শিরোণামটি লেখকের জ্ঞানসীমা বিবেচনায় স্পর্ধা মনে হলেও দেশের রাজনৈতিক গতিপথ অনুযায়ি প্রশ্নটি অত্যন্ত সমীচীন ও যথোপযুক্ত। এটি স্পষ্ট যে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভবিষ্যত কর্ণধার। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে হোক, কিংবা দীর্ঘ সময়ে তারেক রহমানের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারনে হোক; তাকে ঘিরেই বিএনপির ভবিষ্যত নির্মিত হবে বলেই সবার বিশ্বাস। দল হিসেবে বিএনপির ও বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে তাঁর ভুমিকা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকারের ‘তারেক-দমন’ প্রকল্প স্পষ্টতই তারেক রহমানকে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। তিনি যে নিকট-ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় সেটিও এখন অনেকটা অবধারিত।
রাজনীতিক তারেক রহমান অনেক দিক থেকেই এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। এই মহান দুই শিক্ষকের রাজনৈতিক ছাত্রও তিনি। তারেক রহমান গত ২৬ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তিনি অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা এখন ‘আতঙ্ক’ হিসেবে বিবেচিত। তাকে রুখতে শেখ হাসিনার সরকার আইন-আদালত সব কিছুই ব্যবহার করছে। ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে আদালতের আদেশের মাধ্যমে মিডিয়ায় তাঁর বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে।
অব্যাহত ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন তারেক রহমানকে জনগণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সাধারণের কাছেও স্পষ্ট। রাজনীতিক তারেক রহমানের সময় এখন আরো বেশী কৌশলী হওয়া।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, “.. .. .. .. বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটা জনগণের আস্থার জায়গা। এই দলের যোগ্য নেতৃত্বই পারে দেশকে পুনরুজ্জীবিত করতে। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার উত্তরসূরী তারেক রহমানকেই এজন্য চালকের আসনে থাকতে হবে। এজন্য তাকে যোগ্য শিক্ষকের যোগ্য ছাত্রের ভুমিকায় আবির্ভুত হতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে যে নিপীড়ন হয়েছে, এটাকে আশীর্বাদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে তারেক রহমান রাজনীতিতে অবশ্যই সফল হবে। যুগে যুগে যারা এমন নিপীড়ন মোকাবেলা করেছেন, তারাই সফল হয়েছেন। ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। আশা করি, বাস্তবতার নিরিখে তারেক রহমান বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরানোর দূত হয়ে উঠবেন। তিনি হয়ে উঠবেন ‘তারেক জিয়া’। রাজনীতিতে প্রবেশের পর তিনি সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে যে স্বপ্নের বীজ বুনেছেন, তাতে এ প্রত্যাশা প্রতিধ্বনিত হয়েছে।”
প্রকৃতপক্ষে, নিজের যোগ্যতা, কর্ম, ধৈর্য ও ত্যাগের মাধ্যমে তারেক রহমান ‘রাজনৈতিক নেতা’ হয়েছেন। তাঁর দলের নেতাকর্মীরা তাকে ‘দেশনায়ক’ উপাধি দিয়েছেন। ভিশনারী কিছু বক্তৃতা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তরুন সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তিনি এ উপাধির যথার্থতা প্রমাণও করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, ‘দেশনায়ক’ তারেক রহমান কী ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হতে পারবেন?
প্রিয় পাঠক, এই আলোচনায় ‘রাজনৈতিক নেতা’ ও ‘রাষ্ট্রনায়ক’-এর তফাৎটা স্পষ্ট করা জরুরী। মূলতঃ রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কেবল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রাপ্তি ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তা পরিচালনার বিষয়টি জড়িত। পক্ষান্তরে রাষ্ট্রনায়কের ক্ষেত্রে ক্ষমতা জড়িত থাকলেও ভিশন ও কর্মে তার কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে না। রাষ্ট্রদার্শনিকরা ‘রাষ্ট্রনায়ক’-এর সংজ্ঞায় এমন তথ্যই দিয়েছেন।
* আমেরিকান লেখক James Freeman Clarke বলেন, “A politician thinks about the next elections — the statesman thinks about the next generations.” (একজন রাজনীতিক পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবেন, আর একজন রাষ্ট্রনায়ক ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে চিন্তা করেন)।
* সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট Mikhail Gorbachev বলেন, “A statesman does what he believes is best for his country, a politician does what best gets him re-elected” (দেশের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট বলে যা বিশ্বাস করেন, একজন রাষ্ট্রনায়ক তা-ই করেন; আর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য যা সর্বোত্তম মনে হয় একজন রাজনীতিক তা-ই করেন)।
* আমেরিকান রাজনৈতিক বিশ্লেষক Henry Kissinger বলেন, “The statesman’s duty is to bridge the gap between experience and vision.” (রাষ্ট্রনায়কের দায়িত্ব হলো অভিজ্ঞতা ও ভিশনের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করা)।
* Henry Kissinger আরো বলেন, “The task of statesmen is to resolve complexity, not to contemplate it.” (রাষ্ট্রনায়কের কাজ হলো জটিলতার সমাধান করা, জটিলতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া নয়)।
* যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী Lloyd George বলেন, “A politician is a person with whose politics you don’t agree; if you agree with him he’s a statesman.” (রাজনৈতিক নেতা হলেন একজন ব্যক্তি যার রাজনীতির সঙ্গে আপনি একমত হবেন না, আপনি যদি একমত হন তাহলে তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক)।
* মহামনীষী Aristotle বলেন, “What the statesman is most anxious to produce is a certain moral character in his fellow citizens, namely a disposition to virtue and the performance of virtuous actions.” (রাষ্ট্রনায়কতার সহনাগরিকদের (সহকর্মী) নির্দিষ্ট নৈতিক চরিত্র বিকাশে উদ্বিগ্ন থাকেন, বিশেষ করে উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কর্মের গুন ও কর্মক্ষমতার বিন্যাস ঘটাতে)।
উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলো বিবচেনায় আমরা তারেক রহমানকে একজন রাজনৈতিক নেতা ও ভবিষ্যত ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।
প্রথম প্রশ্ন: জেমস ফ্রিম্যান ক্লার্ক ও মিখাইল গর্বাচেভের সংজ্ঞা অনুযায়ি তারেক রহমান কী ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করেন, না-কি ভবিষ্যত প্রজম্ম নিয়ে ভাবেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমানের রাজনৈতিক গতিপথ আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি। তিনি ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সদস্য হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০২ সালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং ২০০৯ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।তখন তাঁর ভিশন ছিল বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আর তাঁর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটি বিপুল বিজয় লাভ করে। এক্ষেত্রে তিনি একজন ‘রাজনৈতিক নেতা’র ভুমিকায় ছিলেন। তবে চিন্তা-দর্শনে তিনি নিজেকে আরো একধাপ এগিয়ে রেখেছিলেন। নির্বাচনে বিশাল বিজয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেও তিনি এমপি বা সরকারের কোনো মন্ত্রীর দায়িত্ব নেননি। বরং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি অনুসরন করে দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেন। চষে বেড়ান দেশের প্রতিটি জনপদ। মানুষকে স্বপ্ন দেখান নতুন করে। তিনি এদেশের মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন-
‘একটু উদ্যোগ, একটু চেষ্টা
এনে দেবে স্বচ্ছলতা
দেশের আসবে স্বনির্ভরতা’
আর স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নিরলস পরিশ্রমে তিনি পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নের ম্যাপ অঙ্কন করেন। কোন এলাকার কি অবস্থা, কোন উপজেলায় কত কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, কোন রাস্তার মেরামত জরুরী, নতুন করে কোথায় কত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ প্রয়োজন, কোন উপজেলায় কতটা সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে, কোথায় কতগুলো বিদ্যালয়-কলেজ-মাদ্রাসা স্থাপন জরুরী – এসবের প্রকৃত চিত্র ছিল তাঁর ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সফটওয়্যারে।
তারেক রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে বেশ কিছু কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেমন: বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি পুনর্বাসন প্রকল্প, কমল শস্যবীজ প্রকল্প, কমল পানি সম্পদ প্রকল্প, শহীদ জিয়া শিশু হাসপাতাল, হাঁপানী রোগীদের জন্য সেবাদান কেন্দ্র, প্লাস্টিক সার্জারী ক্যাম্প প্রভৃতি। কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, ছাগল বিতরণ, ফলজ বৃক্ষ চারা বিতরণ, কৃষকদের জন্য ভাল মানের সার সরবরাহ ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন তিনি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচী গ্রহন করেন। শুধু জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই সারাদেশে পঞ্চাশ লাখ চারা রোপন করেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রেখে তিনি ‘লুক ইস্ট’ বা পূর্বমুখী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেন। তিনি চীন, ভারত, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বার্মা প্রভৃতি রাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তারেক রহমানের এসব কর্মসূচিতে প্রমাণিত হয়, তিনি রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হওয়ার বীজ বপন করেছেন।
২০১৩ সালের ২৫ জুলাই লন্ডনে এক সভায় তারেক রহমানের ঘন্টাব্যাপী এক বক্তৃতায়ও এর প্রমাণ স্পষ্ট। সেখানে তিনি ভবিষ্যত বাংলাদেশের একটি উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অতীতমুখিতা নয় দৃষ্টি দিতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব নয়। কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পর্যটন, রাজধানীর যানজট, পানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেন, “রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য কেবল ক্ষমতায় যাওয়া নয়; ক্ষমতায় যাওয়া একটি উপলক্ষ্য মাত্র।” তিনি বলেন, “তবে এই মূহুর্তে নির্বাচনের আগে প্রধান কাজ একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুন:প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করা।” এতে প্রমাণিত হয় যে, চিন্তা-চেতনায় এসব ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়ার সুযোগ পেলে তারেক রহমান ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হয়ে উঠবেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো- আমেরিকান রাজনৈতিক বিশ্লে¬ষক হেনরি কিসিঞ্জারের সংজ্ঞা অনুযায়ি তারেক রহমান অভিজ্ঞতা ও ভিশনের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছেন বা করবেন কি?
এ প্রশ্নের উত্তরে তার ভিশন ও রাজনৈতিক কর্মসূচির বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সরকারের কোনো পদ না নিয়ে তিনি দলের তৃনমূলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন। আর সেখানে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিশন ঘোষণা করেন। দলীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অবহিতকরণের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে তিনি বিএনপির ইউনিয়ন প্রতিনিধি সভা করেন। তৃনমূল প্রতিনিধি সভা করার মাধ্যমে বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’কে সুসংগঠিত করেন। আর এসব কর্মসূচির সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সামাজিক উন্নয়নকে সম্পৃক্ত করা হয়। এসব কর্মসূচি তৎকালীন সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ও তৃনমূলের রাজনীতিকদের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে।
তৃতীয় প্রশ্ন হলো- যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জের সংজ্ঞা অনুযায়ি সাধারণ নাগরিকরা কি তারেক রহমানের রাজনীতিতে সহমত পোষণ করতে পারেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমানের নিজের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বিশ্ব বাসীকে উল্লেখ করা যায়। জিয়াউর রহমানের নির্দেশিত পথ অনুসরন করে তিনি প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছেন। বিশেষ করে বিএনপি জোট সরকার আমলে (২০০১-০৬) যখন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় স্বস্ত্রীক দেশে ফেরেন, সেদিন তাদেরকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে শুভেচ্ছা উপহার ও ফুল পাঠান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। এমনকি যেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে নানা বিষোদগার করেন, সেখানে তারেক রহমান টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে শেখ মজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেন। আর সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি বারবার বলেছেন, ‘রাজনৈতিক মত-পার্থক্য মঞ্চে থাকুক, মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে নয়’।
চতুর্থ প্রশ্ন হলো- মহামনীষী এরিস্টটলের সংজ্ঞা অনুযায়ি তারেক রহমান নাগরিকদের মাঝে উন্নত নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে কি পেরেছেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তারেক রহমানের কর্মকান্ডের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি। ২০০৫ সালের কথা। বরিশালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের তৃনমূল প্রতিনিধি সভা। অনেকের বক্তৃতার পর তারেক রহমান মাইক হাতে নিলেন। টেবিলে রাখা ল্যাপটপের তথ্য দেখে তিনি জানতে চাইলেন, “এই সভায় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার কে আছেন?” ছাত্রদলের এক নেতা দাড়ালেন? তারেক রহমান প্রশ্ন করলেন, “কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান বশির আহমেদের দুর্নীতি ও সন্ত্রাস সম্পর্কে কি জানেন?” রাস্তার উন্নয়ন কাজ ও কাবিখার টাকা আত্মসাৎ এবং সন্ত্রাস সৃষ্টির তথ্য তুলে ধরেন ওই ছাত্রনেতা। আরো কিছু বাড়তি তথ্য জানালেন তারেক রহমান। এরপর তিনি বললেন, “দুর্নীতি-সন্ত্রাসের মাধ্যমে দলকে যারা বিতর্কিত করছেন, তারা আপাতত রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। শুদ্ধ হয়ে বিএনপিতে ফিরবেন।”
এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক রাজনৈতিক কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবনে। বিএনপি জোট সরকারের সময়ের কথা। ঢাকা থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য মিষ্টি খাওয়ার জন্য ওই কার্যালয়ের এক স্টাফকে কিছু টাকা দিলেন। সিসি ক্যামেরায় এ দৃশ্য তারেক রহমান দেখলেন। ওই সংসদ সদস্য এবং স্টাফকে ডেকে পাঠালেন তিনি। টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানতে চাইলেন। মিষ্টি খাওয়ার জন্য এমন টাকা লেনদেনকে তিনি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তি দিলেন। তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত স্টাফকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো। আর সংসদ সদস্যকে ওই কার্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত দিলেন তারেক রহমান।
এভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে তারেক রহমান মহামনীষী এরিস্টটলের দেয়া ‘রাষ্ট্রনায়ক’-এর সংজ্ঞা অনুযায়ি নাগরিকদের মাঝে উন্নত নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, এক্ষেত্রে তিনি খুব বেশী সফল হননি। সরকার কাঠামোর কোনো দায়িত্বে যেহেতু তিনি ছিলেন না, সেহেতু নাগরিকদের ততোটা প্রভাবিত করার বড় সুযোগও তিনি পাননি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে রাজনৈতিক আদর্শের পাশাপাশি সহকর্মী ও নাগরিকের মধ্যে উন্নত নৈতিক চরিত্র নিশ্চিত করতে তারেক রহমানকে সতর্কতার সঙ্গে উদ্যোগী হতে হবে বলেই এরিস্টটলের সংজ্ঞা দাবি করে।
মনীষী এরিস্টটল, ডেভিড লয়েড জর্জ, হেনরি কিসিঞ্জার, জেমস ফ্রিম্যান ক্লার্ক ও মিখাইল গর্বাচেভের তত্ত্ব আর তারেক রহমানের রাজনৈতিক গতিপথ প্রমাণ করে, আরো আন্তরিকভাবে ইতিবাচক মানসিকতায় এগিয়ে গেলে তারেক রহমান ভবিষ্যতে ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হয়ে উঠতে পারবেন।
এ সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ এবং বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামানও পৃথক সাক্ষাতকারে এমন সম্ভাবনার আভাস দিয়েছেন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে শক্তিমান কবি আল মাহমুদ বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে তারেক রহমানের সঙ্গে একবার আমার দেখা হয়েছে। বিএনপি জোট সরকারের আমলের কোনো একটি সময়ে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন কথা হয়। মনে হয়েছে, তিনি (তারেক রহমান) রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আবার রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার যে স্পৃহা সেটাও তার মধ্যে দেখেছি।” শক্তিমান কবি আল মাহমুদ আরো বলেন, “নির্যাতন করে কাউকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বরং নির্যাতিত ধৈর্যশীল ব্যক্তি বা গোষ্ঠী-ই জয়ী হন। তারেক রহমানও ভাল করবেন।”
প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “একজন যোগ্য ছাত্র তৈরী হয় যোগ্য শিক্ষকের দ্বারা। তারেক রহমান ভাগ্যবান তিনি এরকম যোগ্য শিক্ষকের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, যার ফলে তিনি একজন যোগ্য ছাত্র হয়ে গড়ে উঠেছেন। কেননা তারেক রহমানের শিক্ষক তারই বাবা রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তার মা বেগম খালেদা জিয়া। এই উত্তরসূরি যদি বাংলাদেশকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে শক্তিশালী এবং শান্তিময় রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারেন, তবেই জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদের আদর্শ সার্থক হবে এবং আশা করি, সেটা করার সুযোগ তারেক রহমানের রয়েছে। তিনি সুযোগ গ্রহণেও করবেন বলে আমার বিশ্বাস।”
রাষ্ট্রদার্শনিক প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, “.. .. .. .. .. তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত সেখানেই। তিনি কর্ম-বিশ¡াসে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ¡াসী। তাঁর বাবার মতো তিনিও দেশের যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দাবিদার। তিনি এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং লেখাপড়া করছেন। আমি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বলি, যখন এই যোগ্য লোকটি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তখন দেশবাসী তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে। এখন একটি মানসিক অবকাঠামো সবার মধ্যে স্থির হয়ে গেছে, তারেক জিয়া তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে জাতীয়তাবাদী আদর্শের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেবেন। আমার মনে হয়, শহীদ জিয়াউর রহমানের মতো একজন ঈমানদার ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত এই ‘জাতীয়তাবাদী আদর্শ’ বাংলাদেশে চিরন্তন হয়ে টিকে থাকবে। আর সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার পর তারেক রহমানকে দায়িত্ব নিতে হবে। আশা করি, তারেক রহমানও সফলতা পাবে।”
যে মানুষটিকে নিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রদার্শনিক, তাঁর নিজের দল এবং শত্রু পক্ষেও এতো বিশ্লেষণ; তিনি (তারেক রহমান) সফলতা পাবেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর জন্ম দিনে এ প্রত্যাশা করি। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুভ কামনায় ‘শুভ জন্মদিন’। ১৯৬৫ সালে জন্ম নেয়া তারেক রহমান পার করলেন বয়সের ‘গোল্ডেন জুবেলি’। আর রাজনীতির ‘সিলভার জুবেলি’।
এখন প্রশ্ন হলো, কবে কাটবে অপেক্ষার পালা? অন্ধকার সময় থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জাতিকে উদ্ধার করতে তাঁর বর্তমান পরিকল্পনা কী? কখন তিনি প্রকৃতপক্ষেই পাঞ্জেরীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন? দল গঠন ও মুক্তির বার্তায় নতুন প্রজন্মকে তিনি কী জাদু দেখাবেন? ভঙ্গুর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি নতুন কী ফমূর্লা নিয়ে এবং কখন হাজির হবেন? পুরোনো সীমাবদ্ধতাগুলো কী তিনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন? এ প্রশ্নগুলোর উত্তরের অপেক্ষায় পুরো জাতি। শুধু কেক কেটে আনন্দ-বিনোদন নয়, এসব প্রশ্নের উত্তর সহজ করতে জাতীয়তাবাদী আদর্শের কর্মীরাও তাঁর সহযোগী হোন, তারেক রহমানের জন্মদিনে সবার প্রতি এ আহ্বান।
লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক এবং নির্বাহী পরিচালক, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিজম এন্ড ডেমোক্রেসি (আইসিজেডি)
[খোলা কলামে প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার সম্পূর্ণ লেখকের নিজের। খোলা কলাম লেখকের স্বাধীন মত প্রকাশের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। এই লেখার সাথে প্রতিষ্ঠানের মতামতের কোন মিল বা অনুপ্রেরনা নেই]