ঢাকা ০৮:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২৪ সাল থেকেই কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়বে বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২১৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৪ সালে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।  আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপ বাদে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ২০২৪ সাল থেকেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঐসব দেশের বিদ্যমান নীতিমালা বাংলাদেশের অনুকূলে পরিবর্তন না হলে আলোচ্য সময় থেকেই স্থানীয় শুল্ক পরিশোধ করে প্রবেশ করতে হবে দেশগুলোর বাজারে। এতে রপ্তানির বড়ো বাজার কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার বাইরে চীন, জাপান ও ভারতের বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এতদিন ধরে কেবল ইউরোপের বাজার কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা থাকলেও আলোচ্য দেশগুলোতেও রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এখন থেকেই এ সুবিধা কীভাবে রাখা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে এক কর্মশালায় এ ইস্যুটি উঠে এসেছে। পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এ রাজ্জাক এ বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে যৌথভাবে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল।

বর্তমানে কানাডা বাংলাদেশের জন্য বড়ো রপ্তানির বাজার। কানাডায় বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক নেই। কিন্তু ২০২৪ সালের পর কানাডা এই সুযোগ না রাখলে সেখানে ১৭ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করতে হবে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ শতাংশ এবং ভারতে ৮ শতাংশ শুল্ক পরিশোধের বাধ্যবাধকতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া বিদ্যমান নীতিমালায় ইউরোপের বাজারেও ২০২৭ সাল থেকে অন্তত সাড়ে ৯ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করার প্রয়োজন হতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপের বাজারে জিএসপি (জেনারেলাইড স্কিম অব প্রেফারেন্সেস) সুবিধার আওতায় সব ধরনের পণ্যে (অস্ত্র বাদে) শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা পায়। এই সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানির ৬০ শতাংশের বেশি যায় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশই আসে এ খাত থেকে।

২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ এ সুবিধা পাবে। কিন্তু ২০২৭ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এ সুবিধা হারানোর পর দ্বিতীয় বিকল্প হলো জিএসপি প্লাসের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তিনটি শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রথম শর্ত হলো ইইউর ২৭টি নীতিমালায় বাংলাদেশকে স্বাক্ষর করা ও তা বাস্তবায়ন করা। তবে বাংলাদেশ চাইলে এসব শর্ত পরিপালন করতে পারবে। দ্বিতীয় শর্তও পরিপালনযোগ্য। কিন্তু তৃতীয় বিষয়টি বাংলাদেশের হাতে নেই। ইউরোপের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এই সুবিধা পেতে হলে ইউরোপ যাদেরকে জিএসপি সুবিধা দেয় একক দেশের (বাংলাদেশ) রপ্তানি হতে হবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় শতাংশ। কিন্তু ইউরোপের বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার অংশ সাড়ে ১৭ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় পড়বে না।

পরবর্তী বিকল্প হতে পারে স্ট্যান্ডার্ড জিএসপি। ইউরোপে বর্তমানে গড় শুল্কহার ১২ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড জিএসপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আড়াই শতাংশ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। কিন্তু ইউরোপে যেসব পণ্য এই সুবিধা পাবে, তার মধ্যে গার্মেন্টস পণ্য অন্তর্ভুক্ত নেই। অথচ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টস।

এ পরিস্থিতিতে ইইউর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জোর দিয়েছেন ড. এ রাজ্জাক। সেক্ষেত্রে ভিয়েতনামের মতো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা বিদ্যমান সুবিধার সময়সীমা আরো সম্প্রসারণ করার আলোচনায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. কামাল হোসেন, পরিচালক হাফিজুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য ও ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

২০২৪ সাল থেকেই কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়বে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১২:৩৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৪ সালে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।  আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপ বাদে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ২০২৪ সাল থেকেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঐসব দেশের বিদ্যমান নীতিমালা বাংলাদেশের অনুকূলে পরিবর্তন না হলে আলোচ্য সময় থেকেই স্থানীয় শুল্ক পরিশোধ করে প্রবেশ করতে হবে দেশগুলোর বাজারে। এতে রপ্তানির বড়ো বাজার কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার বাইরে চীন, জাপান ও ভারতের বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এতদিন ধরে কেবল ইউরোপের বাজার কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা থাকলেও আলোচ্য দেশগুলোতেও রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এখন থেকেই এ সুবিধা কীভাবে রাখা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে এক কর্মশালায় এ ইস্যুটি উঠে এসেছে। পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এ রাজ্জাক এ বিষয়ে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে যৌথভাবে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল।

বর্তমানে কানাডা বাংলাদেশের জন্য বড়ো রপ্তানির বাজার। কানাডায় বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক নেই। কিন্তু ২০২৪ সালের পর কানাডা এই সুযোগ না রাখলে সেখানে ১৭ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করতে হবে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ শতাংশ এবং ভারতে ৮ শতাংশ শুল্ক পরিশোধের বাধ্যবাধকতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া বিদ্যমান নীতিমালায় ইউরোপের বাজারেও ২০২৭ সাল থেকে অন্তত সাড়ে ৯ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করার প্রয়োজন হতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপের বাজারে জিএসপি (জেনারেলাইড স্কিম অব প্রেফারেন্সেস) সুবিধার আওতায় সব ধরনের পণ্যে (অস্ত্র বাদে) শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা পায়। এই সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানির ৬০ শতাংশের বেশি যায় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশই আসে এ খাত থেকে।

২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ এ সুবিধা পাবে। কিন্তু ২০২৭ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এ সুবিধা হারানোর পর দ্বিতীয় বিকল্প হলো জিএসপি প্লাসের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তিনটি শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রথম শর্ত হলো ইইউর ২৭টি নীতিমালায় বাংলাদেশকে স্বাক্ষর করা ও তা বাস্তবায়ন করা। তবে বাংলাদেশ চাইলে এসব শর্ত পরিপালন করতে পারবে। দ্বিতীয় শর্তও পরিপালনযোগ্য। কিন্তু তৃতীয় বিষয়টি বাংলাদেশের হাতে নেই। ইউরোপের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এই সুবিধা পেতে হলে ইউরোপ যাদেরকে জিএসপি সুবিধা দেয় একক দেশের (বাংলাদেশ) রপ্তানি হতে হবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় শতাংশ। কিন্তু ইউরোপের বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার অংশ সাড়ে ১৭ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় পড়বে না।

পরবর্তী বিকল্প হতে পারে স্ট্যান্ডার্ড জিএসপি। ইউরোপে বর্তমানে গড় শুল্কহার ১২ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড জিএসপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আড়াই শতাংশ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। কিন্তু ইউরোপে যেসব পণ্য এই সুবিধা পাবে, তার মধ্যে গার্মেন্টস পণ্য অন্তর্ভুক্ত নেই। অথচ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টস।

এ পরিস্থিতিতে ইইউর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জোর দিয়েছেন ড. এ রাজ্জাক। সেক্ষেত্রে ভিয়েতনামের মতো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা বিদ্যমান সুবিধার সময়সীমা আরো সম্প্রসারণ করার আলোচনায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. কামাল হোসেন, পরিচালক হাফিজুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য ও ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।