ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাখির সঙ্গে বিরল বন্ধুত্ব, দুর্যোগেও পাশে দাঁড়ায় গ্রামবাসী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৪:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অগাস্ট ২০২০
  • ১৯৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাখির কলকাকলিতে মুখর কালাই মোল্লাপাড়া গ্রাম। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে স্থানীয়দের। মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরাও। এ যেন পাখির অঘোষিত অভয়ারণ্য।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই পাড়াটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে বলে জানান গ্রামবাসীরা। জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাত্রাই ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে এই পাখিদের সমারোহ রীতিমতো মনমুগ্ধকর।

বাঁশবাগানের মাথার উপর পাখিরা

বাঁশবাগানের মাথার উপর পাখিরা

প্রায় ১০ একর পাড়াজুড়ে কাঁঠাল গাছ, আম গাছ, রেইনট্রি, তালগাছ ও বাঁশবাগানে বিভিন্ন পাখিদের অভয়ারণ্য। সারাবছরই দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় কালো পানকৌড়ি, সাদা-বক, জ্যাঠা-বক, আম-বক, কানি-বক, পানকৌড়ি ও রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উপস্থিতিতে মোল্লাপাড়া এখন অপরূপ সুন্দর একটি পাড়া। সারাদিনই সেখানকার গাছে গাছে পাখিদের কিচির-মিচির শোনা যায়। উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সেখানে এমন পাখিদের সমারোহ। গ্রামবাসীও পাখিদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।

সকালে পাখিগুলো আহারের জন্য আশপাশে খোলা মাঠে চলে যায়। আর সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসে নিজ কুটিরে। এ পাড়ায় প্রায় ছয় বছর ধরে পাখিরা এখানে বসবাস শুরু করেছে। বছর বছর বেড়েই চলেছে পাখির সংখ্যা। সকাল-সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহলে মুগ্ধতা ছড়ায় মানুষের মনে। ওই পাড়ার বিভিন্ন বাড়ির বাঁশঝাড়, গাছ-গাছালি যেন পাখিদের এক একটি স্বর্গরাজ্য ও অভয়ারণ্য।

পাখির অভয়ারণ্য

পাখির অভয়ারণ্য

পান কৌরি, সাদা-বক, রাতচোর পাখিরা বাঁশের বা বিভিন্ন গাছের চূড়ায় বসে ডানা ঝাপটায়। আবার গাছের মাথার উপর দিয়ে দুই-এক চক্কর দিয়ে এসে গাছের চূড়ায় বসে। কোনটা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে, আবার কোনটা বাঁশের এক কঞ্চি থেকে অন্য কঞ্চিতে, এক গাছ থেকে অন্য গাছে নির্বিঘ্নে উড়ে যেতে থাকে। পাখিদের বাসার ভেতর থেকে ছানাগুলো টেক টেক শব্দ করে ডাকছে। তাদের খাওয়াতে ব্যস্ত মা-পাখিরা। কোনোটি বাসা বাঁধছে আপন মনে, আবার কোনোটি ডিমে তা দিচ্ছে। নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না পাখির সঙ্গে মানুষের কতটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে।

পাখিদের এই অভয়ারণ্য কত দিন ধরে আছে জানতে চাইলে মোল্লাপাড়ার মোফাজ্জল হোসেন ও মুনছুর রহমান জানান, ২০১৪ সালের দিকে এই পাড়ায় বাঁশবাগানে ও বিভিন্ন ছোট-বড় গাছে এসে পাখিরা আশ্রয় নেয়। বেশ কয়েক মাস থেকে সংখ্যায় বেশি করে ফের ওরা চলে যায়। পরের বছর সংখ্যায় কমে নিয়ে আবার আসে। আবারো চলে যায় পাখিরা। তবে পাখিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে তাদের। এরা দিন-রাত প্রায় সব সময় কিচিরমিচির করলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

পাখিরা

পাখিরা

একই পাড়ার রবিউল ও মান্নান জানান, পাখিরা আশপাশের বাড়ির আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন গাছের অনেক নতুন ডাল এবং বাঁশের মাথা ভেঙ্গে ফেলছে। এদের বিষ্ঠার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এত যন্ত্রণার পরেও পাড়ার সবাই পাখিদের খুব ভালোবাসে। ঝড়-বৃষ্টি হলেই পাড়ার যুবকেরা ছুটে যায় বাঁশবাগানে। পাখির ছানা পড়ে থাকতে দেখলেই তাদের নীড়ে তুলে দিয়ে আসে। তারা পাখিগুলো কাউকে শিকার করতে দেই না। কারণ এদেরকে তারা খুব ভালোবাসেন।

মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, সরকারি উদ্যোগে পাখি সুরক্ষার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই পাড়াকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। এতে করে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কালাই উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. মো. আবু তালেব বলেন, উপজেলার মোল্লাপাড়া পাখি যেন কেউ শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করছি। পাখির সুরক্ষার বিষয়ে প্রাণী সম্পদ অফিস দেখভাল করছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাখির সঙ্গে বিরল বন্ধুত্ব, দুর্যোগেও পাশে দাঁড়ায় গ্রামবাসী

আপডেট টাইম : ১১:৩৪:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাখির কলকাকলিতে মুখর কালাই মোল্লাপাড়া গ্রাম। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে স্থানীয়দের। মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরাও। এ যেন পাখির অঘোষিত অভয়ারণ্য।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই পাড়াটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে বলে জানান গ্রামবাসীরা। জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাত্রাই ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে এই পাখিদের সমারোহ রীতিমতো মনমুগ্ধকর।

বাঁশবাগানের মাথার উপর পাখিরা

বাঁশবাগানের মাথার উপর পাখিরা

প্রায় ১০ একর পাড়াজুড়ে কাঁঠাল গাছ, আম গাছ, রেইনট্রি, তালগাছ ও বাঁশবাগানে বিভিন্ন পাখিদের অভয়ারণ্য। সারাবছরই দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় কালো পানকৌড়ি, সাদা-বক, জ্যাঠা-বক, আম-বক, কানি-বক, পানকৌড়ি ও রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উপস্থিতিতে মোল্লাপাড়া এখন অপরূপ সুন্দর একটি পাড়া। সারাদিনই সেখানকার গাছে গাছে পাখিদের কিচির-মিচির শোনা যায়। উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সেখানে এমন পাখিদের সমারোহ। গ্রামবাসীও পাখিদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।

সকালে পাখিগুলো আহারের জন্য আশপাশে খোলা মাঠে চলে যায়। আর সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসে নিজ কুটিরে। এ পাড়ায় প্রায় ছয় বছর ধরে পাখিরা এখানে বসবাস শুরু করেছে। বছর বছর বেড়েই চলেছে পাখির সংখ্যা। সকাল-সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহলে মুগ্ধতা ছড়ায় মানুষের মনে। ওই পাড়ার বিভিন্ন বাড়ির বাঁশঝাড়, গাছ-গাছালি যেন পাখিদের এক একটি স্বর্গরাজ্য ও অভয়ারণ্য।

পাখির অভয়ারণ্য

পাখির অভয়ারণ্য

পান কৌরি, সাদা-বক, রাতচোর পাখিরা বাঁশের বা বিভিন্ন গাছের চূড়ায় বসে ডানা ঝাপটায়। আবার গাছের মাথার উপর দিয়ে দুই-এক চক্কর দিয়ে এসে গাছের চূড়ায় বসে। কোনটা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে, আবার কোনটা বাঁশের এক কঞ্চি থেকে অন্য কঞ্চিতে, এক গাছ থেকে অন্য গাছে নির্বিঘ্নে উড়ে যেতে থাকে। পাখিদের বাসার ভেতর থেকে ছানাগুলো টেক টেক শব্দ করে ডাকছে। তাদের খাওয়াতে ব্যস্ত মা-পাখিরা। কোনোটি বাসা বাঁধছে আপন মনে, আবার কোনোটি ডিমে তা দিচ্ছে। নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না পাখির সঙ্গে মানুষের কতটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে।

পাখিদের এই অভয়ারণ্য কত দিন ধরে আছে জানতে চাইলে মোল্লাপাড়ার মোফাজ্জল হোসেন ও মুনছুর রহমান জানান, ২০১৪ সালের দিকে এই পাড়ায় বাঁশবাগানে ও বিভিন্ন ছোট-বড় গাছে এসে পাখিরা আশ্রয় নেয়। বেশ কয়েক মাস থেকে সংখ্যায় বেশি করে ফের ওরা চলে যায়। পরের বছর সংখ্যায় কমে নিয়ে আবার আসে। আবারো চলে যায় পাখিরা। তবে পাখিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে তাদের। এরা দিন-রাত প্রায় সব সময় কিচিরমিচির করলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

পাখিরা

পাখিরা

একই পাড়ার রবিউল ও মান্নান জানান, পাখিরা আশপাশের বাড়ির আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন গাছের অনেক নতুন ডাল এবং বাঁশের মাথা ভেঙ্গে ফেলছে। এদের বিষ্ঠার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এত যন্ত্রণার পরেও পাড়ার সবাই পাখিদের খুব ভালোবাসে। ঝড়-বৃষ্টি হলেই পাড়ার যুবকেরা ছুটে যায় বাঁশবাগানে। পাখির ছানা পড়ে থাকতে দেখলেই তাদের নীড়ে তুলে দিয়ে আসে। তারা পাখিগুলো কাউকে শিকার করতে দেই না। কারণ এদেরকে তারা খুব ভালোবাসেন।

মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, সরকারি উদ্যোগে পাখি সুরক্ষার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই পাড়াকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। এতে করে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কালাই উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. মো. আবু তালেব বলেন, উপজেলার মোল্লাপাড়া পাখি যেন কেউ শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করছি। পাখির সুরক্ষার বিষয়ে প্রাণী সম্পদ অফিস দেখভাল করছেন।