হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা মিলছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছের। দামও নাগালে, ফলে খুশি ক্রেতারা। অন্যদিকে স্থানীয় বিল জলাশয়ে প্রচুর দেশি মাছ পেয়ে জেলেরাও খুশি।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি জমে থাকা চাষকৃত জমিতে ভেসে উঠছে মাছ। আর ওই মাছ ধরার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কেউ চালুনি, কেউ ডালি, কেউ আবার ছোট জাল দিয়ে ধরছে সেই মাছ। এ দৃশ্য যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে হারানো সেই সোনালী অতীত।
স্থানীয়রা বলছেন, কুড়িগ্রাম জেলায় এবার প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রায় ৪ মাসের টানা বর্ষায় প্রকৃতি তার স্বরূপ ফিরে পেয়েছিল। বৃষ্টি আর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী ও খাল-বিল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বর্ষাকাল যেন ভালোভাবেই জানান দেয় এবার। বৃষ্টির পানির সাথে উঠে আসা ডিমওয়ালা দেশি প্রজাতির মা মাছগুলো জেলার ১৬টি নদ-নদী ও খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। ফলে এবার দেশি মাছের প্রচুর সমারোহ দেখা যাচ্ছে জেলা ও উপজেলা শহরসহ গ্রামীণ হাট-বাজারগুলোতে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। কিন্তু এর আগেই বিভিন্ন জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে মা মাছ নিধন করতো এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা। বিভিন্ন পয়েন্টে কুঁচ, জুইতা, টেঁটা, কারেন্ট জাল, বেড়জাল, চাই, খরাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধনের উৎসব চলতো। বর্ষা আসার আগেই খাল বিলে মা মাছ নিধন চললেও দেখার কেউ ছিলোনা। কিন্তু এবার পানি বেশি হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন নদ-নদী, খাল-বিল পানিতে পূর্ণ থাকায় সেভাবে মা মাছ নিধন করতে পারেনি মাছ শিকারীরা।
জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, কালজনী, গঙ্গাধর ও সংকোষ নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিল মূলত মাছের প্রধান উৎস।
ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মৎস্যজীবি মন্টু জানান, বর্ষা মৌসুমে মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। ওই সময় এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি কারেন্ট জাল ও ভারতীয় এক প্রকার টানা জাল দিয়ে মা মাছ শিকার করার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন হচ্ছিল না। ফলে দেশি মাছগুলো বিলুপ্তির পথে। অপর দিকে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে বর্ষা মৌসুমেও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে উত্তরাঞ্চলের খরা প্রবণ এ উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় দেশি প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পারতো না। যতটুকু বংশ বিস্তার ঘটতো তাও আবার খরায় শুকিয়ে যাওয়ায় খাল-বিল সেচে নিধন করা হতো দেশি মাছের পোনা। কিন্তু এবার বন্যা ও বৃষ্টির পানি স্থায়ী হওয়ায় উপজেলার সোনাহাট ছড়া, পাইকেরছড়া, বহলগুড়ি বিল, কেদার বিল, তিলাই ছড়া, ভেড়ভেড়ি বিল, দলবাড়ী বিল, ঝুকিয়া বিল, নাউডাঙ্গা বিল, নলেয়া নতুন ছড়া ও শরবোঝা বিলসহ ছোট বড় অনেক খাল বিলে প্রচুর পরিমাণে দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার মৎস্যজীবী তৈয়বুর রহমান জানান, এবার মাছের প্রজননের সময় থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে লোকজন বাইরে খুব একটা বের হতে না পারায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র স্বাভাবিক ছিল। এ কারণে উপজেলার গ্রামগঞ্জের হাটবাজার গুলোতে নানা ধরনের দেশি মাছের সমাগম চোখে পড়ছে।
সুস্বাদু ও পুষ্টি গুণে ভরা দেশীয় এসব মাছের মধ্যে রয়েছে- কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, শোল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, টাকি, চিতল, বালিয়া, কাকিলা, চাপিলা, চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, বাটা, পিয়ালি, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, কাজলি, চ্যাং, ছোট চিংড়ি, বাতাসি, বড় বাইম, শালবাইম, কুচিয়া, টাটকিনি, ধুতরা, গছি, বইরালি, গোলসা ইত্যাদি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এবার আগাম বন্যা আসায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় জেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে মাছের প্রজনন স্বাভাবিক ছিল। পাশাপাশি জেলার ১৯টি প্লাবণ ভূমিতে দেশি মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় জেলায় দেশি মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।