ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদ উদ্বোধন করবেন কাবা শরিফের ইমাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৭:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০
  • ১৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত ২০১ গম্বুজ মসজিদ। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজ শেষ হলে কাবা শরিফের ইমাম এসে নামাজে ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন মসজিদের নির্মাতা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রাম। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ওই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে শুরু হয় ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের নির্মাণ কাজ। মসজিদটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া বেগম।

নির্মাণাধীন মসজিদটিতে ২০১৮ সাল থেকে ঈদের নামাজ আদায় করা হচ্ছে। এখানে শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের কার্যক্রমও চলে। মসজিদের বাম পাশে মাজারের মতো একটি স্থাপনা রয়েছে। সেখানে একজনের কবর দেয়ার মতো জায়গা ফাঁকা রাখা আছে। সেখানে সমাহিত হবেন মসজিদের নির্মাতা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।

jagonews24

মসজিদ সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৪৫১ ফুট উচ্চতার একটি বিশাল বড় মিনার তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৫৭ তলা উঁচু ভবনের সমান এই মিনারের ৫০ তলা পর্যন্ত থাকবে লিফট সুবিধা। নাম হবে রফিকুল ইসলাম টাওয়ার। নির্মাণ শেষ হলে দিল্লির ২৪০ ফুট উঁচু কুতুব মিনারকে পেছনে ফেলে দেবে এই রফিকুল টাওয়ার।

মসজিদটির পশ্চিমাংশে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে যমুনার শাখা নদী ঝিনাই। মসজিদের সৌন্দর্যকে দিয়েছে এই নদীটি এক ভিন্নমাত্রা। মসজিদের উত্তর দিকে অবস্থিত অজুখানা। বিশাল বড় অজুখানায় বসে অজু করার জন্য ছোট ছোট চেয়ারের মতো ১১৬টি আসন রয়েছে।

অজুখানার ছাদ ছাইরঙের ক্ষুদ্রকায় পাথরের মতো মোজাইক করা। তাতে মধ্যম গভীর পানির আঁধার। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অজুখানাটি সামান্য বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে।

jagonews24

দ্বিতীয় তলায় প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। এখানে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসুল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। দ্বিতল এই মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে মিশর থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের টাইলস।

মসজিদের অভ্যন্তরের দেয়ালের চারদিকে এক সারি টাইলস লাগানো হয়েছে। যাতে খণ্ড খণ্ড করে পুরো পবিত্র কোরআন লিপিবদ্ধ। মেহরাবের পাশে মরদেহ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হয়েছে। এখানে থাকবে জানাজার ব্যবস্থা।

প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন এই মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে যুক্ত করা হবে সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা।

মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই। মানে ১৪৪ ফুট করে। দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির ছাদের মূল গম্বুজের উচ্চতা ৮১ ফুট। এই গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ১৭ ফুট উচ্চতার আরও ২০০ গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ১০১ ফুট উঁচু চারটি মিনার। এছাড়াও ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে। গম্বুজ আর মিনারগুলোতে দৃষ্টিনন্দন উন্নতমানের টাইলস বসানো।

jagonews24

মসজিদটির উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বিনামূল্যে হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদের পাশেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা গাড়ি রাখার স্থান। মসজিদের সামনে রয়েছে কয়েকটি দোকান। খাবার হোটেলসহ আরও আছে শো পিস, আচার, খেলনাসহ বেশ কিছু পণ্যের দোকান। ছোটদের জন্য আছে ট্রেন, নাগরদোলা, নৌকা দোলনি ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থা।

মসজিদটিকে ঘিরে আশপাশে তৈরি হচ্ছে ফাইভ স্টার হোটেল, আবাসিক হোটেল, মার্কেট, হেলিপ্যাডসহ অত্যাধুনিক সব বিল্ডিং।

নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবু মাসুদ জানান, করোনাভাইরাসের কারণে বেশ কিছুদিন মসজিদটি বন্ধ ছিল। আবার তা চালু হয়েছে এবং যথারীতি মসজিদে নামাজও আদায় হচ্ছে। মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করাসহ নামাজ আদায়ের জন্য ছুটে আসছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ ভ্রমণ পিপাসু অসংখ্য মানুষ। সপ্তাহের শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মসজিদটি দেখতে ও নামাজ পড়তে আসছেন সহস্রাধিক মানুষ। এটিকে ঘিরে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা নির্মাণ শেষ হলে গিনেস বুকে স্থান করে নেবে এই ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি। নির্মাণ শেষ হলে কাবা শরিফের ইমাম সাহেব এসে নামাজে ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন বলে তিনি শুনেছেন।

এ প্রসঙ্গে মসজিদের নির্মাতা ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বিশ্বের সকল মসজিদের চেয়ে এর কারুকাজ একটু অন্যরকম। মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হলে কাবা শরিফের ইমাম এসে নামাজে ইমামতি করে এর উদ্বোধন করবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদ উদ্বোধন করবেন কাবা শরিফের ইমাম

আপডেট টাইম : ০৩:২৭:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত ২০১ গম্বুজ মসজিদ। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজ শেষ হলে কাবা শরিফের ইমাম এসে নামাজে ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন মসজিদের নির্মাতা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রাম। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ওই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে শুরু হয় ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের নির্মাণ কাজ। মসজিদটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া বেগম।

নির্মাণাধীন মসজিদটিতে ২০১৮ সাল থেকে ঈদের নামাজ আদায় করা হচ্ছে। এখানে শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের কার্যক্রমও চলে। মসজিদের বাম পাশে মাজারের মতো একটি স্থাপনা রয়েছে। সেখানে একজনের কবর দেয়ার মতো জায়গা ফাঁকা রাখা আছে। সেখানে সমাহিত হবেন মসজিদের নির্মাতা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।

jagonews24

মসজিদ সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৪৫১ ফুট উচ্চতার একটি বিশাল বড় মিনার তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৫৭ তলা উঁচু ভবনের সমান এই মিনারের ৫০ তলা পর্যন্ত থাকবে লিফট সুবিধা। নাম হবে রফিকুল ইসলাম টাওয়ার। নির্মাণ শেষ হলে দিল্লির ২৪০ ফুট উঁচু কুতুব মিনারকে পেছনে ফেলে দেবে এই রফিকুল টাওয়ার।

মসজিদটির পশ্চিমাংশে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে যমুনার শাখা নদী ঝিনাই। মসজিদের সৌন্দর্যকে দিয়েছে এই নদীটি এক ভিন্নমাত্রা। মসজিদের উত্তর দিকে অবস্থিত অজুখানা। বিশাল বড় অজুখানায় বসে অজু করার জন্য ছোট ছোট চেয়ারের মতো ১১৬টি আসন রয়েছে।

অজুখানার ছাদ ছাইরঙের ক্ষুদ্রকায় পাথরের মতো মোজাইক করা। তাতে মধ্যম গভীর পানির আঁধার। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অজুখানাটি সামান্য বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে।

jagonews24

দ্বিতীয় তলায় প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। এখানে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসুল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। দ্বিতল এই মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে মিশর থেকে আনা বিভিন্ন ধরনের উন্নতমানের টাইলস।

মসজিদের অভ্যন্তরের দেয়ালের চারদিকে এক সারি টাইলস লাগানো হয়েছে। যাতে খণ্ড খণ্ড করে পুরো পবিত্র কোরআন লিপিবদ্ধ। মেহরাবের পাশে মরদেহ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হয়েছে। এখানে থাকবে জানাজার ব্যবস্থা।

প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন এই মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে যুক্ত করা হবে সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা।

মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই। মানে ১৪৪ ফুট করে। দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির ছাদের মূল গম্বুজের উচ্চতা ৮১ ফুট। এই গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ১৭ ফুট উচ্চতার আরও ২০০ গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ১০১ ফুট উঁচু চারটি মিনার। এছাড়াও ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে। গম্বুজ আর মিনারগুলোতে দৃষ্টিনন্দন উন্নতমানের টাইলস বসানো।

jagonews24

মসজিদটির উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে বিনামূল্যে হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদের পাশেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা গাড়ি রাখার স্থান। মসজিদের সামনে রয়েছে কয়েকটি দোকান। খাবার হোটেলসহ আরও আছে শো পিস, আচার, খেলনাসহ বেশ কিছু পণ্যের দোকান। ছোটদের জন্য আছে ট্রেন, নাগরদোলা, নৌকা দোলনি ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থা।

মসজিদটিকে ঘিরে আশপাশে তৈরি হচ্ছে ফাইভ স্টার হোটেল, আবাসিক হোটেল, মার্কেট, হেলিপ্যাডসহ অত্যাধুনিক সব বিল্ডিং।

নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবু মাসুদ জানান, করোনাভাইরাসের কারণে বেশ কিছুদিন মসজিদটি বন্ধ ছিল। আবার তা চালু হয়েছে এবং যথারীতি মসজিদে নামাজও আদায় হচ্ছে। মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করাসহ নামাজ আদায়ের জন্য ছুটে আসছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ ভ্রমণ পিপাসু অসংখ্য মানুষ। সপ্তাহের শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মসজিদটি দেখতে ও নামাজ পড়তে আসছেন সহস্রাধিক মানুষ। এটিকে ঘিরে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা নির্মাণ শেষ হলে গিনেস বুকে স্থান করে নেবে এই ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি। নির্মাণ শেষ হলে কাবা শরিফের ইমাম সাহেব এসে নামাজে ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন বলে তিনি শুনেছেন।

এ প্রসঙ্গে মসজিদের নির্মাতা ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বিশ্বের সকল মসজিদের চেয়ে এর কারুকাজ একটু অন্যরকম। মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হলে কাবা শরিফের ইমাম এসে নামাজে ইমামতি করে এর উদ্বোধন করবেন।