ঢাকা ০৯:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপিকে নামতেই দেবে না আওয়ামী লীগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৬
  • ৩০৬ বার

আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে কোনোভাবে মাঠে নামতে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এজন্য প্রয়োজনে তারা পেশিশক্তি দেখাবে। একই সঙ্গে ওইদিন সারা দেশের রাজপথও নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে ক্ষমতাসীন এ দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাইরে থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে রাজধানীতে ঢুকতে না পারে, এজন্য ৫ জানুয়ারি ভোর থেকেই মহানগরীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থান নেবে। একই সঙ্গে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মাঠে নামিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব জেলা-উপজেলা-থানা ও ইউনিয়নের রাজপথ দখলে নেবে। দুপুর থেকে রাজধানীর ১৭টি স্পটসহ সারাদেশে একযোগে বিজয় র‌্যালি, আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দল ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজধানীর সরকারদলীয় এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় এসব কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াত জোটের যে কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতেও হার্ডলাইনের থাকবে আওয়ামী লীগ। কোথাও বিএনপি বা তার জোটের নেতাকর্মী রাজপথে নামার চেষ্টা করলে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিহত করা হবে। বিশেষ করে যেখানেই নাশকতার চেষ্টা করা হবে, সেখানেই শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কাজে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন, বিএনপির হুমকিধমকি বা আন্দোলন গণমাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভঙ্গুর সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে রাজপথে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার দুঃসাহস বিএনপির নেই। তবে তারা ঝটিকা মিছিল বের করে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে। তাই এ অপতৎরতা রোধে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, অলিগলিসহ বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক প্রহরায় থাকবে। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেয়ে বিএনপি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে তা-ও পণ্ড করে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এজন্যও নানা ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে বিএনপিকে ধাওয়ার উপর রাখতে প্রশাসনও অনেকটা মুখিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনোভাবে মাঠে নামতে না পারে এজন্য ডিএমপির প্রতিটি জোনের ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে ব্যাপক ধরপাকড় চালানোরও প্রস্তুতি রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, বিগত ২০১৪ ও ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের নামে রাজপথে নেমে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়াও ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ মাঠে নামায় মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বিএনপিকে মাঠে নামতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে তাতে পুলিশ কোনো ধরনের বাধা দেবে না বলে দাবি করেছে ডিএমপি। পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু ঢাকা-ই নয় সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। স্পর্শকাতর প্রতিটি স্থানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনসহ ওই দিন পুরো বাহিনীকে যে কোনো ধরনের নাশকতা দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে থাকারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখেও কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এসব এলাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ও নয়াপল্টনস্থ দলীয় প্রধান কার্যালয়কে ঘিরেও যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত করতে না পারে, সে জন্য এ দুটি স্থানেও কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাদের পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও আমিনবাজার এলাকা প্রশাসনের কড়া নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড ও কমলাপুর রেলস্টেশনেও অনুরূপ ব্যবস্থা থাকবে। এসব এলাকার সরকারদলীয় সাংসদদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে ৫ জানুয়ারিতে আবারো একই স্থানে দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচির আহ্বান এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইস্যুটি রাজনীতির জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। ৫ জানুয়ারিতে আবারো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করল দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনীতির জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’। এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। আমরা মনে করেছিলাম পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশে ফিরছে। সেখানে অবশ্য সরকারি দলের দায়িত্ব বেশি। তবে তারা যদি ওই পরিবেশে না থাকতে চায়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। আশা করি, গত বছরের মতো সংঘাতময় পরিস্থিতি যেন না হয়।’ সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। কারণ আমরা সংঘাতও চাই না, সহিংসতাও চাই না। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে তারা যেন সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি না করেন। দুই দলের মধ্যে বিরোধ আছে, সেটা যেন তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ করে।’ এদিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি, সেটা পালন করার জন্যই দিয়েছি। গণতান্ত্রিক সমাজে সহাবস্থানের মাধ্যমে দুই দলের কর্মসূচি পালিত হতে পারে। তবে মনে হচ্ছে সরকারি দল ইচ্ছে করেই পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে।’ অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে কর্মসূচি গণতন্ত্রবিরোধী, সন্ত্রাসী কর্মকা-কে উসকে দিতে পারে, সেখানে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমাদের মাঠে থাকতেই হবে। তারা ৫ জানুয়ারিকে যেভাবে গণতন্ত্র হত্যা দিবস বলছে, এটা গণতন্ত্রের জন্য সর্বনাশ। এটা চলতে দেয়া যায় না।’ প্রশাসনের একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিকে মাঠছাড়া রাখতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সাজসাজ প্রস্তুতি নিলেও তারা তাদের উপর হামলার কোনো সুযোগই পাবে না। র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। আর এজন্য কৌশলী নানা ক্ষেত্র আগেভাগেই তৈরি করা হবে। বিশেষ করে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারা যাতে কোনো ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিতে না পারে সে ব্যবস্থাও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বিএনপির মাঠপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যের সত্যতার আভাস পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতারা জানান, গত শুক্রবার থেকেই পুলিশ তাদের বাসাবাড়িতে দফায় দফায় হানা দিচ্ছে। ৫ জানুয়ারি সমাবেশে যোগ দিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন বলে স্বীকার করেন ওই মাঠ নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারি ভোর থেকে মেট্রোপলিটন এলাকায় সাড়ে ৭ হাজার পোশাকধারী পুলিশ ও ১ হাজার রিজার্ভ ফোর্সসহ প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া টহলে থাকছে র‌্যাবের প্রায় দু’হাজার সদস্য। দাঙ্গা ফোর্সের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, (এপিবিএন), সোয়াত টিম ও বোম ডিস্পোজাল টিমকে একই সময় মাঠে নামানো হচ্ছে। অধিকতর স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে জলকামান ও রায়টকার মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। রমনা, নয়া পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইলের নাইটিংগেল ক্রসিং, মহাখালী, মিরপুর-১০, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর মোড়, শহীদ ফারুক সড়ক ও ডেমরাসহ নগরীর ৪৯টি পয়েন্টে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এসব স্পটে মোতায়েন থাকবে গোয়েন্দা ওয়াচম্যান ও ডিবির ভিডিও ও স্টিল ক্যামেরাম্যানরা। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ছবি, ভিডিও ফুটেজ এবং তথ্য সংগ্রহ করবে তারা। যাতে এসব ঘটনায় জড়িতদের পরবর্তী সময়ে সহজেই শনাক্ত করা যায়। ঢাকা মহানগরের মতো দেশের বাকি ৭টি মহানগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহরগুলোতেও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। – যায়যায়দিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিএনপিকে নামতেই দেবে না আওয়ামী লীগ

আপডেট টাইম : ১১:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০১৬

আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে কোনোভাবে মাঠে নামতে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এজন্য প্রয়োজনে তারা পেশিশক্তি দেখাবে। একই সঙ্গে ওইদিন সারা দেশের রাজপথও নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে ক্ষমতাসীন এ দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাইরে থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা যাতে রাজধানীতে ঢুকতে না পারে, এজন্য ৫ জানুয়ারি ভোর থেকেই মহানগরীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থান নেবে। একই সঙ্গে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মাঠে নামিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব জেলা-উপজেলা-থানা ও ইউনিয়নের রাজপথ দখলে নেবে। দুপুর থেকে রাজধানীর ১৭টি স্পটসহ সারাদেশে একযোগে বিজয় র‌্যালি, আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দল ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজধানীর সরকারদলীয় এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় এসব কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াত জোটের যে কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতেও হার্ডলাইনের থাকবে আওয়ামী লীগ। কোথাও বিএনপি বা তার জোটের নেতাকর্মী রাজপথে নামার চেষ্টা করলে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিহত করা হবে। বিশেষ করে যেখানেই নাশকতার চেষ্টা করা হবে, সেখানেই শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কাজে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন, বিএনপির হুমকিধমকি বা আন্দোলন গণমাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভঙ্গুর সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে রাজপথে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার দুঃসাহস বিএনপির নেই। তবে তারা ঝটিকা মিছিল বের করে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে। তাই এ অপতৎরতা রোধে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, অলিগলিসহ বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক প্রহরায় থাকবে। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেয়ে বিএনপি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে তা-ও পণ্ড করে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এজন্যও নানা ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে বিএনপিকে ধাওয়ার উপর রাখতে প্রশাসনও অনেকটা মুখিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনোভাবে মাঠে নামতে না পারে এজন্য ডিএমপির প্রতিটি জোনের ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে ব্যাপক ধরপাকড় চালানোরও প্রস্তুতি রয়েছে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, বিগত ২০১৪ ও ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের নামে রাজপথে নেমে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়াও ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ মাঠে নামায় মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বিএনপিকে মাঠে নামতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে তাতে পুলিশ কোনো ধরনের বাধা দেবে না বলে দাবি করেছে ডিএমপি। পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু ঢাকা-ই নয় সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। স্পর্শকাতর প্রতিটি স্থানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনসহ ওই দিন পুরো বাহিনীকে যে কোনো ধরনের নাশকতা দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে থাকারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখেও কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এসব এলাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ও নয়াপল্টনস্থ দলীয় প্রধান কার্যালয়কে ঘিরেও যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত করতে না পারে, সে জন্য এ দুটি স্থানেও কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাদের পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও আমিনবাজার এলাকা প্রশাসনের কড়া নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড ও কমলাপুর রেলস্টেশনেও অনুরূপ ব্যবস্থা থাকবে। এসব এলাকার সরকারদলীয় সাংসদদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে ৫ জানুয়ারিতে আবারো একই স্থানে দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচির আহ্বান এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইস্যুটি রাজনীতির জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। ৫ জানুয়ারিতে আবারো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করল দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনীতির জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’। এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। আমরা মনে করেছিলাম পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশে ফিরছে। সেখানে অবশ্য সরকারি দলের দায়িত্ব বেশি। তবে তারা যদি ওই পরিবেশে না থাকতে চায়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। আশা করি, গত বছরের মতো সংঘাতময় পরিস্থিতি যেন না হয়।’ সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। কারণ আমরা সংঘাতও চাই না, সহিংসতাও চাই না। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে তারা যেন সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি না করেন। দুই দলের মধ্যে বিরোধ আছে, সেটা যেন তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ করে।’ এদিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি, সেটা পালন করার জন্যই দিয়েছি। গণতান্ত্রিক সমাজে সহাবস্থানের মাধ্যমে দুই দলের কর্মসূচি পালিত হতে পারে। তবে মনে হচ্ছে সরকারি দল ইচ্ছে করেই পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে।’ অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে কর্মসূচি গণতন্ত্রবিরোধী, সন্ত্রাসী কর্মকা-কে উসকে দিতে পারে, সেখানে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমাদের মাঠে থাকতেই হবে। তারা ৫ জানুয়ারিকে যেভাবে গণতন্ত্র হত্যা দিবস বলছে, এটা গণতন্ত্রের জন্য সর্বনাশ। এটা চলতে দেয়া যায় না।’ প্রশাসনের একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিকে মাঠছাড়া রাখতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সাজসাজ প্রস্তুতি নিলেও তারা তাদের উপর হামলার কোনো সুযোগই পাবে না। র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। আর এজন্য কৌশলী নানা ক্ষেত্র আগেভাগেই তৈরি করা হবে। বিশেষ করে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারা যাতে কোনো ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিতে না পারে সে ব্যবস্থাও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বিএনপির মাঠপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যের সত্যতার আভাস পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতারা জানান, গত শুক্রবার থেকেই পুলিশ তাদের বাসাবাড়িতে দফায় দফায় হানা দিচ্ছে। ৫ জানুয়ারি সমাবেশে যোগ দিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন বলে স্বীকার করেন ওই মাঠ নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারি ভোর থেকে মেট্রোপলিটন এলাকায় সাড়ে ৭ হাজার পোশাকধারী পুলিশ ও ১ হাজার রিজার্ভ ফোর্সসহ প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া টহলে থাকছে র‌্যাবের প্রায় দু’হাজার সদস্য। দাঙ্গা ফোর্সের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, (এপিবিএন), সোয়াত টিম ও বোম ডিস্পোজাল টিমকে একই সময় মাঠে নামানো হচ্ছে। অধিকতর স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে জলকামান ও রায়টকার মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। রমনা, নয়া পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইলের নাইটিংগেল ক্রসিং, মহাখালী, মিরপুর-১০, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর মোড়, শহীদ ফারুক সড়ক ও ডেমরাসহ নগরীর ৪৯টি পয়েন্টে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এসব স্পটে মোতায়েন থাকবে গোয়েন্দা ওয়াচম্যান ও ডিবির ভিডিও ও স্টিল ক্যামেরাম্যানরা। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ছবি, ভিডিও ফুটেজ এবং তথ্য সংগ্রহ করবে তারা। যাতে এসব ঘটনায় জড়িতদের পরবর্তী সময়ে সহজেই শনাক্ত করা যায়। ঢাকা মহানগরের মতো দেশের বাকি ৭টি মহানগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহরগুলোতেও অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। – যায়যায়দিন