শীতের আমেজ শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। গ্রামে-গঞ্জে শীত একেবারে জেঁকে বসেছে। শীতের পিঠা-পায়েস ও খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই অঞ্চল আজ হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য।
ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। ফলে গাছিরা বদল করছেন তাদের পেশা। শীত এলে মাদারীপুরের গ্রামে গ্রামে শুরু হতো পিঠা তৈরির মহোৎসব।
শীতকালীন ছুটিতে এক সময় ছেলে-মেয়েরা শহর ছেড়ে চলে আসতো গ্রামের খেজুরের টাটকা রস খেতে। গ্রামীণ বধূরা সুনিপুণ হাতে তৈরি করতেন এসব পিঠা-পায়েস। খেজুরের রসে তৈরি পিঠা-পায়েস শহরবাসীদের বারবার গ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব দৃশ্য আর আগের মতো পরিলক্ষিত হয় না। কমে যাচ্ছে মধুবৃক্ষের সংখ্যা।
মানুষের মানসিকতারও হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। খেজুর গাছের পরিবর্তে লাগানো হচ্ছে দামি সব গাছপালা। মাদারীপুরে প্রায়ই বাড়িতেই তৈরি করা হতো খেজুরের গুড়। শীতের সকালে মুড়ির সঙ্গে খেজুরের গুড় দিয়ে হতো সকালের নাস্তা। মাদারীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে জানা গেছে এসব তথ্য।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চরের বাসিন্দা আ. রশিদ জানান, আমাদের বাড়িতে একশোর মতো খেজুর গাছ আছিল। কিন্তু ছেলেরা সেগুলা কাইটা কাঠ গাছ লাগাইছে। এহন গোটা দশেক গাছ থাকলেও এই রস দিয়া নিজেদের প্রয়োজন মেটে না।
একই এলাকার যুবক দুলাল জানান, এখন বাজারে খেজুরের গুড়ের নামে যেটা পাওয়া যায়, সেটা চিনি মেশানো। তাই এটা দিয়ে পিঠা বানালে আগের মতো স্বাদ হয় না।
বহেরাতলা গ্রামের আ. জলিল জানান, আমাদের কয়েকটা খেজুর গাছ আছে। কিন্তু গাছি পাওয়া যায় না বলে গত তিন বছর যাবৎ গাছ থেকে রস পাই না। অনেক দূরে থেকে যেই রস কিনে আনি। এরপর সেইগুলা ভেজাল মিশানো।
পাঁচ্চরের কলম গাছি জানান, প্রায় বিশ বছর ধইরা এই পেশায় আছি। অনেক মেহনত গাছে ওঠা, গাছ কাটা। যে পরিমাণ পরিশ্রম, ওই রকম মজুরি পাওয়া যায় না। তাই অনেকেই এই পেশায় থাকতে চায় না। তাছাড়া নতুন কইরা এই কাজে কেউ আইতাছে না।
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, এক সময় পদ্মার দক্ষিণাঞ্চল মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, ফরিদপুর খেজুরের গুড় ও রসের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু সেই ঐতিহ্য এখন বিলীন হওয়ার পথে। এতে শীতকালীন যে পিঠা উৎসব হতো তার উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে।