সামাজিক বন বিভাগের এক বন বিট কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কঞ্চি থেকেু বাঁশ বাগান গড়ে তোলা হয়েছে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ৩৫ হেক্টর পতিত জমিতে। গত তিন বছর আগে সফল ভাবে গড়ে তোলা এই বাগানে লাখ লাখ টাকার স্বপন দেখছেন প্রায় একশ’ বেকার লোক। সংশ্লিষ্টরা জনিয়েছেন, একদিকে যেমন এলাবাসীর আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও আয় হবে। অন্যদিকে বিলুপ্তের হাত থেকে বাঁশজাত শিল্প রক্ষা পাবে পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হবে।
ধামইরহাট বিট বনবিট অফিস সূত্রে জানা গেছে, বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক তার অফিসে বিশেষ পদ্ধিতে ২০১১-১২ অর্থ বছরে প্রায় ২০ হাজার কঞ্চি কলমের বাঁশ তৈরী করেন। তাঁর পরামর্শে উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নে সিলিমপুরে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এলাকার ১০০টি পরিবারের একজন করে সদস্য ১০০জন উপকারভোগী নিয়ে আত্রাই নদীর পাশে ফসল না হওয়া ৩৫ হেক্টর পতিত জমির উপর ১৭ হাজার পাক-কঞ্চি কলমের বাঁশের চারা লাগানো হয়। এসব বাঁশ উপকারভোগীরা রোপন এবং নিয়মিত পরিচর্যা করে আসছেন।
উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, বাঁশের চারা লাগানোর পর থেকে এক দিন পরপর পানি দিতে হয়। বাঁশ মাটিতে লেগে গেলে প্রতিবছরের বৈশাখ মাসে মাটিতে জৈব সার, ইউরিয়া, ডিএপি ও পটাশ সার বাঁশের গোড়ায় ছিটিয়ে পানি দিয়ে আগলা করে দিতে হয়। এরপর শক্ত খুটি দিয়ে বাঁশের কলম সোজা করে বেঁধে দিতে হয়। এতে ভাদ্র মাসে বন্যা হলেও কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া যে পাতাগুলো থেকে যায় তা মাটির সাথে পচে যায়। এতে বাঁশের উপকার হয়। প্রায় ৪বছর পর বাঁশ পরিপক্ক হলে কাটার উপযোগী হবে। এরপর প্রতি বছরই বাঁশ কাটা হবে। বাঁশলী জাতের বাঁশ। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটা কঞ্চি কলম থেকে প্রায় ১৫-৩০টি করে বাঁশ হয়েছে। প্রতি বছর বাঁশের পরিচর্যা করা হলেও প্রতি সপ্তাহে তা পরিষ্কার করা হয়। কেউ কোন রকম যাতে সমস্যা করতে না পারে এজন্য উপকারি ভোগীরা নিয়মিত তদারকি করেন।
সদস্য মাহমুদা জানান, সংসারের কাজের পাশাপাশি সপ্তাহে ২-৩দিন বাঁশ বাগান পরিচর্যার জন্য সময় দেন। এতে পরিবার থেকে কোন অসুবিধা হয় না। বাঁশ বাগান পরিচর্যায় বনবিট কর্মকর্তা বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা ও পরামর্শ দেন।
উপকারী ভোগী সান্তনা রানী রায় জানান, বাঁশ বাগানের শুরু থেকেই দেখাশুনা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন সুফল পাননি। তবে আগামী এক বছর পর সুফল পাবেন বলে আশা করছেন। এরপর প্রতিবছর থেকে নিয়মিত টাকা পাবেন। এর থেকে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে সংসারের উন্নয়ন হবে এবং আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হবেন।
রেখা রাণী জানান, বাঁশ বাগানের শুরু থেকেই সদস্য আছেন। বিভিন্ন মিটিং এবং আলোচনা তাদেরকে ডাকা হয় হয় ও পরামর্শ দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী আকতার হোসনে জানান, নিয়মিত বাঁশ বাগান পরিচর্যা ও যতœ করায় স্বল্প সময়ে এটি একটি সফল বাঁশ বাগান পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি উপকারী ভোগীরা এর থেকে সহযোগীতা পাবেন। উপকারী ভোগীরা মোটা অঙ্কের একটা আয় পাবেন এবং আর্থিক উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় হবে। বাঁশ সুন্দর হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ভ্রমনে আসেন।
এছাড়া উপকারী ভোগী মমতা, বিষাণী, সান্তনা, আফজাল হোসনসহ আরো ১০-১২ জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর থেকে বাঁশের বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা ও দেখাশুনা করেছেন। বাঁশের পাতা জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করায় বাজার থেকে জ্বালানী কিনতে হয় না। এতে টাকা সাশ্রয় হয়।
বাঁশ বাগানের তত্বাবধায়ক কামাল হোসেন জানান, বাঁশ বাগানের এইসব জমিতে পানি সংকটের কারণে ঠিকমত ফসল হতো না। খরায় ফসল মরে যেত। এক সময় সবাই মিলে একটা সমিতি করে বনবিভাগের বন বিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিকের পরামর্শে ও নির্দেশণায় পতিত জমিতে বাঁশের বাগান তৈরী করা হয়। প্রতিটি ঝাড়ে প্রায় ১৫ থেকে ৩০টা করে বাঁশ হয়েছে। তিনি আরো জানান, ইত্যে মধ্যে প্রতিটি ঝাড়ে তিন থেকে চারটি করে বাঁশ পাক ধরেছে। আগামী দুই/এক বছরের মধ্যে প্রতিটি ঝাড় থেকে যদি গড়ে তিনটি বাঁশ বিক্রি করা যাবে। দিন যাবে বাঁশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তাদের আয় বৃদ্ধি পাবে। সব রকমের সহযোগীতা বন বিভাগ থেকে করা হয় বলে জানান।
বৃক্ষ রোপণে চার বার প্রধান মন্ত্রীর প্রথম পুরষ্কার পাওয়া বনবিট কর্মকর্তা লক্ষণ চন্দ্র ভৌমিক জানান, ধামইরহাট বিটের আওতায় ২০১১-১২ আর্থিক সনে ৩৫ হেক্টর জমিতে ৪টি গ্রামে সিলিমপুর, বলরামপুর, পশ্চিম চানপুর এবং চৌঘাট গ্রামের উপকারভোগীদের নিয়ে কঞ্চি কলমের বাঁশ বাগান করা হয়েছে। উপকারভোগীরা যথাসময়ে বাঁশ বাগান পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। এটি সফল বাগানে পরিণত হয়েছে। উপকারভোগীরা এতে সুফল পাবেন বলে আশা করছেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে প্রধান বন সংরক্ষক ইয়নুছ আলী বাঁশ বাগানটি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া ৯৯ শতাংশের উপর বাঁশের চারা বেঁচে আছে। বাংলাদেশের মধ্যে নওগাঁর ধামইরহাটে একটি প্রথম হয় বলে জানান।
তিনি আরো জানান, একটি কোঁরল (নতুন চারা) বাঁশ থেকে পরিপক্ক বাঁশ হতে প্রায় ৩ বছরের মত সময় লাগে। একটি ঝাড়ে যে কয়টি বাঁশ পরিপক্ক হবে তা নাম্বারিং করে সরকারি মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। বাঁশ বাগান থেকে যে আয় হবে উপকারী ভোগী পাবেন ৪৫ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হবে এবং ১০ শতাংশ বাঁশ বাগান পরিচর্যার কাজে খরচ করা হবে।