ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঁচা পাট রফতানিতে শুল্কারোপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০
  • ১৭৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে পাট শিল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় কাঁচা পাট রফতানিতে প্রতি টনে আড়াইশ’ মার্কিন ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ২১ হাজার ২৫০ টাকা) শুল্কারোপসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। অন্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- নিুমানের পাট রফতানি বন্ধ, লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা ও মজুদ থেকে বিরত রাখা।

পাশাপাশি লাইসেন্সধারী ডিলার, আড়তদাররা এক হাজার মণের অতিরিক্ত পাট এক মাসের বেশি মজুদ রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও সামুদ্রিক বন্দরের মাধ্যমে কাঁচা পাট রফতানি করা। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে চলতি বছর প্রায় ১০ লাখ বেল উৎপাদন কমবে এমন আশঙ্কা পাট শিল্প মালিকদের। ফলে পাটের অভাবে শিল্প বন্ধ হতে পারে এ ধরনের পর্যবেক্ষণ থেকে এ প্রস্তাব যৌথভাবে দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস ও স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে করোনার কারণে এবার ৩৫ শতাংশ পাট উৎপাদন কম হবে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় মিলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পাট পাওয়া যাবে না। এ জন্য রফতানিকে নিরুৎসাহিত করা না হলে পাটের অভাবেই অনেক মিল বন্ধ হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পাটের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষক মূল্য পাচ্ছে এমন আবেগ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এটি ফড়িয়াদের কারণে বাড়ছে। এ অনিয়ন্ত্রিত বাজার ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। এ জন্য লাইসেন্স ছাড়া পাট ব্যবসা বন্ধ এই আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে। অনেক ব্যবসায়ী পাট কিনে মজুদ করছে যাদের কোনো লাইসেন্স নেই।

সূত্র জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে পাট রফতানির সময় অনিময় হয়। আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে দুর্নীতি করা হয়। এটি নিরুৎসাহিত করতে সামদ্রিক বন্দর দিয়ে কাঁচা পাট রফতানি করার প্রস্তাব দিয়েছে শিল্প মালিকদের উভয় অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া বিদ্যমান আইনে আছে ব্যবসা করতে হলে পাট অধিদফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে অনেকে এ ব্যবসা করছেন যাদের কোনো লাইসেন্স নেই। অবৈধ ফড়িয়ারা যেন এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে জন্য আইনটি কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, ভরা মৌসুমে পাটের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা মূল্য উঠেছে। এটি অতীতে কোনো বছর হয়নি। সেখানে আরও বলা হয়, প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয়। সেখানে করোনাভাইরাস ও আমদানিকৃত বীজ সীমান্তে দীর্ঘদিন আটকে থাকায় চাষীরা যথাসময়ে মাঠে নিড়ানি দিতে পারেনি। ফলে এ বছর উৎপাদন কমে ৫৫ লাখ বেলে ঠেকতে পারে। কিন্তু বছরব্যাপী শিল্পের জন্য ৬০ লাখ বেল এবং গৃহস্থালির জন্য আরও ৫ লাখসহ মোট ৬৫ লাখ বেল পাটের প্রয়োজন। এই চাহিদার নিরিখে ১০ লাখ বেল উৎপাদন কম হবে। পাশাপাশি অব্যাহত আছে রফতানি। এতে আগামীতে এক ধরনের অশনি সংকেত বয়ে আসছে এ শিল্পে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারত প্রতি টন পাটের ওপর সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ মার্কিন ডলার অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ টন পাট রফতানির বাজার হারিয়েছে। বাংলাদেশের পাটের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ তাদের পাট মিশ্রণ করে বিদেশে রফতানি করছে। বাংলাদেশের পাটের মান ভালো বিধায় বিদায় প্রতিবেশী দেশটি কাঁচা পাট আমদানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ করেনি। ভারতেও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পাটের উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত কাঁচা পাট ক্রয় করে এ ঘাটতি পূরণ করতে ইচ্ছুক। অপরদিকে দেশে ঘাটতি থাকলেও আমদানির মাধ্যমে তা পূরণ করার উপায় নেই। এ জন্য পাট রফতানিতে শুল্কারোপ করা হলে একদিকে তারা আমদানি কমাবে, অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের সঙ্গে পাট পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে ২৫৯টি পাট কল রয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। চাষীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতে ৪ কোটি মানুষ জড়িত। গত বছর পাট রফতানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। এ শিল্পের স্বার্থে কাঁচা পাটের দর এবং সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখা দরকার। পাটের অভাবে শিল্প বন্ধ হলে শ্রমিক চাকরি হারাবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এ খাতে অর্থায়নকারী ব্যাংক ও বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কাঁচা পাট রফতানিতে শুল্কারোপ

আপডেট টাইম : ০৩:১৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে পাট শিল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় কাঁচা পাট রফতানিতে প্রতি টনে আড়াইশ’ মার্কিন ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ২১ হাজার ২৫০ টাকা) শুল্কারোপসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। অন্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- নিুমানের পাট রফতানি বন্ধ, লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা ও মজুদ থেকে বিরত রাখা।

পাশাপাশি লাইসেন্সধারী ডিলার, আড়তদাররা এক হাজার মণের অতিরিক্ত পাট এক মাসের বেশি মজুদ রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও সামুদ্রিক বন্দরের মাধ্যমে কাঁচা পাট রফতানি করা। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে চলতি বছর প্রায় ১০ লাখ বেল উৎপাদন কমবে এমন আশঙ্কা পাট শিল্প মালিকদের। ফলে পাটের অভাবে শিল্প বন্ধ হতে পারে এ ধরনের পর্যবেক্ষণ থেকে এ প্রস্তাব যৌথভাবে দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস ও স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে করোনার কারণে এবার ৩৫ শতাংশ পাট উৎপাদন কম হবে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় মিলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পাট পাওয়া যাবে না। এ জন্য রফতানিকে নিরুৎসাহিত করা না হলে পাটের অভাবেই অনেক মিল বন্ধ হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পাটের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষক মূল্য পাচ্ছে এমন আবেগ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এটি ফড়িয়াদের কারণে বাড়ছে। এ অনিয়ন্ত্রিত বাজার ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। এ জন্য লাইসেন্স ছাড়া পাট ব্যবসা বন্ধ এই আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে। অনেক ব্যবসায়ী পাট কিনে মজুদ করছে যাদের কোনো লাইসেন্স নেই।

সূত্র জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে পাট রফতানির সময় অনিময় হয়। আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে দুর্নীতি করা হয়। এটি নিরুৎসাহিত করতে সামদ্রিক বন্দর দিয়ে কাঁচা পাট রফতানি করার প্রস্তাব দিয়েছে শিল্প মালিকদের উভয় অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া বিদ্যমান আইনে আছে ব্যবসা করতে হলে পাট অধিদফতর থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে অনেকে এ ব্যবসা করছেন যাদের কোনো লাইসেন্স নেই। অবৈধ ফড়িয়ারা যেন এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে জন্য আইনটি কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, ভরা মৌসুমে পাটের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা মূল্য উঠেছে। এটি অতীতে কোনো বছর হয়নি। সেখানে আরও বলা হয়, প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয়। সেখানে করোনাভাইরাস ও আমদানিকৃত বীজ সীমান্তে দীর্ঘদিন আটকে থাকায় চাষীরা যথাসময়ে মাঠে নিড়ানি দিতে পারেনি। ফলে এ বছর উৎপাদন কমে ৫৫ লাখ বেলে ঠেকতে পারে। কিন্তু বছরব্যাপী শিল্পের জন্য ৬০ লাখ বেল এবং গৃহস্থালির জন্য আরও ৫ লাখসহ মোট ৬৫ লাখ বেল পাটের প্রয়োজন। এই চাহিদার নিরিখে ১০ লাখ বেল উৎপাদন কম হবে। পাশাপাশি অব্যাহত আছে রফতানি। এতে আগামীতে এক ধরনের অশনি সংকেত বয়ে আসছে এ শিল্পে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারত প্রতি টন পাটের ওপর সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ মার্কিন ডলার অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ টন পাট রফতানির বাজার হারিয়েছে। বাংলাদেশের পাটের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ তাদের পাট মিশ্রণ করে বিদেশে রফতানি করছে। বাংলাদেশের পাটের মান ভালো বিধায় বিদায় প্রতিবেশী দেশটি কাঁচা পাট আমদানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ করেনি। ভারতেও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পাটের উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত কাঁচা পাট ক্রয় করে এ ঘাটতি পূরণ করতে ইচ্ছুক। অপরদিকে দেশে ঘাটতি থাকলেও আমদানির মাধ্যমে তা পূরণ করার উপায় নেই। এ জন্য পাট রফতানিতে শুল্কারোপ করা হলে একদিকে তারা আমদানি কমাবে, অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের সঙ্গে পাট পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে ২৫৯টি পাট কল রয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। চাষীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতে ৪ কোটি মানুষ জড়িত। গত বছর পাট রফতানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। এ শিল্পের স্বার্থে কাঁচা পাটের দর এবং সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে রাখা দরকার। পাটের অভাবে শিল্প বন্ধ হলে শ্রমিক চাকরি হারাবে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এ খাতে অর্থায়নকারী ব্যাংক ও বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও।