ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাক্ষী হাজিরে কঠোর হচ্ছেন নিম্ন আদালতের বিচারকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫৭:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২১৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বারবার সমন দিয়েও সাক্ষী হাজির করা যাচ্ছে না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিলম্বিত হচ্ছে গুরুতর  ফৌজদারি অপরাধ মামলার বিচার। অথচ সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রয়েছে কঠোর নির্দেশনা। এখন ঐ নির্দেশনা অনুসরণ করে সাক্ষী হাজিরে কঠোর হচ্ছেন নিম্ন আদালতের বিচারকরা। সমন পেয়ে হাজির না হওয়ায় অফিসিয়াল সাক্ষীদের জরিমানা ও বেতন কর্তনের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাক্ষী হাজিরার জন্য বিচারকরা যদি এভাবে পদক্ষেপ নেন তাহলে মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে। ন্যায়বিচার পাবে বিচারপ্রার্থীরা।

হত্যা, ধর্ষণসহ নানা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় প্রায়শ:ই সাক্ষী হাজির হয় না। নিম্ন আদালত হতে ডজন ডজন সমন পাঠানো হয় সাক্ষীর ঠিকানায়। আসামি পক্ষের হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদানসহ নানা কারণে সাক্ষীরা হাজির হয় না। এছাড়া কর্মস্থল পরিবর্তন হওয়ায় যথাসময়ে সমন না পৌঁছায় হাজির হতে পারেন না অনেক অফিসিয়াল সাক্ষী। আবার সমন পেয়েও সাক্ষ্য দিতে অনীহা বোধ করেন কেউ কেউ। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুলাই মাসে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ধর্ষণসহ গুরুতর অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে রায় দেন। ঐ রায়ে বলা হয়, সমন জারির পর ধার্য তারিখে অফিসিয়াল সাক্ষীগণকে (ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ) আদালতে হাজির থাকতে হবে। যদি সন্তোষজনক কারণ ব্যতিরেকে সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হয় সংশ্লিষ্ট আদালত উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধে আদেশ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে।

হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অনুসরণ করে গত ৬ জানুয়ারি দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বাদল চন্দ্র হাওলাদারের বেতন কর্তনের আদেশ দেওয়া হয়। নাশকতার মামলায় সাক্ষ্য দিতে বারবার সমন দেওয়ার পরেও হাজির না হওয়ায় এই আদেশ দেন রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। এরপরই গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হয়ে নাশকতার ঐ মামলায় সাক্ষ্য দেন তিনি। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাঘা থানার এসি ল্যান্ড অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাদল চন্দ্র ঐ সময়ে বাঘা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন।

এর আগে ১৪ বার সমন দেওয়ার পরেও হাজির না হওয়ায় গত জানুয়ারি মাসে চিকিত্সক মো. মাহফুজুর রহমানকে ২০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান। ২০১৩ সালে দায়েরকৃত ঐ হত্যা চেষ্টার মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়েছিলেন তিনি। ঐ সময় শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে অন্যত্র বদলি হন। এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে প্রায় দুই বছরে ১৪ বার সমন দেওয়া হয়। হাজির না হওয়ায় এ জরিমানা করে আদালত।

এদিকে আইন কমিশন মনে করে, সাক্ষ্যগ্রহণে বিলম্ব মামলার দীর্ঘসূত্রতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ফৌজদারি মামলায় পুলিশকে দ্রুত সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। স্পর্শকাতর মামলা প্রমাণে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তার রায়ে বলেন, আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা দরকার। আমাদের প্রত্যাশা সরকার দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে। একইসঙ্গে ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি জেলায় মনিটরিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঐ কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়টিও দেখভাল করবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাক্ষী হাজিরে কঠোর হচ্ছেন নিম্ন আদালতের বিচারকরা

আপডেট টাইম : ০৮:৫৭:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বারবার সমন দিয়েও সাক্ষী হাজির করা যাচ্ছে না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিলম্বিত হচ্ছে গুরুতর  ফৌজদারি অপরাধ মামলার বিচার। অথচ সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রয়েছে কঠোর নির্দেশনা। এখন ঐ নির্দেশনা অনুসরণ করে সাক্ষী হাজিরে কঠোর হচ্ছেন নিম্ন আদালতের বিচারকরা। সমন পেয়ে হাজির না হওয়ায় অফিসিয়াল সাক্ষীদের জরিমানা ও বেতন কর্তনের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাক্ষী হাজিরার জন্য বিচারকরা যদি এভাবে পদক্ষেপ নেন তাহলে মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে। ন্যায়বিচার পাবে বিচারপ্রার্থীরা।

হত্যা, ধর্ষণসহ নানা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় প্রায়শ:ই সাক্ষী হাজির হয় না। নিম্ন আদালত হতে ডজন ডজন সমন পাঠানো হয় সাক্ষীর ঠিকানায়। আসামি পক্ষের হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদানসহ নানা কারণে সাক্ষীরা হাজির হয় না। এছাড়া কর্মস্থল পরিবর্তন হওয়ায় যথাসময়ে সমন না পৌঁছায় হাজির হতে পারেন না অনেক অফিসিয়াল সাক্ষী। আবার সমন পেয়েও সাক্ষ্য দিতে অনীহা বোধ করেন কেউ কেউ। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুলাই মাসে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ধর্ষণসহ গুরুতর অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে রায় দেন। ঐ রায়ে বলা হয়, সমন জারির পর ধার্য তারিখে অফিসিয়াল সাক্ষীগণকে (ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ) আদালতে হাজির থাকতে হবে। যদি সন্তোষজনক কারণ ব্যতিরেকে সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হয় সংশ্লিষ্ট আদালত উক্ত সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধে আদেশ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে।

হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অনুসরণ করে গত ৬ জানুয়ারি দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বাদল চন্দ্র হাওলাদারের বেতন কর্তনের আদেশ দেওয়া হয়। নাশকতার মামলায় সাক্ষ্য দিতে বারবার সমন দেওয়ার পরেও হাজির না হওয়ায় এই আদেশ দেন রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। এরপরই গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হয়ে নাশকতার ঐ মামলায় সাক্ষ্য দেন তিনি। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাঘা থানার এসি ল্যান্ড অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাদল চন্দ্র ঐ সময়ে বাঘা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন।

এর আগে ১৪ বার সমন দেওয়ার পরেও হাজির না হওয়ায় গত জানুয়ারি মাসে চিকিত্সক মো. মাহফুজুর রহমানকে ২০০ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান। ২০১৩ সালে দায়েরকৃত ঐ হত্যা চেষ্টার মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়েছিলেন তিনি। ঐ সময় শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে অন্যত্র বদলি হন। এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে প্রায় দুই বছরে ১৪ বার সমন দেওয়া হয়। হাজির না হওয়ায় এ জরিমানা করে আদালত।

এদিকে আইন কমিশন মনে করে, সাক্ষ্যগ্রহণে বিলম্ব মামলার দীর্ঘসূত্রতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। ফৌজদারি মামলায় পুলিশকে দ্রুত সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। স্পর্শকাতর মামলা প্রমাণে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তার রায়ে বলেন, আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা দরকার। আমাদের প্রত্যাশা সরকার দ্রুততম সময়ে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে। একইসঙ্গে ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি জেলায় মনিটরিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঐ কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়টিও দেখভাল করবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।