ঢাকা ১১:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপূজার ক্ষণগণনার শুরু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মা দুর্গা যখন আমাদের মাঝে আসেন, প্রকৃতিই সবার আগে স্বাগত জানায়। আকাশে তুলো মেঘের রাশি, কাশফুল আর শিউলি ফুলের সমাহারে মা আসেন আমাদের কাছে শরতের আশ্বিন মাসে। তবে এ বছর আর সেটা হবে না। মা আসবেন শরতের বদলে হেমন্তের কার্তিক মাসে, যা কিনা শারদোৎসবের ইতিহাসে একটু অন্যরকম।

এমনিতে মহালয়ার ছ’দিন পরই শুরু হয় দেবীর বোধন। সেভাবেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এ বছর মহালয়ার ৩৫ দিন পর দুর্গাপূজা। মহালয়া ১৭ সেপ্টেম্বর আর দেবীর বোধন অর্থাৎ মহাষষ্ঠী ২২ অক্টোবর।

পুরোহিতদের মতে, দু-দুটি অমাবস্যা একই মাসে হলে সে মাস মলমাস হিসেবে গণ্য হয়। আর মলমাসে কোনো শুভ কাজ হয় না। সে হিসাবে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস মলমাস। কারণ এ মাসে দুটি অমাবস্যা পড়েছে।

তাই পূজা হবে আশ্বিন নয়, কার্তিকে। শারদোৎসবও তাই হবে হেমন্তিকা উৎসব অর্থাৎ হেমন্তে। এ শতাব্দীতে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটছে। শেষবার এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে।

সাধারণভাবে মহালয়া মানে দুর্গাপূজার দিন গোনা, মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমী, দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো ইত্যাদি। কিন্তু আরও বড় গুরুত্ব আছে। মহালয়া মানে পিতৃপক্ষের শেষ আর দেবীপক্ষের শুরু। পিতৃপক্ষ হল পূর্বপুরুষদের তর্পাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ।

হিন্দু পুরাণমতে জীবিত ব্যক্তির আগের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করে। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যরে মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান।

পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় লীন হন এবং এ প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের উর্ধ্বে উঠে যান। এ কারণে কেবল জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে।

ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। আসল দুর্গাপূজা হল বসন্তে। সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয়।

সনাতন ধর্মে কোনো শুভ কাজ করতে গেলে সমগ্র জীবজগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। কার্যাদি অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে খুশি করা। শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন। সেই অনুসারে এই মহালয় তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন। পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন।

সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয় বলা হয়। এই মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও এটি শেষদিন। সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে একবার পিতা-মাতার উদ্দেশে পিন্ড দান করতে হয়। সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে তারা প্রয়াত হয়েছেন। মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য, তারা শুধু পূর্বপুরুষদের নয়, সৃষ্টির সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন।

পৌরাণিক মতে, মহাভারতের মহাযুদ্ধে কর্ণ মারা যাওয়ার পর তাকে খাদ্য হিসেবে সোনার অলঙ্কার দেয়া হয়। বিস্মিত, বিমূঢ় কর্ণ এর কারণ জানতে চান মহারাজ ইন্দ্রের কাছে। ইন্দ্র তখন তাকে জানান, কর্ণ তার জীবদ্দশায় কখনও পূর্বপুরুষদের খাবার ও জল অর্পণ করেননি। বরং তার দানের বিষয় ছিল শুধুই সোনা। আর সেই কর্মফলেই তার এই দশা।

পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে যে খাবার ও জল অর্পণ করতে হয়, তা কর্ণ জানতেন না বলে তাকে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়, যাতে তিনি পিতৃপুরুষদের জল ও খাবার অর্পণ করতে পারেন। এই সময়কালই পিতৃপক্ষ হিসেবে পরিচিত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুর্গাপূজার ক্ষণগণনার শুরু

আপডেট টাইম : ১২:২৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মা দুর্গা যখন আমাদের মাঝে আসেন, প্রকৃতিই সবার আগে স্বাগত জানায়। আকাশে তুলো মেঘের রাশি, কাশফুল আর শিউলি ফুলের সমাহারে মা আসেন আমাদের কাছে শরতের আশ্বিন মাসে। তবে এ বছর আর সেটা হবে না। মা আসবেন শরতের বদলে হেমন্তের কার্তিক মাসে, যা কিনা শারদোৎসবের ইতিহাসে একটু অন্যরকম।

এমনিতে মহালয়ার ছ’দিন পরই শুরু হয় দেবীর বোধন। সেভাবেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এ বছর মহালয়ার ৩৫ দিন পর দুর্গাপূজা। মহালয়া ১৭ সেপ্টেম্বর আর দেবীর বোধন অর্থাৎ মহাষষ্ঠী ২২ অক্টোবর।

পুরোহিতদের মতে, দু-দুটি অমাবস্যা একই মাসে হলে সে মাস মলমাস হিসেবে গণ্য হয়। আর মলমাসে কোনো শুভ কাজ হয় না। সে হিসাবে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস মলমাস। কারণ এ মাসে দুটি অমাবস্যা পড়েছে।

তাই পূজা হবে আশ্বিন নয়, কার্তিকে। শারদোৎসবও তাই হবে হেমন্তিকা উৎসব অর্থাৎ হেমন্তে। এ শতাব্দীতে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটছে। শেষবার এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে।

সাধারণভাবে মহালয়া মানে দুর্গাপূজার দিন গোনা, মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমী, দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো ইত্যাদি। কিন্তু আরও বড় গুরুত্ব আছে। মহালয়া মানে পিতৃপক্ষের শেষ আর দেবীপক্ষের শুরু। পিতৃপক্ষ হল পূর্বপুরুষদের তর্পাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ।

হিন্দু পুরাণমতে জীবিত ব্যক্তির আগের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করে। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যরে মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান।

পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় লীন হন এবং এ প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের উর্ধ্বে উঠে যান। এ কারণে কেবল জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে।

ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। আসল দুর্গাপূজা হল বসন্তে। সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয়।

সনাতন ধর্মে কোনো শুভ কাজ করতে গেলে সমগ্র জীবজগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। কার্যাদি অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে খুশি করা। শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন। সেই অনুসারে এই মহালয় তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন। পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন।

সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয় বলা হয়। এই মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও এটি শেষদিন। সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে একবার পিতা-মাতার উদ্দেশে পিন্ড দান করতে হয়। সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে তারা প্রয়াত হয়েছেন। মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য, তারা শুধু পূর্বপুরুষদের নয়, সৃষ্টির সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন।

পৌরাণিক মতে, মহাভারতের মহাযুদ্ধে কর্ণ মারা যাওয়ার পর তাকে খাদ্য হিসেবে সোনার অলঙ্কার দেয়া হয়। বিস্মিত, বিমূঢ় কর্ণ এর কারণ জানতে চান মহারাজ ইন্দ্রের কাছে। ইন্দ্র তখন তাকে জানান, কর্ণ তার জীবদ্দশায় কখনও পূর্বপুরুষদের খাবার ও জল অর্পণ করেননি। বরং তার দানের বিষয় ছিল শুধুই সোনা। আর সেই কর্মফলেই তার এই দশা।

পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে যে খাবার ও জল অর্পণ করতে হয়, তা কর্ণ জানতেন না বলে তাকে ১৬ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়, যাতে তিনি পিতৃপুরুষদের জল ও খাবার অর্পণ করতে পারেন। এই সময়কালই পিতৃপক্ষ হিসেবে পরিচিত হয়।