হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুকনার দিনের পাও (পা), বর্ষার দিনের নাও, একেই বলে ভাটি এলাকার গাঁও- এই প্রবাদটিই এক সময় ছিলো মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই প্রবাদটিকে মিথ্যে করে ভাটি এলাকার চিত্র অনেকটাই বদলে দিয়েছে বিশাল হাওরের বুকে নান্দনিক মহাসড়ক।
হাওর বলতে বুঝাতো মাইলের পর মাইল চাষের জমি। বর্ষায় বিশাল জলরাশির সাথে নীল আকাশের সাথে কঠিন সখ্যতা। চারদিকে থৈ থৈ পানি আর হাওরের মাঝে ছোট্ট নৌকার মতো ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম। একটা সময় হাওর ছিলো শহর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি জনপদ। যেখান থেকে একমাত্র যাতায়াতের বাহন ছিলো নৌকা, লঞ্চ বা স্টিমার। কিন্তু এই সব কিছু যেন এখন সোনালী অতীত।
হ্যা এতক্ষণ বলছিলাম ঢাকার অদূরে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন এলাকার হাওরের কথা। সম্প্রতি সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে অলওয়েদার ৪৭ কিলোমিটার উচু পাকা সড়ক ও ৩৫ কিলোমিটার সাবমার্সেবল সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে নির্মাণ করা হয়েছে ২২টি পাকা সেতু ও ১০৪টি কালভার্ট। শুকনো মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার তিন উপজেলার বিভিন্ন নদীতে ৫ টি ফেরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ের ভ্রমণ পিপাসু মানুষেদের কাছে অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার ২৯.৭২৩ কিলোমিটারের এই রাস্তাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক আসছেন সড়কটি দেখতে। বিশাল হাওরের জলরাশির বুকে সাপের মতো একে বেঁকে নির্মিত এই নান্দনিক সড়কটি পর্যটকমহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দৃষ্টি নন্দন এই সড়কটি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম।
অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ-৪) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নব নির্মিত প্রায় ৩০ কিলোমিটারের এই সড়কটি আগামী বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) জননেত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্বোধন করবেন। এই সড়কটি পর্যটনের দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার পর্যটক এই সড়কটি এখন দেখতে আসেন।
তিনি বলেন, যদি এই এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় তা এই এলাকার মানুষের জন্য অনেক ভালো হবে। প্রতিদিন যেই পরিমান মানুষ আসে একটা উপজেলা পর্যায়ে সেই পরিমান হোটেল, রিসোর্ট বা খাবার হোটেল না থাকায় এই মুহুর্তে থাকা বা খাবার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
তিনি আরোও বলেন, যদি সরকার এই বিষয়টির দিকে নজর দেন তাহলে এই এলাকাসহ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি। ভবিষ্যতে হাওরের অলওয়েদার সড়কটি সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের সাথে সংযোগ স্থাপন করার ও পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া উড়াল সেতুর মাধ্যমে হাওরকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাথে সংযোগ করারও পরিকল্পনা চলছে।