ঢাকা ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষমুক্ত টমেটোয় রিপনের দারিদ্র্যমুক্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৬:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জানুয়ারী ২০১৬
  • ৪৯২ বার

সারি সারি টমেটো গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে অজস্র টমেটো। কোনোটা পাকা, আবার কোনোটা আধাপাকা। রয়েছে কাঁচা সবুজ টমেটোও। আর পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক এনামুল হক রিপন।

গাছগুলোর যত্ন করছেন নিজ সন্তানের মতো। একটির পর একটি গাছ দেখছেন। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পাতা ও কাণ্ড নেড়ে দেখছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন তার সন্তানতুল্য গাছের পরিচর্যায় কোনো অবহেলা হচ্ছে কী-না। তিনি স্বপ্ন দেখছেন, নতুন জাতের এ টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবার।

সম্প্রতি এক সকালে এরকমই দৃশ্য চোখে পড়ল রিপনের টমোটো ক্ষেতে।

রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার বোগদামারি এলাকায় চলতি মৌসুমে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিনি রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত টমেটো চাষ করেছেন। এসব টমোটোর বিশেষত্ব হচ্ছে, কোনো ধরনের রাসায়নিক বিষ ব্যবহার না করে প্রাকৃতিকভাবে গাছেই পাকে এ জাতের টমেটো।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে গাছে পাকানো পদ্ধতিতে ৪০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে।

বোগদামারী এলাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম জানান, মাচা পদ্ধতিতে গাছে পাকানো টমেটো হলো বিজলী-১১ জাতের। অক্টোবর মাসের শুরুতে এ জাতের বীজতলা তৈরি করা হয়। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জমিতে চারা রোপণ করা হয়। রোপণের ১৫ দিন পর বাঁশের খুঁটি এবং বাতা দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। গাছগুলো বাতার সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। গাছের বয়স একমাস হওয়ার পর থেকেই ফুল আসতে থাকে। দেড়মাস বয়সে ফল দেওয়া শুরু করে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আড়াই মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গাছে টমেটো ধরে।
তিনি জানান, এ জাতের টমেটো চাষে খুবই অল্প পরিমাণ ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি, টিএসপি সার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ব্যবহার করা হয় কেঁচোর বর্জ্য থেকে তৈরি কম্পোট সার। কেঁচোর সার খুবই শক্তিশালী। জমির উর্বরতা এবং গাছের বৃদ্ধিতে এ জৈব সার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

কৃষক রিপন জানান, তার সাড়ে বিঘা জমিতে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমবার চাষ করার জন্য খরচ একটু বেশি হয়েছে। কারণ, চলতি মৌসুমিতে মাচা তৈরির জন্য যে বাঁশ কেনা হয়েছে তা আগামী মৌসুমেও ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, সেচ, সার, কৃষিশ্রমিক, দড়ি, নেট ও পাইপসহ অন্য আনুষঙ্গিক খরচ আছে। এর ফলে প্রতিবিঘা জমিতে অন্তত ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়।
রিপন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ জাতের টমেটো সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত। কেননা, এ টমেটো গাছেই পাকে। পাকার পরে বোঁটাসহ তা গাছ থেকে ছেঁড়া হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে অন্যজাতের টমেটো গাছ থেকে কাঁচা অবস্থায় পাড়া হয়। এরপরে রাসায়নিক বা বিভিন্ন ধরনের হরমোনের মাধ্যমে পাকানো হয়। এর ফলে ওইসব জাতের টমেটোর স্বাদ সেভাবে থাকে না। কিন্তু মাচা পদ্ধতির বিষমুক্ত টমেটোর চাহিদা বেশি। এ জাতের টমেটো পাকাতে হরমোন ব্যবহার না করায় সাধারণ মানুষ এটি বেশি পছন্দ করেন।

রিপন তার সফলতার ব্যাপারে বলেন, আমি সবেমাত্র টমেটো জমি থেকে উঠাতে শুরু করেছি। এর মধ্যে ১০ মণ টমেটো বিক্রি করেছি। প্রতিমণ টমেটোর দাম পেয়েছি দেড় হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে একবার করে টমেটো উঠানো হবে। প্রত্যেক বিঘায় অন্তত ৩০০ থেকে ৩৫০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। সে ক্ষেত্রে আমি প্রতিবিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হলে শিক্ষিত যুবকরা টমেটো চাষ করে সফল হতে পারেন। আমার এ কাজে সহযোগিতা করছেন, পিরিজপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ। আগামীতে তিনি টমেটোর পাশাপাশি অন্য ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোজদার হোসেন বলেন, এ জাতের টমেটো চাষে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। হরমোনমুক্ত বিশুদ্ধ টমেটো হওয়ার কারণে এর চাহিদা রয়েছে। বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়। ফলে কৃষকরা আগামীতে এ জাতের টমেটো চাষে আরো বেশি উৎসাহিত হবেন এবং আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিষমুক্ত টমেটোয় রিপনের দারিদ্র্যমুক্তি

আপডেট টাইম : ০২:৪৬:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জানুয়ারী ২০১৬

সারি সারি টমেটো গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে অজস্র টমেটো। কোনোটা পাকা, আবার কোনোটা আধাপাকা। রয়েছে কাঁচা সবুজ টমেটোও। আর পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন কৃষক এনামুল হক রিপন।

গাছগুলোর যত্ন করছেন নিজ সন্তানের মতো। একটির পর একটি গাছ দেখছেন। পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পাতা ও কাণ্ড নেড়ে দেখছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন তার সন্তানতুল্য গাছের পরিচর্যায় কোনো অবহেলা হচ্ছে কী-না। তিনি স্বপ্ন দেখছেন, নতুন জাতের এ টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবার।

সম্প্রতি এক সকালে এরকমই দৃশ্য চোখে পড়ল রিপনের টমোটো ক্ষেতে।

রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার বোগদামারি এলাকায় চলতি মৌসুমে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিনি রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত টমেটো চাষ করেছেন। এসব টমোটোর বিশেষত্ব হচ্ছে, কোনো ধরনের রাসায়নিক বিষ ব্যবহার না করে প্রাকৃতিকভাবে গাছেই পাকে এ জাতের টমেটো।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন পদ্ধতিতে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে গাছে পাকানো পদ্ধতিতে ৪০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে।

বোগদামারী এলাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম জানান, মাচা পদ্ধতিতে গাছে পাকানো টমেটো হলো বিজলী-১১ জাতের। অক্টোবর মাসের শুরুতে এ জাতের বীজতলা তৈরি করা হয়। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জমিতে চারা রোপণ করা হয়। রোপণের ১৫ দিন পর বাঁশের খুঁটি এবং বাতা দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। গাছগুলো বাতার সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। গাছের বয়স একমাস হওয়ার পর থেকেই ফুল আসতে থাকে। দেড়মাস বয়সে ফল দেওয়া শুরু করে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আড়াই মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গাছে টমেটো ধরে।
তিনি জানান, এ জাতের টমেটো চাষে খুবই অল্প পরিমাণ ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি, টিএসপি সার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ব্যবহার করা হয় কেঁচোর বর্জ্য থেকে তৈরি কম্পোট সার। কেঁচোর সার খুবই শক্তিশালী। জমির উর্বরতা এবং গাছের বৃদ্ধিতে এ জৈব সার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

কৃষক রিপন জানান, তার সাড়ে বিঘা জমিতে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমবার চাষ করার জন্য খরচ একটু বেশি হয়েছে। কারণ, চলতি মৌসুমিতে মাচা তৈরির জন্য যে বাঁশ কেনা হয়েছে তা আগামী মৌসুমেও ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, সেচ, সার, কৃষিশ্রমিক, দড়ি, নেট ও পাইপসহ অন্য আনুষঙ্গিক খরচ আছে। এর ফলে প্রতিবিঘা জমিতে অন্তত ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়।
রিপন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ জাতের টমেটো সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত। কেননা, এ টমেটো গাছেই পাকে। পাকার পরে বোঁটাসহ তা গাছ থেকে ছেঁড়া হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে অন্যজাতের টমেটো গাছ থেকে কাঁচা অবস্থায় পাড়া হয়। এরপরে রাসায়নিক বা বিভিন্ন ধরনের হরমোনের মাধ্যমে পাকানো হয়। এর ফলে ওইসব জাতের টমেটোর স্বাদ সেভাবে থাকে না। কিন্তু মাচা পদ্ধতির বিষমুক্ত টমেটোর চাহিদা বেশি। এ জাতের টমেটো পাকাতে হরমোন ব্যবহার না করায় সাধারণ মানুষ এটি বেশি পছন্দ করেন।

রিপন তার সফলতার ব্যাপারে বলেন, আমি সবেমাত্র টমেটো জমি থেকে উঠাতে শুরু করেছি। এর মধ্যে ১০ মণ টমেটো বিক্রি করেছি। প্রতিমণ টমেটোর দাম পেয়েছি দেড় হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে একবার করে টমেটো উঠানো হবে। প্রত্যেক বিঘায় অন্তত ৩০০ থেকে ৩৫০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। সে ক্ষেত্রে আমি প্রতিবিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হলে শিক্ষিত যুবকরা টমেটো চাষ করে সফল হতে পারেন। আমার এ কাজে সহযোগিতা করছেন, পিরিজপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ। আগামীতে তিনি টমেটোর পাশাপাশি অন্য ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোজদার হোসেন বলেন, এ জাতের টমেটো চাষে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। হরমোনমুক্ত বিশুদ্ধ টমেটো হওয়ার কারণে এর চাহিদা রয়েছে। বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়। ফলে কৃষকরা আগামীতে এ জাতের টমেটো চাষে আরো বেশি উৎসাহিত হবেন এবং আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।