ঢাকা ০১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ই-মেইল চেটিংয়ের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সকাল হলেই এখন আর রানারকে দেখা যায় না। তার ঝোলা নিয়ে ছুটেন না নিশিদিন। দুঃখ বেদনা, হাসি কান্নার খবরের জন্য এখন আর কেউ চিঠির অপেক্ষায় থাকে না। আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তেই সব সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সারা দুনিয়ায়। পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। ঘরে ঘরে কম্পিউটার। হাতে হাতে মোবাইল ইন্টারনেট। বৃহদাকার দুনিয়াটাকে হাতে মুঠোয় এনে দিয়েছে প্রযুক্তি। যোগাযোগের মাধ্যম চিঠি এখন বিলুপ্ত প্রায়।

ম্যাসেজ, ই-মেইল, চেটিংয়েই ব্যস্ত সবাই। কাগজ কলম নিয়ে চিঠি লেখার দিন আর নাই। যারে যা চিঠি লিখে দিলাম সোনা বন্ধুর নামে/ চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে/ বিদেশ গিয়ে বন্ধু আমায় ভুলো না, চিঠি দিও পত্র দিও জানাইও ঠিকানা/ চিঠি দিও প্রতিদিন নইলে থাকতে পারবো না একদিন, চিঠি দিও/ চিঠিগুলো অনেক বড় হবে, পড়তে সকাল দুপুর আর রাত্রি চলে যাবে, চিঠি নিয়ে এমন কত আবেগজড়িত অসংখ্য গান বাজতো বেতার টিভিতে। কবির ভাষায়, রানার ছুটছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/ রানার ছুটছে, খবরের বোঝা হাতে/ রানার চলছে রানার/ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার রানারের দেখা মেলে না প্রযুক্তির এ যুগে।

এরও আগে যখন ডাকেরই প্রচলন হয়নি, তখন পোষা পায়রার পায়ে বেঁধে প্রিয়জনের কাছে বার্তা পাঠাতো মানুষ। এরপর এলো ডাকযোগ। প্রিয়জনের চিঠি পাওয়ার আশায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকার দিন শুরু হলো। সেই যুগ আর নেই। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে চিঠি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ কিছুকাল আগেও চিঠির ব্যবহার ছিল দেখার মতো। এক সময় পোষ্ট অফিসে খাম, পোস্টকার্ড, ডাকটিকিট, মানি অর্ডারসহ নানা পরিসেবা যুক্ত ছিল। আর বর্তমানে ডাকবিভাগের সেই সোনালি দিনগুলো এখন কেবলই অতীত। ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে চিঠি লেখার উৎসব ছিল। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি লোকে ছুটে যেত চিঠি লেখার জন্যে।

প্রিয়জনের চিঠির আশায় ডাক পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকার দিন আজ আর নেই। দিন গড়াচ্ছে, যুগ বদলাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে অনেক পুরনো রীতিনীতিগুলো। এমন একটা পুরোনো রীতি ছিল চিঠি লেখা। এমন এক সময় ছিল যখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। চিঠি চালাচালির মাধ্যমে পারস্পারিক যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। এমন এক সময় ছিল পায়রা বা কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে খবর পাঠানো হতো। সম্প্রতি পাক-ভারত উত্তেজনার এক মুহূর্তে কবুতরের পায়ে বাঁধা চিঠি নিয়ে হুলস্থুলও কম হয়নি। মনের মাধুরী মিসিয়ে চিঠি লেখার মজাই ছিল আলাদা। কাগজে লিখে খামে পুরে চিঠি পাঠানো হতো। চিঠি লেখার জন্যে ছিল পোস্টর্কাড ও বিভিন্ন রঙ বেরঙের প্যাড।

হাল জমানায় সব যোগাযোগই হয় এক নিমিষে। বার্তা আদান প্রদানে চিঠির বদলে সবার ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ইমেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, টুইটারসহ কত প্রযুক্তির সুবিধা আজ সবার জন্যে অবারিত। এখন শহরের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই রূপগঞ্জের গ্রামগুলোও। রূপগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও এখন এসব সুবিধা পৌঁছে গেছে। যখন ইচ্ছে প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগের সুযোগটা তারাও নিচ্ছে।

এখন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয় পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও ইমেইল সেবা। তাই ডাকঘরের মাধ্যমে মান্ধাতা যুগের চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রূপগঞ্জে ডাক বিভাগ বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ ডাকঘর দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে। অধিকাংশ ডাকঘরে নেই কোনো ডাকবাক্স। দুই একটি থাকলেও তার মধ্যে চিঠির কোনো ছিটেফোঁটা নেই।

এক সময় ডাকঘরগুলো মুখরিত থাকতো রানার কিংবা ডাক পিয়নের পদচারণায়। মানুষ ডাকঘরের সামনে ভিড় জমাতো খোঁজ নেয়ার জন্যে কখন আসবে কাঙ্ক্ষিত সেই চিঠি। কতই না সুখ-দুঃখ আর আনন্দ-বেদনার চিঠিতে ভরা থাকতো ডাক পিয়নের ঝোলা। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রাম্য হাট বাজারে বিলি করতেন এসব চিঠিপত্র। যারা চিঠি লিখতে পারতো না তারা তাদের অভিব্যক্তি মুখে বলে শিক্ষিতদের দিয়ে চিঠি লেখাতো ও প্রাপ্ত চিঠি পড়াতো। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ডাক বিভাগ লেখকদের চিঠিগুলো প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রের অফিসে পৌঁছে দিতেন ডাক পিয়ন। কিন্তু ডাক বিভাগের সেই সোনালী ঐতিহ্য আজ আর নেই। বর্তমান মোবাইল ফোনের যুগে এসে ওঠে যাচ্ছে চিঠি লেখার প্রচলন। চিঠির সেই স্থান দখল করেছে মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেট।

রূপগঞ্জে মোট ১২টি ডাকঘর রয়েছে। অধিকাংশ ডাকঘরের পাকা বিল্ডিং, সোলার প্যানেল স্থাপন ও আসবাবপত্র নতুন করে তৈরি করা হলেও এসব ডাকঘরের দাপ্তরিক কোনো কাজকর্ম নেই বললেই চলে। প্রতিটি ডাকঘরে একজন ডাক বিলিকারী ও একজন পোস্টমাস্টার রয়েছে। তবে ডাকঘরগুলোতে রানার বা ডাক বিলিকারীর কোনো খোঁজ মেলে না মাসান্তরেও। অন্যদিকে সপ্তাহান্তেও দেখা মেলে না পোস্টমাস্টারের। এরূপ করুণ অবস্থার কারণে ডাক বিভাগের প্রতি আস্তা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় ডাক বিভাগের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আধুনিকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।

নগরপাড়া এলাকার ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আফতাব উদ্দিন জানান, আমাদের কোনো বেতন নেই, শুধু সন্মানী ভাতা দেয় ২৪শ’ টাকা। এতে আমাদের সংসার চলে না। ফলে বাধ্য হয়েই অন্য কাজ করতে হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা পোস্ট মাস্টার ছামাদ মোল্লা বলেন, আমাদের উপজেলা ডাকঘর ভালই চলছে। চিঠি পত্রের আদান প্রদান তেমন একটা না হলেও কাজের পরিধিও বেড়েছে। আমাদের ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প (ব্যাংকিং খাত) আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। প্রতিদিন গড়ে ৪০/৫০ লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে এখানে। তবে ডাক বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

অন্যদিকে একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল এই যুগে অনেক কিছুরই আধুনিকায়ন হলেও ডাক বিভাগের খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। সরকারি ডাক বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কুরিয়ার সার্ভিস নামে যে চিঠি ও টাকা পয়সা আদান প্রদানের মাধ্যম চালু করেছে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। এসব কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অল্প ও সঠিক সময়ে সেবা পাওয়ায় মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। সরকারি ডাক বিভাগ পুরনো ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে আধুনিকায়নের মাধ্যমে আবারো জনপ্রিয় করার সুযোগ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আটকে আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ই-মেইল চেটিংয়ের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি

আপডেট টাইম : ০২:৪৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সকাল হলেই এখন আর রানারকে দেখা যায় না। তার ঝোলা নিয়ে ছুটেন না নিশিদিন। দুঃখ বেদনা, হাসি কান্নার খবরের জন্য এখন আর কেউ চিঠির অপেক্ষায় থাকে না। আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তেই সব সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সারা দুনিয়ায়। পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। ঘরে ঘরে কম্পিউটার। হাতে হাতে মোবাইল ইন্টারনেট। বৃহদাকার দুনিয়াটাকে হাতে মুঠোয় এনে দিয়েছে প্রযুক্তি। যোগাযোগের মাধ্যম চিঠি এখন বিলুপ্ত প্রায়।

ম্যাসেজ, ই-মেইল, চেটিংয়েই ব্যস্ত সবাই। কাগজ কলম নিয়ে চিঠি লেখার দিন আর নাই। যারে যা চিঠি লিখে দিলাম সোনা বন্ধুর নামে/ চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে/ বিদেশ গিয়ে বন্ধু আমায় ভুলো না, চিঠি দিও পত্র দিও জানাইও ঠিকানা/ চিঠি দিও প্রতিদিন নইলে থাকতে পারবো না একদিন, চিঠি দিও/ চিঠিগুলো অনেক বড় হবে, পড়তে সকাল দুপুর আর রাত্রি চলে যাবে, চিঠি নিয়ে এমন কত আবেগজড়িত অসংখ্য গান বাজতো বেতার টিভিতে। কবির ভাষায়, রানার ছুটছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/ রানার ছুটছে, খবরের বোঝা হাতে/ রানার চলছে রানার/ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার রানারের দেখা মেলে না প্রযুক্তির এ যুগে।

এরও আগে যখন ডাকেরই প্রচলন হয়নি, তখন পোষা পায়রার পায়ে বেঁধে প্রিয়জনের কাছে বার্তা পাঠাতো মানুষ। এরপর এলো ডাকযোগ। প্রিয়জনের চিঠি পাওয়ার আশায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকার দিন শুরু হলো। সেই যুগ আর নেই। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে চিঠি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ কিছুকাল আগেও চিঠির ব্যবহার ছিল দেখার মতো। এক সময় পোষ্ট অফিসে খাম, পোস্টকার্ড, ডাকটিকিট, মানি অর্ডারসহ নানা পরিসেবা যুক্ত ছিল। আর বর্তমানে ডাকবিভাগের সেই সোনালি দিনগুলো এখন কেবলই অতীত। ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে চিঠি লেখার উৎসব ছিল। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি লোকে ছুটে যেত চিঠি লেখার জন্যে।

প্রিয়জনের চিঠির আশায় ডাক পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকার দিন আজ আর নেই। দিন গড়াচ্ছে, যুগ বদলাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে অনেক পুরনো রীতিনীতিগুলো। এমন একটা পুরোনো রীতি ছিল চিঠি লেখা। এমন এক সময় ছিল যখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। চিঠি চালাচালির মাধ্যমে পারস্পারিক যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। এমন এক সময় ছিল পায়রা বা কবুতরের পায়ে চিঠি বেঁধে খবর পাঠানো হতো। সম্প্রতি পাক-ভারত উত্তেজনার এক মুহূর্তে কবুতরের পায়ে বাঁধা চিঠি নিয়ে হুলস্থুলও কম হয়নি। মনের মাধুরী মিসিয়ে চিঠি লেখার মজাই ছিল আলাদা। কাগজে লিখে খামে পুরে চিঠি পাঠানো হতো। চিঠি লেখার জন্যে ছিল পোস্টর্কাড ও বিভিন্ন রঙ বেরঙের প্যাড।

হাল জমানায় সব যোগাযোগই হয় এক নিমিষে। বার্তা আদান প্রদানে চিঠির বদলে সবার ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ইমেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, টুইটারসহ কত প্রযুক্তির সুবিধা আজ সবার জন্যে অবারিত। এখন শহরের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই রূপগঞ্জের গ্রামগুলোও। রূপগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও এখন এসব সুবিধা পৌঁছে গেছে। যখন ইচ্ছে প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগের সুযোগটা তারাও নিচ্ছে।

এখন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয় পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও ইমেইল সেবা। তাই ডাকঘরের মাধ্যমে মান্ধাতা যুগের চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রূপগঞ্জে ডাক বিভাগ বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ ডাকঘর দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে। অধিকাংশ ডাকঘরে নেই কোনো ডাকবাক্স। দুই একটি থাকলেও তার মধ্যে চিঠির কোনো ছিটেফোঁটা নেই।

এক সময় ডাকঘরগুলো মুখরিত থাকতো রানার কিংবা ডাক পিয়নের পদচারণায়। মানুষ ডাকঘরের সামনে ভিড় জমাতো খোঁজ নেয়ার জন্যে কখন আসবে কাঙ্ক্ষিত সেই চিঠি। কতই না সুখ-দুঃখ আর আনন্দ-বেদনার চিঠিতে ভরা থাকতো ডাক পিয়নের ঝোলা। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রাম্য হাট বাজারে বিলি করতেন এসব চিঠিপত্র। যারা চিঠি লিখতে পারতো না তারা তাদের অভিব্যক্তি মুখে বলে শিক্ষিতদের দিয়ে চিঠি লেখাতো ও প্রাপ্ত চিঠি পড়াতো। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ডাক বিভাগ লেখকদের চিঠিগুলো প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রের অফিসে পৌঁছে দিতেন ডাক পিয়ন। কিন্তু ডাক বিভাগের সেই সোনালী ঐতিহ্য আজ আর নেই। বর্তমান মোবাইল ফোনের যুগে এসে ওঠে যাচ্ছে চিঠি লেখার প্রচলন। চিঠির সেই স্থান দখল করেছে মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেট।

রূপগঞ্জে মোট ১২টি ডাকঘর রয়েছে। অধিকাংশ ডাকঘরের পাকা বিল্ডিং, সোলার প্যানেল স্থাপন ও আসবাবপত্র নতুন করে তৈরি করা হলেও এসব ডাকঘরের দাপ্তরিক কোনো কাজকর্ম নেই বললেই চলে। প্রতিটি ডাকঘরে একজন ডাক বিলিকারী ও একজন পোস্টমাস্টার রয়েছে। তবে ডাকঘরগুলোতে রানার বা ডাক বিলিকারীর কোনো খোঁজ মেলে না মাসান্তরেও। অন্যদিকে সপ্তাহান্তেও দেখা মেলে না পোস্টমাস্টারের। এরূপ করুণ অবস্থার কারণে ডাক বিভাগের প্রতি আস্তা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় ডাক বিভাগের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আধুনিকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা।

নগরপাড়া এলাকার ডাকঘরের পোস্টমাস্টার আফতাব উদ্দিন জানান, আমাদের কোনো বেতন নেই, শুধু সন্মানী ভাতা দেয় ২৪শ’ টাকা। এতে আমাদের সংসার চলে না। ফলে বাধ্য হয়েই অন্য কাজ করতে হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা পোস্ট মাস্টার ছামাদ মোল্লা বলেন, আমাদের উপজেলা ডাকঘর ভালই চলছে। চিঠি পত্রের আদান প্রদান তেমন একটা না হলেও কাজের পরিধিও বেড়েছে। আমাদের ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প (ব্যাংকিং খাত) আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। প্রতিদিন গড়ে ৪০/৫০ লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে এখানে। তবে ডাক বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

অন্যদিকে একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল এই যুগে অনেক কিছুরই আধুনিকায়ন হলেও ডাক বিভাগের খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। সরকারি ডাক বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কুরিয়ার সার্ভিস নামে যে চিঠি ও টাকা পয়সা আদান প্রদানের মাধ্যম চালু করেছে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। এসব কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অল্প ও সঠিক সময়ে সেবা পাওয়ায় মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। সরকারি ডাক বিভাগ পুরনো ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে আধুনিকায়নের মাধ্যমে আবারো জনপ্রিয় করার সুযোগ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আটকে আছে।