিদারুণ কষ্টকর জীবনযাত্রার সাক্ষী এ এলাকার মানুষ। সাড়াবছরে মাত্র একবার একটি ফসল ধান উৎপাদনের মাধ্যমেই এ অঞ্চলের মানুষ তাদের জীবন জীবিকার চাহিদা মেটায়। শুকনো মৌসুমে এই ফসল পরিবহন এবং তাদের চলাচল আরো কষ্টকর হয়ে যায় সড়কের অভাবে। এরকম কষ্টকর জীবনের প্রশান্তি এনে দিয়েছে এই অলওয়েদার সড়কটি। এখন থেকে খুব সহজেই তারা তাদের উৎপাদিত ফসল পরিবহন করতে পারবে এবং যাতায়াতের সুবধার কারনে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে শুধু এক ফসলের উপরেই তাদের জীবনযাত্রা নির্ভর করবে না। এছাড়া পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় হাওরবেষ্টিত এ অঞ্চলটি হয়ে উঠবে কর্মসংস্থানের অন্যতম কেন্দ্র। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে। যিনি সকল সময়ে এই হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে আসছে এবং তার সুদীর্ঘ ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে নানাভাবে ভাটির মানুষের কল্যাণে নিজেকে পুরোপুরিভাবে নিয়োজিত করেছেন।
বর্ষায় মাইলের পর মাইল বিস্তির্ণ জলরাশি, বর্ষা শেষে জলকাদা আর শুকনো মৌসুমে ফসলি জমি। বর্ষায় নৌকা আর অন্য ঋতুতে পায়ে হাঁটা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না হাওরবাসীর। যোগাযোগে এখানকার মানুষের কষ্ট লাঘবে বিশাল হাওরের মধ্যে সড়ক নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন ‘ভাটির শার্দুল’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয় হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক।সড়কটি নির্মাণের ফলে শুধু হাওরবাসীর চলাচলের দুর্ভোগ দূর হয়েছে তা নয়, নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
ভাটির মানুষের প্রাণপুরুষ মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল এই সড়কটির নাম রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নামে যাতে নামকরণ করা হয় এই দাবি এ অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের। আমরা এলাকাবাসী মানবতার নেত্রী, বাংলাদেশের জনগণের নয়নের মণি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই সড়কটি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নামে নামকরণ করার জন্য জোর অনুরোধ করছি।