ঢাকা ০২:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোয়াইট টি’র দাম ও কদর বেশি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৯:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০
  • ১৯০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) মৌলভীবাজারের চাম্পারায় চা বাগানের উৎপাদিত সিলভার নিডল গ্রেডের ‘হোয়াইট টি’ এর দাম ও কদর বেশি। বিচক্ষণ ব্যবস্থাপকের উদ্যোগে কষ্টসাধ্য, গুণগত মানসম্পন্ন ও সময়বহুল উৎপাদিত এ চা প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নিলামে বিক্রি হয়েছে। এই চায়ের দর উঠেছে প্রতি কেজি দু’হাজার ৫শ’ টাকা। প্রথমবারের মতো গত জুলাই মাসে নিলামে ওঠা এই দামি চায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ কেজি। চা বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, হোয়াইট টি উৎপাদনের জন্য বিশেষ যত্ন ও সতর্কতা প্রয়োজন। চা গাছের অগ্রভাগের শুধু কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয়। এই কুঁড়ি সংগ্রহ বেশ সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া সব স্থানে অগ্রভাগের কুঁড়িও পাওয়া যায় না।

কুঁড়ি সংগ্রহের পর বিশেষ ব্যবস্থায় সতর্কতার সঙ্গে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উৎপাদন সম্ভব। তবে এই চা ব্যয়বহুলও। যার অধিকাংশ ক্রেতা বিদেশি ও পর্যটক এবং দেশের সৌখিন চা-পায়ীরা। হোয়াইট টি নামে পরিচিত হলেও এই চা-এর রং পুরোপুরি সাদা নয়। এটি দেখতে অনেকটা গ্রীন টি এর মতো। তবে হোয়াইট টি গরম পানিতে দেয়ার পর রূপালী আভা দৃশ্যমান হয়। সিলেট অঞ্চলে সাদা চায়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) কমলগঞ্জের চাম্পারায় বাগানে উৎপাদিত এই চা নিলামে তুলে পূর্ব বাংলা ব্রোকার্স। শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের পদ্মা টি সাপ্লাই নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতি কেজি ২ হাজার ৫শ’ টাকা দরে সবগুলো চা কিনে নেয়। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রের ইতিহাসে গত জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো হোয়াইট টি নিলাম বাজারে ওঠে এবং সবটুকু চা-ই বিক্রি হয়ে যায়। চাম্পারায় চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, আরো কিছু চা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক ও সময়বহুল ১০ কেজি চা উৎপাদন করে দাম ও সাড়া পাওয়া গেছে। এজন্য আমরা আনন্দবোধ করছি। তবে এই চায়ের উৎপাদন খরচও বেশি। তিনি আরো বলেন, এই হোয়াইট টি উৎপাদনের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। আগামীতে আমরা হোয়াইট টি’র আবাদ সম্প্রসারণের চিন্তা-ভাবনা করছি।
তিনি জানান, গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘হোয়াইট টি’ নিলামে উঠেছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানির চাম্পারায় চা-বাগানে উৎপাদিত দশ কেজি হোয়াইট টি চট্টগ্রামে নিলামে ক্যাটালগভুক্ত করেছে পূর্ব বাংলা ব্রোকার্স লিমিটেড। অচিরেই আমরা এই চা প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করতে পারবো।
চা বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলভার নিডেল গ্রেড-এর এই চা প্রাথমিকভাবে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ানা প্রদেশে উৎপাদিত হয়। সম্প্রতি পূর্ব নেপাল, তাইওয়ান, উত্তর থাইল্যান্ড, দক্ষিণ শ্রীলংকা ও ভারতে এই চায়ের চাষ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চায়ের বাজারে সাদা চা-কে এখনো চায়না হোয়াইট বা ফুজিয়ান হোয়াইট নামে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় এ চা রপ্তানি হয়। ‘কাজী এন্ড কাজী’ সেখানে তা রপ্তানি করে থাকে।
তাদের মতে, হোয়াইট টি এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ইমুইন সিস্টেম বাড়ায়, রক্তচাপ কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি, ডায়াবেটিস ও ওজন কমায়, দাঁতকে ব্যাকটিরিয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির কমলগঞ্জের ডিজিএম মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, হোয়াইট টি চাম্পারায় চা বাগানে উৎপাদিত হয়েছে। তবে এই চা উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ কুঁড়ি দরকার সেটি সচরাচর সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি। আপাতত চাম্পারায় চা বাগান থেকেই হোয়াইট টি উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। পরবর্তীতে এর পরিসর আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হোয়াইট টি’র দাম ও কদর বেশি

আপডেট টাইম : ০৩:০৯:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) মৌলভীবাজারের চাম্পারায় চা বাগানের উৎপাদিত সিলভার নিডল গ্রেডের ‘হোয়াইট টি’ এর দাম ও কদর বেশি। বিচক্ষণ ব্যবস্থাপকের উদ্যোগে কষ্টসাধ্য, গুণগত মানসম্পন্ন ও সময়বহুল উৎপাদিত এ চা প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নিলামে বিক্রি হয়েছে। এই চায়ের দর উঠেছে প্রতি কেজি দু’হাজার ৫শ’ টাকা। প্রথমবারের মতো গত জুলাই মাসে নিলামে ওঠা এই দামি চায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ কেজি। চা বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, হোয়াইট টি উৎপাদনের জন্য বিশেষ যত্ন ও সতর্কতা প্রয়োজন। চা গাছের অগ্রভাগের শুধু কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয়। এই কুঁড়ি সংগ্রহ বেশ সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া সব স্থানে অগ্রভাগের কুঁড়িও পাওয়া যায় না।

কুঁড়ি সংগ্রহের পর বিশেষ ব্যবস্থায় সতর্কতার সঙ্গে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উৎপাদন সম্ভব। তবে এই চা ব্যয়বহুলও। যার অধিকাংশ ক্রেতা বিদেশি ও পর্যটক এবং দেশের সৌখিন চা-পায়ীরা। হোয়াইট টি নামে পরিচিত হলেও এই চা-এর রং পুরোপুরি সাদা নয়। এটি দেখতে অনেকটা গ্রীন টি এর মতো। তবে হোয়াইট টি গরম পানিতে দেয়ার পর রূপালী আভা দৃশ্যমান হয়। সিলেট অঞ্চলে সাদা চায়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) কমলগঞ্জের চাম্পারায় বাগানে উৎপাদিত এই চা নিলামে তুলে পূর্ব বাংলা ব্রোকার্স। শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের পদ্মা টি সাপ্লাই নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতি কেজি ২ হাজার ৫শ’ টাকা দরে সবগুলো চা কিনে নেয়। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রের ইতিহাসে গত জুলাই মাসে প্রথমবারের মতো হোয়াইট টি নিলাম বাজারে ওঠে এবং সবটুকু চা-ই বিক্রি হয়ে যায়। চাম্পারায় চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, আরো কিছু চা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক ও সময়বহুল ১০ কেজি চা উৎপাদন করে দাম ও সাড়া পাওয়া গেছে। এজন্য আমরা আনন্দবোধ করছি। তবে এই চায়ের উৎপাদন খরচও বেশি। তিনি আরো বলেন, এই হোয়াইট টি উৎপাদনের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। আগামীতে আমরা হোয়াইট টি’র আবাদ সম্প্রসারণের চিন্তা-ভাবনা করছি।
তিনি জানান, গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘হোয়াইট টি’ নিলামে উঠেছে। ন্যাশনাল টি কোম্পানির চাম্পারায় চা-বাগানে উৎপাদিত দশ কেজি হোয়াইট টি চট্টগ্রামে নিলামে ক্যাটালগভুক্ত করেছে পূর্ব বাংলা ব্রোকার্স লিমিটেড। অচিরেই আমরা এই চা প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করতে পারবো।
চা বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলভার নিডেল গ্রেড-এর এই চা প্রাথমিকভাবে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ানা প্রদেশে উৎপাদিত হয়। সম্প্রতি পূর্ব নেপাল, তাইওয়ান, উত্তর থাইল্যান্ড, দক্ষিণ শ্রীলংকা ও ভারতে এই চায়ের চাষ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চায়ের বাজারে সাদা চা-কে এখনো চায়না হোয়াইট বা ফুজিয়ান হোয়াইট নামে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় এ চা রপ্তানি হয়। ‘কাজী এন্ড কাজী’ সেখানে তা রপ্তানি করে থাকে।
তাদের মতে, হোয়াইট টি এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ইমুইন সিস্টেম বাড়ায়, রক্তচাপ কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি, ডায়াবেটিস ও ওজন কমায়, দাঁতকে ব্যাকটিরিয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির কমলগঞ্জের ডিজিএম মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, হোয়াইট টি চাম্পারায় চা বাগানে উৎপাদিত হয়েছে। তবে এই চা উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ কুঁড়ি দরকার সেটি সচরাচর সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি। আপাতত চাম্পারায় চা বাগান থেকেই হোয়াইট টি উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। পরবর্তীতে এর পরিসর আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে।