হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবতা বিবর্জিত ও কাল্পনিক বলে জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
জোট নেতারা বলছেন, বাজেটে জনস্বাস্থ্য ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এতে জনগণের হতাশা ও ক্ষোভ বেড়েছে। শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় জোটের শীর্ষ নেতারা এ কথা জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন- ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) ড. অলি আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব, মুসলিম লীগের সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খসরু, বাংলাদেশ পিপলস লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহম্মদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা ও বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- কোভিড-১৯ মহামারীতে যখন দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির, আমদানি-রফতানি প্রায় সম্পূর্ণই বন্ধ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যাতায়াত ব্যবস্থা রুদ্ধপ্রায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রুগ্নতা প্রকট এবং এসব মোকাবেলায় সরকারি সামর্থ্যরে দীনতা- দক্ষতার অভাব ও দুর্নীতি-অনাচার রোধে ব্যর্থতা প্রকটভাবে দৃশ্যমান।
এ সময়ে জাতীয় সংসদে পেশকৃত বাজেটে বাস্তবতা বিবর্জিত ও কাল্পনিক প্রবৃদ্ধির হার, রাজস্ব আয় ও মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ এবং জনস্বাস্থ্য ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দের ফলে জনগণের হতাশা ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে নেতারা বলেছেন, ২০ দল মনে করে, জনগণের নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতার দায়মুক্ত বাস্তবে একটি একদলীয় সরকারের আচরণে কাল্পনিক সাফল্যের দিবাস্বপ্ন দেখানোর অপপ্রয়াসই স্বাভাবিক। বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর কারণে বেকার মানুষের সংখ্যা ১৪ লাখ বলেছেন, যা বাস্তবের তুলনায় অনেক কম।
অন্যদিকে যে প্রবাসীদের আয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ, তাদের মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন এবং যারা ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন, তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য বাস্তব সহায়তার কোনো সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি কিংবা দিক-নির্দেশনা বাজেটে নেই।
বিবৃতি ২০ দলীয় জোট নেতারা বলেছেন, করোনায় দেশের অর্থনীতির প্রধান দুই খাত তৈরি পোশাক শিল্প ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো উপার্জন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও এই দুই খাতে সংকট নিরসন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন কার্যকর পরিকল্পনার কথা বাজেটে উল্লেখ নেই।
অন্যদিকে সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক পরিমাণ ঋণ গ্রহণের ফলে ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হ্রাস পাবে, যার পরিণতি হবে দেশের জন্য আরও ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক।
২০ দলীয় জোট নেতারা বলেন, কৃষি খাতে ঋণ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপের ফলে বর্গাচাষী ও ক্ষুদ্রচাষীরা বঞ্চিত হবেন বিধায় এসব শর্ত শিথিল করা আবশ্যক।
গার্মেন্ট, নির্মাণ, কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, পর্যটন, হকার্স, কুলি, গৃহশ্রমিকসহ দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কয়েক কোটি মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যখন অনাহার-অর্ধাহারে ও বিনা চিকিৎসায় বিপন্ন, তখন তাদের জীবন বাঁচানো ও জীবিকা পুনঃরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের চেয়ে বাজেটে জরুরি নয়- এমন অবকাঠামো খাতে অধিক ব্যয় বরাদ্দকে ২০ দল জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্বহীনতা বলে মনে করে।