ঢাকা ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্গাসাগরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা পদ্ম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৫:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০
  • ১৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার নায়ক তার প্রেয়সীর মন পাওয়ার জন্য ‘সমস্ত বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে’ এনেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্ম। সাহিত্যে নীল পদ্মের এমন সরব উপস্থিতি থাকলেও বাস্তবে দেখা মেলে না। পাশাপাশি সাহিত্যে সাদা পদ্মের বিষয়ে কোনো ছন্দ বা লেখা চোখে না পড়লেও বাস্তবে তা দেখা যায় দুর্গাসাগর দীঘিতে।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউপিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘির এবারের নতুন আকর্ষণ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া এই সাদা পদ্ম। দূর থেকে দুর্গাসাগর দীঘির দিকে তাকালে মনে হয়, সবুজ ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে অসংখ্য সাদা বক। যতই কাছে যাবেন, ততই মনে হবে কোথায় বক? এ তো দেখছি বিরাট আকারের ফুল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পানির উপর ভেসে আছে গোল পদ্মপাতা। এর ফাঁক দিয়ে মাথা উঁচু করে ফুটে আছে সাদা পদ্ম। কোনোটি পরিপূর্ণ প্রস্ফোটিত, কোনোটি আধেক প্রস্ফোটিত, আবার কোনোটি শুধুই কলি। জলজ ফুলের রাণী বলা হয় পদ্মকে। ফুটে থাকা ফুল শুধু দুর্গাসাগর দীঘির নয়, সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে প্রকৃতিরও। দীঘির দক্ষিণ দিকের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে যেন পদ্মের সমাহার। এবারই প্রথম প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে দুর্গাসাগর দীঘিতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

বাবুগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি ছিলাম। একটু প্রশান্তির জন্য দুর্গাসাগর দীঘিতে পদ্ম ফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়। এ বছর সাদা পদ্ম ফুলের কারণে দীঘির সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুর্গাসাগর দীঘিতে বিভিন্ন বয়সী পর্যটক আসেন। কিন্তু এখানে কোনো আবাসন কিংবা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এসব সুবিধা নিশ্চিত কর আহলে শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও দুর্গাসাগর দীঘি দেখতে আসবে।

বাবুগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, পদ্ম বহুবর্ষজীবী গাছ। এর গোল, প্রায় ৪০ সেমি চওড়া। সরু কাঁটাযুক্ত লম্বা বোঁটার ফুলগুলো সুগন্ধিযুক্ত, পাপড়ি সাদা ও পুংকেশর হলদেটে। একটি ফুলে ১২-১৮টি পাপড়ি থাকে। বর্ষা থেকে শরৎকালে এ ফুল বেশি ফোটে। পানির ওপরে পাতা ও ফুল ভাসমান অবস্থায় থাকে। মূল পানির নিচে কাদায় আবদ্ধ।

দুর্গাসাগর দীঘির কেয়ারটেকার তপন লাল লস্কর জানান, এ বছর বর্ষার শুরুতেই দীঘির বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফুটেছে সাদা রঙের পদ্ম। যা দেখলে মন-চোখ জুড়িয়ে যায়। এমন অপরূপ দৃশ্য প্রতিনিয়ত হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদেরও। জেলা প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের কারণে দুর্গাসাগর দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। পর্যটকের আনাগোনাও বাড়ছে।

তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগস্ট মাস থেকে দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘি। দর্শনার্থীদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দীঘিতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা অবস্থান ও সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রবেশ করাসহ ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুর্গাসাগরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা পদ্ম

আপডেট টাইম : ১১:০৫:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার নায়ক তার প্রেয়সীর মন পাওয়ার জন্য ‘সমস্ত বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে’ এনেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্ম। সাহিত্যে নীল পদ্মের এমন সরব উপস্থিতি থাকলেও বাস্তবে দেখা মেলে না। পাশাপাশি সাহিত্যে সাদা পদ্মের বিষয়ে কোনো ছন্দ বা লেখা চোখে না পড়লেও বাস্তবে তা দেখা যায় দুর্গাসাগর দীঘিতে।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউপিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘির এবারের নতুন আকর্ষণ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া এই সাদা পদ্ম। দূর থেকে দুর্গাসাগর দীঘির দিকে তাকালে মনে হয়, সবুজ ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে অসংখ্য সাদা বক। যতই কাছে যাবেন, ততই মনে হবে কোথায় বক? এ তো দেখছি বিরাট আকারের ফুল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পানির উপর ভেসে আছে গোল পদ্মপাতা। এর ফাঁক দিয়ে মাথা উঁচু করে ফুটে আছে সাদা পদ্ম। কোনোটি পরিপূর্ণ প্রস্ফোটিত, কোনোটি আধেক প্রস্ফোটিত, আবার কোনোটি শুধুই কলি। জলজ ফুলের রাণী বলা হয় পদ্মকে। ফুটে থাকা ফুল শুধু দুর্গাসাগর দীঘির নয়, সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে প্রকৃতিরও। দীঘির দক্ষিণ দিকের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে যেন পদ্মের সমাহার। এবারই প্রথম প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে দুর্গাসাগর দীঘিতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

বাবুগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি ছিলাম। একটু প্রশান্তির জন্য দুর্গাসাগর দীঘিতে পদ্ম ফুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়। এ বছর সাদা পদ্ম ফুলের কারণে দীঘির সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুর্গাসাগর দীঘিতে বিভিন্ন বয়সী পর্যটক আসেন। কিন্তু এখানে কোনো আবাসন কিংবা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এসব সুবিধা নিশ্চিত কর আহলে শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও দুর্গাসাগর দীঘি দেখতে আসবে।

বাবুগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, পদ্ম বহুবর্ষজীবী গাছ। এর গোল, প্রায় ৪০ সেমি চওড়া। সরু কাঁটাযুক্ত লম্বা বোঁটার ফুলগুলো সুগন্ধিযুক্ত, পাপড়ি সাদা ও পুংকেশর হলদেটে। একটি ফুলে ১২-১৮টি পাপড়ি থাকে। বর্ষা থেকে শরৎকালে এ ফুল বেশি ফোটে। পানির ওপরে পাতা ও ফুল ভাসমান অবস্থায় থাকে। মূল পানির নিচে কাদায় আবদ্ধ।

দুর্গাসাগর দীঘির কেয়ারটেকার তপন লাল লস্কর জানান, এ বছর বর্ষার শুরুতেই দীঘির বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফুটেছে সাদা রঙের পদ্ম। যা দেখলে মন-চোখ জুড়িয়ে যায়। এমন অপরূপ দৃশ্য প্রতিনিয়ত হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদেরও। জেলা প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের কারণে দুর্গাসাগর দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। পর্যটকের আনাগোনাও বাড়ছে।

তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগস্ট মাস থেকে দর্শনার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘি। দর্শনার্থীদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দীঘিতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা অবস্থান ও সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রবেশ করাসহ ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।